দায় স্বীকার করে তিনজনের জবানবন্দি, ২ জন রিমান্ডে

ঢাকায় এসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার নারী

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
স্বামী-সন্তানের খোঁজে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় এসে এক নারী (২৯) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকারের ঘটনায় করা মামলায় তিনজন দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। অপরদিকে দুইজনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় আল-আমিন হোসেন (২৬), সবুজ (২৬) ও শফিকুল ইসলাম (২৬) দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদী আসামি শফিকুলের ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরি আসামি সবুজের এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম আসামি আল আমিনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। অপর দিকে মামলার সুষ্ঠুতদন্তের জন্য আসামি বিলস্নাল হোসেন (২৫) ও রাসেল ওরফে মোলস্না রাসেলের (২৪) সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা আক্তার তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে, শনিবার রাতে রাজধানীর গাবতলী, ডেমরা, বসিলা ও ভোলার তজুমুদ্দিন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের। এই তথ্য নিশ্চিত করে রোববার বেলা ১১টায় তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি ভুক্তভোগী ওই নারী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি জেলা থেকে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার জন্য মোহাম্মদপুরের বসিলায় আসেন। বসিলা এলাকার এক বাসায় ভুক্তভোগী তার স্বামী-সন্তানসহ থাকতেন। আনুমানিক ৪ মাস আগে শারীরিক অসুস্থতার জন্য সন্তানদের স্বামীর কাছে রেখে ভিকটিম তার গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। এর মধ্যে স্বামী তাকে ডিভোর্স দেন। ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ভুক্তভোগী ওই নারী তার আগের বাসায় এসে স্বামী-সন্তানকে না পেয়ে আশপাশে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। বাড়ির মালিক ও পাশের ভাড়াটিয়ারা তার স্বামী-সন্তানদের কোনো ঠিকানা দিতে পারেননি। পরে রাত ৯টা পর্যন্ত বছিলা চলিস্নশটি হাউজিং, ফিউচার হাউজিং, গার্ডেন সিটি হাউজিং, স্বপ্নধরা হাউজিংয়ের আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে। পরে সন্তানদের সন্ধান না পেয়ে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ভুক্তভোগী রাত সাড়ে ৯টার দিকে বছিলা চলিস্নশ ফিট তিন রাস্তার মোড় থেকে একটি রিকশা ভাড়া করেন। কিন্তু রিকশাওয়ালা ভুক্তভোগীকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে না নিয়ে ঢাকা উদ্যান ও বসিলার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরাতে থাকেন। ওই সময় বিভিন্নজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন রিকশাওয়ালা। ভুক্তভোগীকে তার স্বামীর বাসা খুঁজে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সবাইকে ফোন করে। ডিসি বলেন, রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে অজ্ঞাতনামা রিকশাচালক পরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগী নারীকে তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে বসিলা ফিউচার টাউন রোডের শেষ মাথায় একটি অস্থায়ী শ্রমিকদের টিনের ঘরে ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিয়ে যায়। সেখানে ওই নারীকে জোরপূর্বক পালাক্রমে পাঁচজন ধর্ষণ করে ও দুইজন পাহারা দেয়। পরে ওই নারীর আর্তচিৎকারে এলাকার কর্তব্যরত নিরাপত্তার রক্ষী ও লোকজনদের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আসামিরা পালিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ দ্রম্নত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং ভুক্তভোগী ওই নারীকে উদ্ধার করে। পরে ভিকটিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয় এবং প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এইচএম আজিমুল হক আরও বলেন, মামলা হওয়ার পর থেকে আশপাশের সিসি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সাত ব্যক্তি ও তিনটি রিকশার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। প্রযুক্তির সহায়তা ও বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান এলাকা থেকে ভুক্তভোগী মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয় এবং শাহিন খান নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত আসামি বিলস্নাল হোসেনকে গাবতলী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকার ডেমরা হতে আরেক আসামি আল আমিন হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বসিলা থেকে মো. সবুজ ও রাসেল ওরফে মোলস্না রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ভোলার তজুমদ্দিন থানা থেকে শফিকুল ইসলাম নামে আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের হেফাজতে থাকা দু'টি রিকশা উদ্ধার করা হয়। এ সময় তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মৃতু্যঞ্জয় দে সজল, সহকারী পুলিশ কমিশনার দেবাশীষ কর্মকার, মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান ও মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তোফাজ্জল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।