ডাকসু নিবার্চন

গঠনতন্ত্র সংশোধন ইস্যুতে মতবিরোধ তীব্র হচ্ছে

ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি সবাই ভোট কেন্দ্র হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে করা, পুরো কেন্দ্র (গোপন বুথ ব্যতীত) সিসিটিভির আওতায় আনাসহ বেশ কিছু বিষয়ে দাবি জানিয়েছে

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

এস এম মামুন হোসেন
ডাকসু নিবার্চনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ১৪টি ছাত্র সংগঠন বৈঠকে অংশ নিয়েছিল তাদের ১২টিই গঠনতন্ত্রের স্পশর্কাতর কয়েকটি ধারায় পরিবতের্নর দাবি জানিয়েছে। কিন্তু এসব ধারা পরিবতের্ন বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি তুলেছে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। উপাচাযর্ও এসব ধারা পরিবতের্নর বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও গঠনতন্ত্রের বাইরে যাওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন। এ অবস্থায় গঠনতন্ত্রের সংশোধন ইস্যুতে প্রশাসন-ছাত্রলীগের সঙ্গে বিরোধী প্রায় সব ছাত্র সংগঠনের মতবিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। গত ১০ জানুয়ারি ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে কমিটির যে বৈঠক হয় সেখানে সব ছাত্র সংগঠনের কাছ থেকে তাদের দাবি দাওয়া লিখিতভাবে প্রদানের কথা বলা হয়। যার প্রেক্ষিতে সব ছাত্র সংগঠনই ১৪ জানুয়ারির মধ্যে তাদের দাবি পেশ করে। ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি সবাই ডাকসুর নিবার্হী কমিটিতে সভাপতির (উপাচাযর্) ক্ষমতায় ভারসাম্য, ভোট কেন্দ্র হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে করা, পুরো কেন্দ্র (গোপন বুথ ব্যতীত) সিসিটিভির আওতায় আনাসহ বেশ কিছু বিষয়ে দাবি জানিয়েছে। তবে এসব দাবির বিষয়ে ছাত্রলীগের জোরালো আপত্তি রয়েছে । ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি ডাকসুর নিবার্হী সভাপতি অথার্ৎ ভিসির কমিটি ভেঙে দেয়া, ফল বাতিল করাসহ যেসব ক্ষমতা রয়েছে তা কখনই প্রয়োগ হয়নি। ফলে আগামীতে হবে এমন আশা করা যায় না। বরং আমাদের উপাচাযর্ স্যারের সম্মানাথের্ তার এ ক্ষমতাকে আমরা খারাপভাবে দেখি না।’ ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘এ দাবিটি প্রথম তোলা হয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে। কিন্তু ছাত্র ইউনিয়নের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন এমন পলায়নপর দাবি জানাবে তা আমরা আশা করি না। আমরা চাই গঠনতন্ত্রে যেভাবে আছে সেভাবেই ভোট হোক। ভোট কেন্দ্র হলের বাইরে নেয়ার দাবি হাস্যকর।’ সিসিটিভির আওতায় ভোট গ্রহণের চিন্তাও সঠিক নয় বলে মনে করেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এ নেতা। তবে এ তিনটি বিষয়েই ছাত্রলীগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা। এ বিষয়ে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আমরা ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে নেয়ার দাবি করেছি। একই সঙ্গে সিসিটিভির আওতায় ভোট নেয়ার দাবি জানিয়েছি। এ জন্য প্রয়োজনে গঠনতন্ত্রের ৫ (এ), ৮(ই এবং এম) ধারাসহ অগণতান্ত্রিক এবং সুষ্ঠু নিবার্চনের পথে বঁাধা হয় এমন সব ধারাকে সংশোধনের দাবি জানিয়েছি। নিবার্হী সভাপতির ক্ষমতায় ভারসাম্যও আনা প্রয়োজন। আমরা আশা করি সত্যিকার অথের্ সুষ্ঠু নিবার্চন চাইলে প্রশাসন বতর্মান বাস্তবতার ভেতরে সুষ্ঠু নিবার্চন আয়োজনের লক্ষে এসব দাবি মেনে নিয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগ নেবে। একই সঙ্গে সব ছাত্র সংগঠনের সহ অবস্থান এবং সমান সুযোগও নিশ্চিত করা হবে।’ গঠনতন্ত্রের এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল বাম ছাত্র জোটের সমন্বয়ক সালমান সিদ্দীক যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আমরা বতর্মান বাস্তবতায় একটি সুষ্ঠু নিবার্চনের স্বাথের্ গঠনতন্ত্রের কিছু ধারায় সংশোধন দাবি করেছি। এবং প্রতিটি দাবির কারণও অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করেছি। নিবার্হী সভাপতি হিসেবে উপাচাযর্ ফল বাতিল, যে কাউকে বরখাস্ত করতে পারবে এটাতো গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নয়। এছাড়া এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়া যাবে না। গেলেও আদালতের কোনো রায় এখানে কাযর্কর হবে না, এটাতো স্রেফ আমাদের সংবিধানের বিরুদ্ধে চলে যায়। রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানইতো সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারে না। এসব কারণে আমরা নিবার্হী সভাপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য দাবি করেছি। একই সঙ্গে হলগুলোতে যেভাবে দখলদারিত্ব কায়েম করা হয়েছে তার হাত থেকে সাধারণ শিক্ষাথীের্দর পছন্দের প্রাথীের্ক ভোট দেয়া নিশ্চিত করতে হলের বাইরে কেন্দ্র স্থাপনের দাবি করেছি। এর সবগুলোই যৌক্তিক দাবি। আমরা মনে করি সুষ্ঠু নিবার্চন চাইলে এগুলোকে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করবে আমাদের প্রশাসন।’ বামপন্থি এবং বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো নিবার্হী সভাপতির ক্ষমতায় যে ভারসাম্য দাবি করেছে এ বিষয়ে কি ভাবছেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযর্ অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান এমন প্রশ্নে যায়যায়দিনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে গঠনতন্ত্রে বলা আছে কি করতে হবে। সে অনুযায়ী কাজ করা হবে। আমরা তো যা খুশি তাই করতে পারি না। আমাদেরকেও নিজস্ব আইন ও নিয়ম মেনে চলতে হয়।’ বিরোধীরা হলের বাইরে কেন্দ্র স্থাপন এবং সিসিটিভির যে কথা বলছে সেটাকে কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে উপাচাযর্ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এসব বিষয়েও গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা আছে। সেভাবেই কাজ হবে।’ কিন্তু গঠনতন্ত্র সংশোধনের যে দাবি করা হচ্ছে তা কি করা হবে? এ প্রশ্নে ঢাবি ভিসি বলেন, ‘এ লক্ষ্যে আমাদের গঠিত কমিটি কাজ করছে। তারাসহ আমরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেব। এখানে উপাচাযের্র এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যই সকলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া।’ গঠনতন্ত্র সংশোধনসহ বিরোধীদের দাবির বিষয়ে উপাচাযের্র সুস্পষ্ট কোন কথা না বলাকে বিরোধীরা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না। তারা দাবি করছেন, এর মধ্য দিয়ে প্রশাসন আসলে ছাত্রলীগের অবস্থানকেই সমথর্ন করছে। যা সুষ্ঠু নিবার্চনের পথে বঁাধা হবে বলেও দাবি করছেন তারা। উল্লেখ্য, ডাকসু গঠনতন্ত্রের ৫(এ) ধারায় সভাপতিকে এই মমের্ ক্ষমতা দেয়া আছে যে তিনি যেকোনো সময় নিবার্হী কোনো সদস্যকে বরখাস্ত করতে পারেন, এমনকি নিবার্হী কমিটিও বাতিল করতে পারেন। বিরোধীদের দাবি, এরূপ ধারা গণতন্ত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ৮(এম) ধারা অনুযায়ী নিবার্চনের ফলাফলের বিষয়ে সভাপতির গৃহীত কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের কোনো রায় কাযর্কর হবে না। এটাকেও জাতীয় সংবিধানের ৩১ ধারার পরিপন্থি বলে দাবি করছেন বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ৮(ই) ধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হলে একটি করে ভোটকেন্দ্র থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট হলের সদস্যরা শুধু ওই হলের ভোটকেন্দ্রেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কিন্তু বিরোধীরা মনে করছেন হলগুলোতে ক্ষমতাসীন ছাড়া অন্য কারো যেহেতু কোন অবস্থান নেই তাই সুষ্ঠু নিবার্চনের স্বাথের্ ভোট কেন্দ্রগুলো একাডেমিক ভবনে করা প্রয়োজন। আর সিসিটিভির বিষয়ে কিছু বলা না থাকলে সুষ্ঠু নিবার্চনের স্বাথের্ এটির দাবি বিরোধীদের। প্রয়োজন হলে এটি গঠনতন্ত্রে সংযুক্তিরও দাবি তাদের।