হারের বৃত্তে বন্দি খুলনা টাইগার্স

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শনিবার বিপিএলে দিনের প্রথম ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে দারুণ ব্যাটিং করেন কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের মোহাম্মদ রিজওয়ান (বাঁয়ে) এবং লিটন দাস -বিসিবি
চলমান বিপিএলের নবম আসরে লিটন দাস ও মোহাম্মদ রিজওয়ান করলেন দারুণ দুটো ফিফটি। জনসন চার্লস খেললেন আগ্রাসী ইনিংস। তাতে কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স ভালো সংগ্রহ গড়ল। এরপর ওপরের দিকের ব্যাটারদের ছোট ছোট অবদানে খুলনা টাইগার্স থাকল পথে। তবে শেষদিকে অধিনায়ক ইয়াসির আলি রাব্বির দারুণ চেষ্টা সত্ত্বেও ব্যর্থ হলো তারা। বিপিএলে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শনিবার দিনের প্রথম ম্যাচে খুলনাকে ৪ রানে হারিয়েছে ইমরুল কায়েসের কুমিলস্না। এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করে ২ উইকেটে ১৬৫ রান করে তারা। জবাবে পুরো ওভার খেলে ৬ উইকেটে ১৬১ রান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে খুলনা। এদিনের এই হারে পরাজয়ের বলয় থেকে বের হতে পারল না তারা। বিশেষ করে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৭ রান দরকার ছিল খুলনার। তবে কুমিলস্নার অফ স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত সেটা মেলাতে দেননি। যদিও তৃতীয় ও চতুর্থ বলে টানা চার মারেন ইয়াসির, টাইমিং ঠিকঠাক হলে সেগুলো হতে পারত ছক্কাও। পঞ্চম বলে ডাবল আসায় সমীকরণ নেমে দাঁড়ায় ১ বলে ৬ রানে। উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে মোসাদ্দেক মাথা খাটিয়ে জোরের সঙ্গে দেন অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল ডেলিভারি। ইয়াসির কেবল সিঙ্গেলই নিতে পারেন। আট ম্যাচে এটি কুমিলস্নার পঞ্চম জয়। আসরের পয়েন্ট তালিকার তিনে আছে তারা। সাত ম্যাচে খুলনার এটি পঞ্চম হার। তাদের অবস্থান পাঁচ নম্বরে। ব্যাটিংয়ে নেমে দেখেশুনে এগোতে থাকেন কুমিলস্নার দুই ওপেনার। পাওয়ার পেস্নতে উইকেট না হারালেও স্কোর বোর্ডে ওঠে কেবল ৩৩ রান। লিটনই বেশিরভাগ সময় ছিলেন স্ট্রাইকে। থিতু হওয়ার পর তিনি হাত খোলেন নবম ওভারে। তরুণ পেসার নাহিদ রানাকে মারেন ৩টি চার। এক পর্যায়ে লিটনের রান ছিল ৩০ বলে ২৫ রান। এরপর রানের চাকায় দম দিয়ে তিনি ফিফটি তুলে নেন ৪১ বলে। তবে পরের বলেই থামতে হয় তাকে। স্পিনার নাহিদুল ইসলামের কিছুটা দ্রম্নত গতির ডেলিভারি পুল করার চেষ্টায় ক্যাচ দেন তিনি। ৪২ বলে ৯ চারে লিটনের রান ৫০। পাকিস্তানের রিজওয়ান স্বভাবসুলভ ঢঙে খেলতে থাকেন। অন্য প্রান্তে ছক্কার পসরা মেলে ধরেন তিনে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের চার্লস। খরুচে নাহিদকে ১৫তম ওভারে ২টি ছক্কা হাঁকান তিনি। কুমিলস্নার সংগ্রহ পেরিয়ে যায় একশ' রান। চার্লসকে থামান পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার ওয়াহাব রিয়াজ। ২২ বলে ৫ ছক্কায় ৩৯ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এক প্রান্তে অবিচল থাকা ম্যাচসেরা রিজওয়ান ১৯তম ওভারে পৌঁছান ফিফটিতে। সেজন্য তার লাগে ৪২ বল। তিনি অপরাজিত থেকে যান ৪৭ বলে ৫৪ রানে। তার ব্যাট থেকে আসে ৪ চার ও ১ ছক্কা। শেষ ৬ ওভারে কুমিলস্না যোগ করে ৬৭ রান। এদিন লক্ষ্য তাড়ায় কাঙ্ক্ষিত শুরু মেলেনি খুলনার। রিভিউ নিয়ে তামিম ইকবালকে এলবিডবিস্নউয়ের ফাঁদে ফেলেন পাকিস্তানের পেসার নাসিম। ১০ বলে ২ চারে ১১ রান আসে তার ব্যাট থেকে। শুরুর এই ধাক্কা সামলে ৪৯ রানের জুটি গড়েন অ্যান্ডি ব্যালবার্নি ও শেই হোপ। তবে সচল হয়নি রানের চাকা। দশম ওভারে আয়ারল্যান্ডের ব্যালবার্নি ৩১ বলে ৩৮ রান করে কাটা পড়েন রানআউটে। তিনি মারেন ৫ চার ও ১ ছক্কা। রিজওয়ান ত্বরিত গতিতে বল ধরে থ্রো করার পর উইকেটরক্ষক লিটন ভেঙে দেন স্টাম্প। ব্যালবার্নির বিদায়ের পর হোপ খোলস ছেড়ে বের হন। একাদশ ওভারে পাকিস্তানের বাঁহাতি স্পিনার খুশদিল শাহকে ২টি চার মারেন তিনি। পরের ওভারে পেসার মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধের ওপর চড়াও হন মাহমুদুল হাসান জয়। ২ চার ও ১ ছক্কা হাঁকান তিনি। সব মিলিয়ে ওই ওভার থেকে আসে ২১ রান। আশা বাড়তে থাকে খুলনার। জয়ের ঝড় অবশ্য স্থায়ী হয়নি। আক্রমণে এসে ছক্কা হজমের পরের বলে প্রতিশোধ নিয়ে তাকে সাজঘরে পাঠান সৈকত। ১৩ বলে ২৬ রান করে লং-অনে রিজওয়ানের তালুবন্দি হন তিনি। তানভির ইসলাম টিকতে দেননি পাকিস্তানের আজম খানকে। নিয়ন্ত্রিত বল করা বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান থিতু হতে দেননি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে। ফলে ১১ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে নড়বড়ে হয়ে যায় খুলনা। এরপর ক্রিজে এসে ইয়াসির নিয়মিত বিরতিতে বাউন্ডারি আদায় করে নিতে থাকেন। কিন্তু অন্য প্রান্ত থেকে পাননি কোনো সহায়তা। আর ১৯ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন ইয়াসির। এর আগে ১৯তম ওভারে নাসিম বোল্ড করে দেন শাই হোপকে। তিনি ৩২ বল খেলে করেন ৩৩ রান। নাসিম ২ উইকেট নেন ২৯ রানে। ১ উইকেট নিতে মুস্তাফিজ ও তানভিরের খরচা যথাক্রমে ১৫ ও ১৯ রান। সাত ম্যাচে খুলনার এটি পঞ্চম পরাজয়, আট ম্যাচে কুমিলস্নার পঞ্চম জয়। সংক্ষিপ্ত স্কোর: কুমিলস্না : ১৬৫/২ (লিটন ৫০, রিজওয়ান ৫৩*, চার্লস ৩৯, খুশদিল ১৩*; সাইফ ০/৩, নাসুম ০/১৫, নাহিদ রানা ০/৪৯ ওয়াহাব ১/৩৭, নাহিদুল ১/৩৪)। খুলনা টাইগার্স : ২০ ওভারে ১৬১/৬ (তামিম ১১, বালবার্নি ৩৮, হোপ, জয় ২৬, আজম ১, সাইফ ৮, ইয়াসির ৩০*, ওয়াহাব ৬*; নাসিম ২/৩০, তানভির ১/১৯, মুস্তাফিজ ১/১৫, মুকিদুল ০/৩৭, খুশদিল ০/২৬, মোসাদ্দেক ১/৩১)। ফল : কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স ৪ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : রিজওয়ান আহমেদ।