এমপিদের শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জের রিট খারিজ

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একাদশ জাতীয় সংসদে নিবাির্চতদের শপথ নেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন হাইকোটের্ খারিজ হয়ে গেছে। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোটর্ বেঞ্চ বৃহস্পতিবার ‘উত্থাপিত হয়নি’ মমের্ আবেদনটি খারিজ করে দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তার সঙ্গে ছিলেন সাকিব মাহবুব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটনির্ জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটনির্ জেনারেল মুরাদ রেজা। আদালতের আদেশের পর মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, তারা এই আবেদন নিয়ে হাইকোটের্র অন্য বেঞ্চে যাবেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে নিবাির্চত সংসদ সদস্যরা ৯ জানুয়ারি শপথ নিয়েছিলেন। বিএনপিবিহীন ওই সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি। সে অনুযায়ী আগামী ২৯ জানুয়ারি পযর্ন্ত দশম সংসদের মেয়াদ। মেয়াদ অবসানের ৯০ দিন আগে থেকে পরবতীর্ ৩০ দিনের মধ্যে নতুন নিবার্চন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নিবার্চন হয়। নিবার্চনে বিজয়ীরা গত ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন। এরপর ৭ জানুয়ারি নতুন সরকারও শপথ নেয়। তার একদিন বাদে গত ৮ জানুয়ারি নতুন এমপিদের শপথ বাতিল করে গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়ে স্পিকার, প্রধান নিবার্চন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে উকিল নোটিশ দেন সুপ্রিম কোটের্র আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ। তার আইনজীবী হিসেবে সুপ্রিম কোটর্ আইনজীবী সমিতির সম্পাদক বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন ওই নোটিশ পাঠান। ওই নোটিশের জবাব না পাওয়ায় নতুন সাংসদদের শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১৪ জানুয়ারি এই রিট আবেদন করেন তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ। নতুন এমপিদের শপথ বাতিল করে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করতে হাইকোটের্র নিদের্শনা চাওয়া হয় সেখানে। বুধবার এ রিটের ওপর শুনানি শেষ করে আদালত বৃহস্পতিবার বিষয়টি আদেশের জন্য রেখেছিল। বৃহস্পতিবার সকালে আদেশের সময় রিটকারী পক্ষের আইনজীবী আদালতে বলেন, তারা রিটটি উপস্থাপন করতে চান না। কিন্তু অ্যাটনির্ জেনারেল তাতে আপত্তি জানিয়ে রিটের উপর আদেশ চান আদালতের কাছে। পরে আদালত রিটিটি ‘উত্থাপিত হয়নি’ মমের্ খারিজ করে দেয়। আদেশের পর অ্যাটনির্ জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ হলেই কেবল সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি রিট আবেদন করতে পারেন। ‘কিন্তু আবেদনকারী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ সংসদ সদস্যও না, একাদশ সংসদ নিবার্চনেও অংশ নেননি। তাই তার মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ হয়েছে, এটা বলা যাবে না।’ ‘আমরা আদালতে এই যুক্তি তুলে ধরে বলেছি, রিট আবেদনটি রক্ষণীয় নয়। পরে আদালত রিটটি উত্থাপিত হয়নি মমের্ খারিজ করে দিয়েছেন।’ রিট আবেদনে বলা হয়েছিল, দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একাদশ সংসদের নবনিবাির্চত সদস্যরা শপথ নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। ‘সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রতি সংসদ মেয়াদোত্তীণর্ হলে পূবের্র সংসদ সমাপ্তি না হওয়া পযর্ন্ত এরা দায়িত্ব পালন করবেন। সে অনুযায়ী নবনিবাির্চত সংসদ সদস্যদের ৩ জানুয়ারি নেয়া শপথে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। সংবিধানের ১৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শপথের জন্য নিবাির্চতদের উচিত ছিল ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারি পযর্ন্ত অপেক্ষা করা। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৮(৩) এই সংবিধানের অধীন যে ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির পক্ষে কাযর্ভার গ্রহণের পূবের্ শপথ গ্রহণ আবশ্যক, সেই ক্ষেত্রে শপথ গ্রহণের অব্যবহিত পর তিনি কাযর্ভার গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে। অনুচ্ছেদ ১২৩(৩) তবে শতর্ থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নিবার্চনে নিবাির্চত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পযর্ন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কাযর্ভার গ্রহণ করিবেন না। রিট আবেদনে বলা হয়, ‘একাদশ জাতীয় সংসদের নিবাির্চত সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়া কেবল বেআইনিই হয়নি, বেআইনিভাবে তারা তাদের পদের মেয়াদও বাড়িয়ে নিয়েছেন। ‘সংবিধানের ৭২(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বতর্মান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৯ জানুয়ারি। তাই শপথ নেয়া নিবাির্চতরা শুধু আইনকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাননি, তারা তাদের সংসদ সদস্য পদটিকেও অকাযর্কর করে ফেলেছেন।’ রিট আবেদনের ওই যুক্তি নাকচ করে অ্যাটনির্ জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘৩০ জানুয়ারির আগে একাদশ জাতীয় সংসদের কাজ শুরু হবে না। এ জন্য তাদের শপথও অবৈধ নয়।’