মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দর্শনার্থীর ভিড়ে ক্রেতা কম জমজমাট 'শিশু চত্বর'

বইমেলার চতুর্থ দিন
তাহমিদ জায়িফ, ঢাবি
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
শনিবার বইমেলায় বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ছিল 'শিশু প্রহর'। বড়দের পাশাপাশি শিশুদের পদচারণায় মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। মা-বাবা ও অভিভাবকদের হাত ধরে মেলায় এসে উচ্ছ্বসিত ছোটরাও। ছবিটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা

শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রান্তে ছিল বইপ্রেমীদের সরব উপস্থিতি। এদিন সকাল এগারোটায় মেলার দুয়ার খুলে দেওয়া হয়। তবে বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত 'শিশু প্রহর' উপলক্ষে ছিল শিশুদের উৎসব। এবারের বইমেলায় শিশুচত্বরটি রমনা কালী মন্দির গেটের ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে। বাবা-মায়ের হাত ধরে মেলার শিশুচত্বর প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়ায় শিশুরা। এ সময় শিশুদের '১২৩ সিসিমপুরের' ইকরি, মিকরি, হালুমও শিশুদের সঙ্গে নেচে-গেয়ে, ছবি তুলে পুরো সময় মেলা প্রাঙ্গণ মাতিয়ে রাখতে দেখা গেছে। এদিকে বাংলা একাডেমি থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মেলার চতুর্থ দিন শনিবার ১৩৩টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে।

শুক্রবারের তুলনায় গতকাল শনিবার দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল কিছুটা কম। তবে বিকালের দিকে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বই বিক্রি খুব একটা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। কোনো কোনো প্রকাশকরা বই বিক্রি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও অনেকেই জানিয়েছেন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া।

শনিবার শিশুচত্বরে গিয়ে কথা হয় বাড্ডা থেকে তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে মেলায় আসা হাসান হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'আগে যখন ছাত্র অবস্থায় আসতাম তখন মেলা আরও রঙিন লাগত। এবার মেয়েকে নিয়ে এসেছি। মেয়ের জন্য 'বর্ণপরিচয়' বইটা কিনেছি।'

মেলায় কিশোরদের আগ্রহের জায়গা ছিল কমিক্স আর ডিটেকটিভ বইয়ে। এছাড়া সায়েন্স ফিকশনে বইয়ের প্রতিও কিশোরদের পছন্দের তালিকায়

ছিল। পাঞ্জেরী প্রকাশনীর মুন্না বলেন, 'আমাদের স্টলে কিশোরদের ভিড় বেশি। বিশেষ করে কমিক্স আর ডিটেকটিভ বই বেশি বিক্রি হচ্ছে।'

মেলার শিশুচত্বর প্রাঙ্গণে বেশিরভাগ সময় ভিড় দেখা গেছে 'ময়ূরপঙ্খী' স্টলে। প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী চন্দনা জানান, 'শিশুদের আকর্ষণ থাকে রঙিন কাভারের দিকে। আমাদের বেশিরভাগ বইয়ের কাভার রঙিন, আকর্ষণীয়। তাই শিশুরা পছন্দ করছে বেশ।'

এদিকে, 'কথাপ্রকাশ'-এর মার্কেটিং ইনচার্জ ইউনুস আলী জানান, শুক্রবার মেলায় যে টার্গেট করেছিলাম সে পরিমাণ বিক্রি হয়েছে। আজও আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব। তবে এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ দর্শনার্থী বই দেখতে এসেছেন, কিনেছেন কম।

'সাহিত্যপ্রকাশ'-এর ম্যানেজার রাকিবুল হাসান বলেন, 'মেলায় মানুষ আসছে অনেক। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা কম। সবাই ছবি তুলছেন, আড্ডা দিচ্ছেন কিন্তু বই কিনছেন খুব কম ক্রেতা।'

