আ’লীগের ফরম বিক্রি

নারী আসন : নারী নেতৃত্ব তৈরিতেই এত আগ্রহ!

নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৩টি, জাতীয় পাটির্ ৪টি, বিএনপি ১টি, ওয়াকার্সর্ পাটির্ ১টি ও স্বতন্ত্র প্রাথীর্রা জোটভুক্ত হয়ে ১টি আসন পাবেন

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
রাজধানীর ধানমÐিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কাযার্লয়ে মঙ্গলবার একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের হাতে ফরম তুলে দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফসহ অন্যরা Ñযাযাদি
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বজন ও কমীের্দর নিয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড় বাড়তে থাকে আওয়ামী লীগের ধানমÐি কাযার্লয়ে। আওয়ামী লীগের টিকিটে একাদশ জাতীয় সংসদে যেতে আগ্রহী এবার অনেকেই। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বলছেন, সচেতনতা ও নারী নেতৃত্ব উঠে আসার জন্যই সংরক্ষিত আসনের চাহিদা বাড়ছে। পূবর্ ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দলের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কাযার্লয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ফরম বিক্রির উদ্বোধন করেন। ধানমÐি কাযার্লয়ের দুই ভবনে চারটি করে মোট আটটি বিভাগের ফরম বিক্রি হয়। সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মনোনয়নপ্রত্যাশীরা লাইনে দঁাড়িয়ে ফরম কেনেন। যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার সকালেই ফরম কেনা শেষে বলেন, ‘নারীরা সচেতন হচ্ছে। তৃণমূলে নারীদের রাজনীতির বিভিন্ন কমর্কাÐে অংশগ্রহণ বাড়ছে। তাই প্রতিযোগিতা বেশি। এখান থেকেই নারী নেতৃত্ব তৈরি হবে।’ এর আগে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সাংসদ নাজমা আক্তার জানান, যারা আন্দোলন-সংগ্রাম ও বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরই মনোনীত করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ৪৫ বছর ধরে যুক্ত মৌলভীবাজারের হোসনে আরা। ১৯৯৬ সালে তিনি সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ছিলেন। মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের এই সহসভাপতি বলেন, দিন দিন রাজনীতিতে নারীরা আগ্রহী হচ্ছেন। আগের চেয়ে এখন অনেক প্রাথীর্। মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাড়াও অনেকে প্রাথীর্র পক্ষে ফরম সংগ্রহ করতে এসেছেন। তবে যেসব প্রাথীর্ সরাসরি সংগ্রহ করতে এসেছেন, তাদের আগে দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি ফরমের মূল্য ৩০ হাজার টাকা। ফরম সংগ্রহ করার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচয় যুক্ত করে দেয়ার নিদের্শনা আছে। ফরম সংগ্রহ করতে আসা বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া তারকাদের মধ্যে চিত্রনায়িকা কবরী সারোয়ারও যান ফরম নিতে। সবারই প্রত্যাশা, দলের সভানেত্রী যোগ্যতা ও কাজ অনুযায়ী মনোনয়ন দেবেন। মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভানেত্রী বনশ্রী বিশ্বাস ১৯৯৬ সাল থেকে সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন। তবে এবার তিনি আত্মবিশ্বাসী নেত্রীর মনোনয়ন পাবেন। তিনি বলেন, ‘নেত্রীর উন্নয়ন কমর্কাÐের সহযোগী হয়ে কাজ করতে চাই।’ দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক লতিফা বেগম প্রায় ২৫ বছর রাজনীতি করছেন। তিনি বলেন, ‘নারীরা এখন পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন পেশার পাশাপাশি রাজনীতিতেও তারা আসতে চান।’ গতকাল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ২০০১ সালের ভোটে বিএনপি-জামায়াত জোটের জয়ের পর ধষের্ণর শিকার পূণির্মা রানী শীলও। ২০০১ সালের নিবার্চনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায় এবং আওয়ামী লীগের সমথর্কদের উপর নিযার্তন নেমে আসে, যে কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে তুলে ধরে আসছেন। সেবার ভোটের পরপরই ৮ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার দেলয়া গ্রামের অনিল কুমার শীলের পরিবারের বাড়িতে হামলা হয়। হামলাকারীরা দলবেঁধে ধষর্ণ করে অনিল শীলের ছোট মেয়ে পূণির্মাকে, তখন তিনি দশম শ্রেণিতে পড়তেন। ধষের্ণর শিকার হয়ে প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন পূণির্মা। ধষর্ণকারীরা সবাই বিএনপি-জামায়াত জোটের সমথর্ক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। ২০১১ সালের ৪ মে এই ধষর্ণ মামলায় ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদÐ ও প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করে আদালত। সেই পূণির্মাকে গত বছর তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার পাসোর্নাল অফিসার পদে নিয়োগ দেন। সংরক্ষিত আসনে প্রাথীর্ হতে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী নীলুফার আনজুম পপিও। নীলুফার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে সুযোগ দেন, তাহলে আমি দেশের অবলা নারীদের জন্য কাজ করব।’ নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৩টি, জাতীয় পাটির্ ৪টি, বিএনপি ১টি, ওয়াকার্সর্ পাটির্ ১টি ও স্বতন্ত্র প্রাথীর্রা জোটভুক্ত হয়ে ১টি আসন পাবে। আগামী ১৭ ফেব্রæয়ারি তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণার আগে নিবার্চন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চাইবে, তারা একক, নাকি জোটগতভাবে নিবার্চন করবে। দলগুলোকে এ বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত ৩০ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে। এরপর ইসি ১২ ফেব্রæয়ারি ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে। ১৭ ফেব্রæয়ারি তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিলে মনোনয়নপত্র দাখিল, মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রাথির্তা প্রত্যাহারের শেষ সময় জানানো হবে।