অভিভাবক হিসেবে মা-কে স্বীকৃতি দিয়ে হাইকোর্টের রায়

সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের নাম লেখার স্বীকৃতি দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হিসেবে বাবার নাম লেখার বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না। এখন থেকে কোনো শিক্ষার্থী বাবার নাম ব্যবহার করতে না চাইলে সে ক্ষেত্রে মা কিংবা আইনগতভাবে অন্য কোনো অভিভাবকের নাম যুক্ত করতে পারবেন বলে রায়ে উলেস্নখ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আইনুননাহার সিদ্দিকা, এস এম রেজাউল করিম ও আয়েশা আক্তার। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত। আইনজীবীরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণের ক্ষেত্রে আগে শুধু 'বাবার নাম' ব্যবহার করতে পারতেন। ঐতিহাসিক এই রায়ের ফলে এখন থেকে বাবার নামের পাশাপাশি আরও দুটি অপশন যুক্ত হলো। এতে করে কেউ চাইলে, বাবার পরিচয় ব্যবহার না করেও ফরম পূরণের সময় মা কিংবা আইনগতভাবে বৈধ অভিভাবকের নাম লিখতে পারবেন। রিটের পক্ষের আইনজীবীরা জানান, ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগে শিক্ষার্থী তথ্য ফরমে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বাবার নাম পূরণ করতে না পারায় রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের এক তরুণীকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রবেশপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়। উলেস্নখ্য, মা ও সন্তানকে স্বীকৃতি না দিয়ে বাবার চলে যাওয়ার পর ওই শিক্ষার্থী তার মায়ের একার আদর-স্নেহে বড় হয়েছিলেন। পরে এ ঘটনার যথাযথ অনুসন্ধানের ওপর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২০০৯ সালের ২ আগস্ট তিনটি মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন- বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (বস্নাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ যৌথভাবে জনস্বার্থে রিট দায়ের করে। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহম্মেদ ও বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ মানবাধিকার, সমতার পরিপন্থী ও বিশেষভাবে শিক্ষার অধিকারে প্রবেশ গম্যতার বাধাস্বরূপ বিদ্যমান বৈষম্যমূলক এ বিধানকে কেন আইনের পরিপন্থী এবং অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না- এই মর্মে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে বর্তমানে কোনো কোনো শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বাবা ও মা উভয়ের নাম সম্পর্কিত তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে উলেস্নখ করতে হয়, তার একটি তালিকা এবং যেসব যোগ্য শিক্ষার্থী তাদের বাবার পরিচয় উলেস্নখ করতে অপারগ তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ২০২১ সালের ৬ জুন বস্নাস্ট আবেদনকারীদের পক্ষে একটি সম্পূরক হলফনামা আদালতে দাখিল করে। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১৬ জানুয়ারি সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মা স্বীকৃতি পাবেন কিনা- এ বিষয়ে শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় ঘোষণার জন্য ২৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।