অন্যদিকে, মেলার চতুর্থ দিনে এসে কিছুটা প্রাণ পেয়েছে লিটলম্যাগ চত্বর। এ চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ম্যাগাজিন 'ডাহুক' স্টলে ঢাবি সাহিত্য সংসদের সভাপতি রিয়াজ বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কি লিখছেন, তাদের চিন্তা-ভাবনা কি, সেটা জানার জন্য অনেকেই আসছেন আমাদের স্টলে। আশা করি সামনে আরও ভালো সাড়া পাব আমরা।'

মেলার চতুর্থ দিন বিকালে বইমেলার মূল মঞ্চে 'আকবর আলী খান' স্মরণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কবি মোহাম্মদ সাদিক। প্রবন্ধকার হিসেবে ছিলেন আমিনুল ইসলাম ভূইয়া। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন ফারুক মঈনউদ্দীন, কামরুল হাসান ও মো. মোফাকখারুল ইকবাল।

প্রবন্ধকার বলেন, 'ডক্টর আকবর আলি খান প্রশাসনের বহু পদে সাফল্যের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। মুজিবনগর সরকারে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলেন। বহুকাল তিনি অর্থসচিব হিসেবে কাজ করেছেন, সরকারি প্রশাসনের শীর্ষ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন, বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টাও ছিলেন। পন্ডিত হিসেবে তিনি অত্যন্ত উচ্চমানের সৃষ্টি রেখে গেছেন।'

আলোচকরা জানান, ডক্টর আকবর আলি খানের কাজের পরিধি ছিল বিস্তৃত। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে থেকেও সৎ ও নির্ভীক থেকে কঠোর ভাষায় অন্যায়, অদক্ষতা ও দুর্নীতির সমালোচনা করেছেন। এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা ভাবতেন তিনি। সামাজিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য দূর করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি তার মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়েছেন। অর্থনীতি ও ইতিহাস ছাড়াও নৃবিজ্ঞান ও সাহিত্য-সমালোচনার ক্ষেত্রেও তিনি অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।'

সভাপতির বক্তব্যে কবি মোহাম্মদ সাদিক বলেন, 'অর্থনীতি, ইতিহাস নৃবিজ্ঞান ও সাহিত্য নিয়ে গভীর জ্ঞানতাত্ত্বিক আলোচনা ডক্টর আকবর আলি খানকে যেমন অমর করেছে তেমনি বাঙালি জাতিকে করেছে শুদ্ধ।'

এদিকে লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ফারুক হোসেন, আবদুল বাছির, ইসহাক খান এবং আফরোজা সোমা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি অসীম সাহা, অঞ্জনা সাহা এবং ফরিদ কবির। এছাড়া গোলাম কুদ্দুছের নেতৃত্বে ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন 'বহ্নিশিখা'র পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী দিল আফরোজ রেবা, চন্দনা মজুমদার, আব্দুল লতিফ শাহ এবং শাহ আলম দেওয়ান।

আজ মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'স্মরণ : সমরজিৎ রায় চৌধুরী' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাহিদ মুস্তাফা। আলোচনায় অংশ নেবেন, মইনুদ্দীন খালেদ, মুস্তাফা জামান এবং আনিসুজ্জামান সোহেল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শিল্পী হাশেম খান।

শনিবার মেলায় আসা ১১৩টি বইয়ের মধ্যে রয়েছে- এর মধ্যে রয়েছে- গল্প ৪, উপন্যাস ২৪, প্রবন্ধ ৬, কবিতা ১৮, গবেষণা ৩, ছড়া ১, শিশুসাহিত্য ১০, জীবনী ২, রচনাবলি ১, মুক্তিযুদ্ধ ৩, নাটক ১, বিজ্ঞান ৩, ভ্রমণ ৪, ইতিহাস ২, রাজনীতি ২, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ১, বঙ্গবন্ধু ৩, রম্য/ধাঁধা ১, ধর্মীয় ২, অনুবাদ ৪, অভিধান ১, সায়েন্স ফিকশন ৪ এবং অন্যান্য ১৩টি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে