রাজশাহী-২

জোটকে ছাড়তে নারাজ আওয়ামী লীগ বিএনপিতে নতুন মুখ চায় একাংশ

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

বদরুল হাসান লিটন, রাজশাহী
বায়ুদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য বিশ্বের এক নম্বরের খেতাবপ্রাপ্ত শহর রাজশাহী সিটি করপোরেশন। এই শহর নিয়েই গঠিত রাজশাহী-২ (সদর) আসন। পদ্মা পাড়ে অবস্থিত প্রাচীন ঐতিহ্যের এই নগরী নিয়ে ২০০৮ সালে সংসদীয় আসন গঠিত হয়। এর আগে রাজশাহী-২ আসনটি ছিল সিটি করপোরেশন ও পবা উপজেলা নিয়ে। ১৯৯১ সালের পর বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত রাজশাহী সদর আসনে প্রথম নৌকার জয় হয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এক সময়ের রাজশাহী কাঁপানো তুখোড় ছাত্র নেতা বাদশা। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তিনবারের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে জিততে হয়েছে তাকে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটগত হলে আবারও নৌকা প্রতীক চাইবেন ফজলে হোসেন বাদশা। তবে এ আসনে এবার মনোনয়ন নিয়ে ১৪ দলীয় জোটের আগাম ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে। এবার ছাড় দিতে চায় না স্থানীয় আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দুইবারের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে এবার এমপি হিসেবে চান দলের নেতাকর্মী এবং স্থানীয়রা। এ ছাড়াও সদর আসনের মনোনয়ন নিয়ে এবারও লড়াইয়ে থাকবেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মিজানুর রহমান মিনু মেয়র থাকাকালে ২০০১ সালে একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে এবার জোটের শরিকদের ছাড় দিতে রাজি নয় নগর আওয়ামী লীগ। তারা চাইছেন, আওয়ামী লীগ থেকে এবার প্রার্থী দিতে। গত নির্বাচন থেকে তাদের এ দাবি দলের হাইকমান্ডেও তুলে ধরা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নিজ দল থেকে প্রার্থী দিলে মনোনয়ন চাইতে পারেন পারেন হাফ ডজন নেতা। এদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কালাম, সহসভাপতি শাহীন আক্তার রেনী, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাইলে একক প্রার্থী হবেন তিনি। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, 'আগামী নির্বাচনে রাজশাহী সদর আসনে নৌকা প্রতীক যে পাবেন আমরা তার হয়েই কাজ করব। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে গত তিনবার রাজশাহী সদর আসনে মহাজোটের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ক্ষতি হয়েছে। বঞ্চিত হয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। তাই এবার এই আসনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে আমরা কেন্দ্রের কাছে দাবি জানাব। দল যেটি ভালো মনে করবে আমরা সেটি মেনে নেব। তিনি বলেন, 'আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেওয়া হলে আমি মনোনয়ন চাইব। এ জন্য প্রস্তুতিও রেখেছি।' আহসানুল হক পিন্টু বলেন, 'আমি দীর্ঘদিন ধরেই মাঠে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। এভাবেই রাজনীতি করতে চাই। দল সুযোগ দিলে আগামীতে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার প্রতিফলন ঘটাতে চাই।' তিনি বলেন, 'এবার এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত। নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে এর কোনো বিকল্প নাই।' বিএনপি বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে এবারও দলীয় প্রার্থী হতে চান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। তিনি এখান থেকে তিনবার মেয়র ও একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে ফজলে হোসেন বাদশার কাছে পরাজিত হন তিনি। মিনু ছাড়াও স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতারা এ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকে। ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজশাহী-২ (সদর) আসন ছিল বিএনপির দখলে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনটি বিএনপির হাত ছাড়া হয়। ওই নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার কাছে পরাজিত হন মিজানুর রহমান মিনু। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মিনু রাসিকের মেয়র ছাড়াও সংসদ সদস্য ছিলেন। মিজানুর রহমান মিনু '৯১ সালে প্রথম রাসিকের মনোনীত মেয়রের দায়িত্ব পান। '৯৪ সালে রাসিকের প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি নির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। মিজানুর রহমান মিনু বলেন, 'আমরা নির্বাচন প্রস্তুতি ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলন একসঙ্গেই চালাচ্ছি। বড় দল হিসেবে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন। কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দেবে সবাই সেটি মেনে নেবেন এবং ধানের শীষের বিজয়ে কাজ করবেন। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে আর কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।' আগামীকাল :রাজশাহী-৩ আসনের বিস্তারিত