দর্শনার্থী ও বিক্রি দুটোই কম

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

তাহমিদ জায়িফ, ঢাবি
রোববার একুশে বইমেলায় পছন্দের বই দেখছেন আগত দর্শনার্থীরা। ছবিটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা -যাযাদি
তখনও রোদের তীব্রতা কমেনি, বিকালে বইমেলার দুয়ার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই আনাগোনা বাড়তে থাকে বইপ্রেমীদের। রোববার মাঘী পূর্ণিমার বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজগুলোতে। তাই মেলায় কিশোর-কিশোরীদের উপস্থিতিও বেশি ছিল। বেশিরভাগ ঘুরে বেড়ানোর দলে থাকলেও ক্রেতার সংখ্যাও কম ছিল না। আগের দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় ছিল বেশ। কিন্তু রোববার নগরের কর্মব্যস্ততার ছাপ যেন পড়ল মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রান্তে। গত দুই দিনের মতো বইপ্রেমীদের ভিড় ছিল না এদিন। তবে সন্ধ্যার পর থেকে পাঠকের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছিল। উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও এদিন মেলার অন্যপ্রকাশ, বাতিঘর, ইউপিএল, ঐতিহ্যসহ বেশ কিছু প্রকাশনীর স্টলে পাঠকের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বনানী বিদ্যানিকেতন বিদ্যালয়ের ক্লাস টেনে পড়ুয়া চার বন্ধু একসঙ্গে এসেছিলেন বইমেলায়। তারা পাঞ্জেরী প্রকাশনীর স্টল খুঁজছিলেন। তাদের মধ্য থেকে রাফসান কিছুটা অভিযোগের সুরে জানায়, 'এবার মেলার সবকিছু উল্টোপাল্টা। স্টল খুঁজে বের করতে বেশি সময় লাগছে। মেলায় ধুলোও অনেক এবার।' এবার মেলায় অক্ষর প্রকাশনীর স্টলটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে। সেখানে কথা হয় অক্ষর প্রকাশনীর ম্যানেজার আনেয়ার হোসেন খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'আমাদের প্রকাশনীতে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুলস্নাহর কবিতার বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। সার্বিকভাবে এবারের বিক্রি সন্তোষজনক। এভাবে চললে আশা করি করোনার আগে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তাতে পৌঁছাতে পারব।' কমিক্সের প্রতি বাচ্চাদের যে আগ্রহ বেশি তা বোঝা গেল ঢাকা কমিক্সের স্টলের সামনে পৌঁছে। মেলার শেখ রাসেল শিশু চত্বরে কথা হয় ঢাকা কমিক্সের বিপণনকর্মী আশিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের কমিক্স বরাবরের মতোই ভালো চলছে। এর মধ্যে "প্রতিবাস্তব" ও ''এক বাক্স কমিক্স'' এখন পর্যন্ত বেস্ট সেলিং বলা যায়।' এদিকে বাংলা একাডেমি থেকে প্রাপ্ত তথ্যনুসারে আজকে (রোববার) বইমেলায় ৭৩টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বিকাল ৪টায় বাংলা একাডেমির মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'স্মরণ : সমরজিৎ রায় চৌধুরী' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহিদ মুস্তাফা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মইনুদ্দীন খালেদ এবং মুস্তাফা জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পী হাশেম খান। প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী হাতে লেখা বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম নকশাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান লোগোসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের লোগোর প্রণেতা। তিনি ছবি আঁকতেন আমাদের দেশের রূপবৈচিত্র্যকে বিষয়বস্তু করে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও ছবি এঁকেছেন তিনি। শান্তির অন্বেষায় তার চিত্রপটে রং, রেখা, রূপ- সব একাকার হয়ে আছে। আলোচকরা বলেন, সমরজিৎ রায় চৌধুরী একাধারে একজন প্রতিভাবান শিল্পী, অভিভাবকসুলভ শিক্ষক এবং বন্ধুবৎসল একজন মানুষ ছিলেন। পরম্পরা-নির্ভর শিল্পী হলেও তার চিত্রভাষায় আধুনিকতার ছোঁয়াও ছিল স্পষ্ট। শিল্প-সৃষ্টির ক্ষেত্রে আনন্দ ও লাবণ্য তৈরিতে তিনি বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন। পরিচিত ও অপরিচিত দুই ধরনের মোটিফের ব্যবহার তার চিত্রের উলেস্নখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতি, মানুষ আর লাল সবুজের বিন্যাস তার চিত্রকে বিশিষ্টতা দান করেছে। সভাপতির বক্তব্যে শিল্পী হাশেম খান বলেন, শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী ছিলেন নিষ্ঠাবান একজন শিক্ষক। দৃঢ় মনোবলের অধিকারী এই শিল্পী চাচুকারিতাকে কখনো প্রশ্রয় দেননি বরং ভালোবাসা দিয়েই সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মন জয় করেছিলেন। আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কুদরত-ই-হুদা, বায়তুলস্নাহ্‌ কাদেরী, আবু সাঈদ তুলু ও ফরিদুর রহমান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আলতাফ হোসেন, আসলাম সানী এবং মারুফ রায়হান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মীর বরকত, ইকবাল খোরশেদ এবং কাজী বুশরা আহমেদ তিথি। এছাড়া ছিল ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন 'প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন'-এর পরিবেশনা। আগামীকালের অনুষ্ঠানসূচি : আগামীকাল বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'স্মরণ :কাজী রোজী এবং স্মরণ : দিলারা হাশেম' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নাসির আহমেদ এবং তপন রায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আসলাম সানী, শাহেদ কায়েস, আনিসুর রহমান এবং শাহনাজ মুন্নী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অসীম সাহা।