সাঘাটায় চরজুড়ে হলুদের সমারোহ

সূর্যমুখী চাষে আলতাফের বাজিমাত

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
গাইবান্ধার সাঘাটার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সূর্যমুখীর ক্ষেত। ছবিটি মঙ্গলবার তোলা -যাযাদি
কৃষি গবেষণার উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিগুণে ভরা সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বেড়েছে সাঘাটা উপজেলার কৃষকদের। এবারও আলতাফ হেসেনসহ কৃষকরা ২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। চরজুড়ে যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই শুধু হলুদের সমারোহ। ইতোমধ্যে ক্ষেতের গাছে ফুল এবং বীজ আসা শুরু হয়েছে। চারদিকে যেন এক অপরূপ দৃশ্য ছড়িয়েছে। প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ সূর্যমুখী ফুলের দৃশ্য দেখতে আসছেন। এদের অনেকেই আবার স্মৃতি ধরে রাখতে ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের ছবি তুলছেন। সবুজ ও হলুদের সমারোহে প্রকৃতি যেন সৌন্দর্যময়ী হয়ে উঠেছে। সূর্যমুখী বীজ উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান কৃষি গবেষণা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কৃষক আলতাফ হোসেনসহ চরে ২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। প্রায় প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ দিতে হয়। দেড় ফুট দূরত্বে একটি করে বীজ বপন করতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব রাখতে হয় দেড় ফুট। মাত্র ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বীজ বপন থেকে শুরু করে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে সব খরচ বাদ দিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হয়। কৃষক আলতাফ সূর্যমুখীর চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এবার ৫ থেকে ৬ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন তিনি। তিনি কলেজের অধ্যক্ষ থেকে ২০১০ সালে অবসরে যান। অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন সফল এই কৃষক। এদিকে যমুনা নদীর ভাঙনে তার সিংহভাগ জমিই চরে পরিণত হয়েছে। তার চরের জমিতে উন্নত ফসলের চাষ করে সফল হওয়ার জন্য তিনি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার প্রাক্কালেই বেছে নেন কৃষি পেশা। তার চরে গম, ভুট্টা, কাউন, চিনা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, তিল, তিশি, কুসুম ফুল, কালোজিরা, ধনিয়াসহ নানা রবি ফসলের চাষ করে প্রতিবছর অনেক টাকা আয় হয়ে থাকে। পত্রিকায় সূর্যমুখীর তেলের পুষ্টিগুণ ও ফলন দেখে গত বছর কৃষি গবেষণার এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের উদ্ভাবিত বীজ নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে চাষ করে ভালো ফলন পান আলতাফ। এই বীজের তেল ব্যবহার করে শারীরিক উপকারও পেয়েছেন তিনি। তাছাড়া সূর্যমুখীর বীজ ও তেলের দাম অন্য তেলের চেয়ে অনেক বেশি। তাই কৃষি গবেষণার উদ্ভাবিত এই বীজ ও পরামর্শ নিয়ে এবার ৫ থেকে ৬ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা, জমির সূর্যমুখী এবার আরও ভালো হয়েছে উৎপাদিত সূর্যমুখী বীজ বিক্রি করে খচ বাদ দিয়ে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষক আলতাফ হোসেন সরকার। গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল্যাহ আল মাহমুদ জানান, নতুন উদ্ভাবিত এই সূর্যমুখী উচ্চ ফলনশীন ও বেশি লাভজনক ফসল। অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায়। এর চাষ করা সহজ গাছ ছোট আকারের হয় অল্প বাতাসে পড়ে যায় না। সূর্যমুখীর তেল সয়াবিন তেলের চেয়ে পুষ্টিগুণ বেশি, স্বাস্থ্যসম্মত এবং মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। চলতি মৌসুমে আলতাফ হোসেনসহ চরে ২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ফলন দেখে আগামীতে সূর্যমুখী চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।