'নতুন জঙ্গি সংগঠনকে অস্ত্রসহ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা'

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
নতুন জঙ্গি সংগঠন 'জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'কে অস্ত্র-গোলাবারুদ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। দেশ-বিদেশ থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও কারাগারে জঙ্গিদের তৎপরতা রয়েছে। কারাগারে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে এক সময়ের পোস্ট মাস্টার রণবীর হয়ে ওঠে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান। এখন পর্যন্ত শুধুর্ যাবের হাতেই গ্রেপ্তার হয়েছে সংগঠনটির ৩৮ সদস্য। এ ছাড়া পুলিশের হাতেও গ্রেপ্তার হয়েছে অন্তত ১২ জন। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারর্ যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গত বছরের ২৩ আগস্ট কুমিলস্না থেকে আট তরুণ নিখোঁজের তদন্ত করতে গিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনটি সম্পর্কে জানা যায়। নিখোঁজদের মধ্যের্ যাবের হাতে আটকের পর নিলয় চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়। সেই তথ্যের সূত্র ধরেই ২৩ জানুয়ারি ভোর ৫টায় র?্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র?্যাব-২, র?্যাব-৩ ও র?্যাব-১৫ সম্মিলিতভাবে কক্সবাজার জেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অদূরে ইয়াহিয়া গার্ডেনের গহিন জঙ্গলে অভিযান চালায়। অভিযানে গ্রেপ্তার হয় সংগঠনটির শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান রণবীর (৪৪) ও বোমা বিশেষজ্ঞ আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলম (৪৪)। তাদের কাছে পাওয়া গেছে ১টি বিদেশি পিস্তল, ৩টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ১০ রাউন্ড পিস্তলের তাজা বুলেট, একটি খালি বুলেট, ২টি একনলা বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, একটি বুলেটের খোসা, ১০০ রাউন্ড পয়েন্ট ২২ বোরের তাজা বুলেট, ১টি স্মার্ট মোবাইল ও প্রায় ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। মোবাইলে পাওয়া গেছে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর ভিডিও। র্ যাব কর্মকর্তা জানান, রণবীর ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত পোস্ট অফিসে চাকরি করতেন। এরপর তিনি অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়েন। ডাকাতি করে ধরা পড়েন। জেল খাটেন প্রায় সাড়ে ৩ বছর। জেলে থাকার তিনি জেএমবির মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়েন। নাম লেখান জঙ্গিবাদে। এরপর তিনি জেএমবি ছেড়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনটিতে যোগদেন। রাতারাতি নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করে জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান। গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ের্ যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনটিকে অস্ত্র-গোলাবারুদ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। যার মধ্যে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) উলেস্নখযোগ্য। ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটির নেতা ও সদস্য মিলিয়ে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনটিকে অর্থায়ন করার বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ের্ যাব কর্মকর্তা জানান, ২০২১ সালে কেএনএফের সঙ্গে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির ৩ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি হয়। পরে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে থাকে। চুক্তি অনুযায়ী কেএনএফ অস্ত্র-গোলাবারুদ ও প্রশিক্ষণ দেবে। বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের প্রধান নাথান বম, সামরিক কমান্ডার কথিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ভাংচুং লিয়ান বম ও আরেক নেতা মিডিয়া শাখা প্রধান কথিত লেফটেন্যান্ট কর্নেল লালজং মুই ওরফে মাওয়াইয়া এবং কথিত লেফটেন্যান্ট কর্নেল লাল মুন ঠিয়াল ওরফে চির চির ময়'র সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন জঙ্গলে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যদের আশ্রয় দেওয়া ও সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাপ্ত ভিডিওটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের একজন ধারণ করেছিলেন। এটি আমির শামীন মাহফুজের কাছে পাঠানোর কথা ছিল। মূলত তরুণদের জঙ্গিবাদের দিকে আকৃষ্ট করতেই ওই ডিভিওটি তৈরি করা হয়েছিল। ডিভিওটির কোনো কপি দেশ বা বিদেশের কোনো গোষ্ঠীকে দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছে কিনা যায়যায়দিনের এমন প্রশ্নের জবাবের্ যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিষয়টি জানার চেষ্টা চলছে। ডিভিওটি নতুন জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান শামীন মাহমুজের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। তিনি আরও বলেন, অস্ত্র-গোলাবারুদ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সরবরাহ করা। র্ যাবের গোয়েন্দা শাখার সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গি প্রশিক্ষণের সময় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুলিতে ডা. আহমেদ ও প্রশিক্ষণকালে আল আমিন নামে জঙ্গি সংগঠনটির দুই সদস্য মারা যান। তাদের কবর দেওয়া হয়েছে গভীর জঙ্গলে। কবর দুটি শনাক্ত হয়েছে।