চুরি যাওয়া বাইক উদ্ধারে পুলিশ কতটা তৎপর

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রায়ই রাজধানীতে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটলেও সেগুলো সহজে ফেরত পান না মালিকরা Ñফাইল ছবি
সম্প্রতি রাইড শেয়ারিং অ্যাপের একজন বাইকচালক শাহনাজ আক্তারের স্কুটি চুরির পর সেটা ফেরত পাওয়া নিয়ে পুলিশের তৎপর ভূমিকার প্রশংসায় ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবে ঢাকাসহ সারাদেশে যে সংখ্যক মোটরসাইকেল চুরি যায়, তার মধ্যে উদ্ধার করা সম্ভব হয় হাতেগোনা কয়েকটি। এমনই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক তারেক হাসান শিমুলের মোটরসাইকেলটি প্রায় দুই মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে চুরি যায়। তিনি ঘটনার দিন সঙ্গে সঙ্গে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। এবং পরদিন এই মোটরসাইকেল চুরির মামলাও করেন। তার বিষয়টি তদন্তের জন্য একজন পুলিশ কমর্কতাের্ক দায়িত্ব দেয়া হলেও আজ পযর্ন্ত তার কোনো সুরাহা হয়নি। শিমুল তার ফেসবুক পেইজে এ নিয়ে স্ট্যাটাস লিখতেই সেটা ভাইরাল হয়ে যায়। ‘এই বাইক আমারও আবেগ ভালোবাসা জীবিকার মাধ্যম ছিল। উদ্ধার হবে কি!!!!’ এই শিরোনামে সেই ফেসবুক পোস্টটিতে তিনি লিখেছেন, ‘শাহনাজের বাইক যদি কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানে বের হয়ে আসতে পারে আমারটা কেন আজ ২ মাসের বেশি সময় পরও খেঁাজ মিলে না!! নাকি ভাইরাল হওয়ার অপেক্ষায় আছেন।’ ঘটনার পর চোরকে ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে দাবি করলেও তারা এ বিষয়ে গাফলতি করছে বলে অভিযোগ হাসানের। এ বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান, পুলিশ চাইলে তার এই মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিভাগে ধরনা দিলেও কোনো লাভ হয়নি। তিনি শাহবাগ থাকায় চোর ও ছিনতাইকারীদের তালিকা সংগ্রহ করে সেটা ঊধ্বর্তন কমর্কতার্র কাছে দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। হাসান বলেন, ‘পুলিশের যে সক্ষমতা রয়েছে এটা শাহানাজ আক্তারের বাইক উদ্ধারের ঘটনাতেই প্রমাণ হয়। এখানে অভাব আন্তরিকতার। আমার বাইক চুরি যাওয়ার পর আমি জিডি করেছি, মামলা করেছি। এখন মনে হচ্ছে মামলা না করে নিউজটা ভাইরাল করলে হয়তো বাইকটা ফেরত পেতাম।’ ‘আমি এখনো থানার চক্কর কাটছি। তারা একবার বলে আপনার বাইক কোথায় না কোথায় চলে গেছে। আরেকবার বলে, এই চুরির সঙ্গে অনেক সিন্ডিকেট জড়িত। উদ্ধারে সময় লাগবে। কিন্তু আমি বুঝি যে তারা আসলে কোনো প্রক্রিয়াই শুরু করেনি।’ তার এই পোস্টটি ইতোমধ্যে শতাধিকবার শেয়ার হয়েছে। কমেন্টে উঠে এসে পুলিশের সমভূমিকার প্রশ্নে নানা আক্ষেপের কথা। যেমনটি লিখেছেন মোহাম্মদ এরদাশ মাহমুদ, ‘আশাই করে যেতে পারি আমরা, আমাদের পুলিশ বাহিনী চাইলেই কিছু হবে। কিন্তু চাইবেন কিনা সেটাই ভেবে দেখার বিষয়।’ মুমতাহানা ইয়াসমিন তন্বী পুলিশের দায়িত্বের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘যার যা দায়িত্ব, যা করার জন্য তাদের বেতন দেয়া হয়, সেই কাজ করলে এতো বাহবা দেয়ার কিছু নাই। বাহবা দিয়ে বরং এটাই প্রকাশ পায়, যে গোড়ায় গÐগোল।’ চৌধুরী হোসেইন মোবাশ্বের বলছেন, ‘তোর কপাল খারাপ তুই ভাইরাল হসনি।’ তবে ভাইরাল হওয়ার কারণেই যে শাহানাজ আক্তারের বাইকটি উদ্ধারে পুলিশ তৎরপরতা দেখিয়েছে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগঁাও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব সরকার। শাহানাজ আক্তারের স্কুটি উদ্ধারের তদন্তে তিনি কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ তাদের কাছে আসা প্রতিটি অভিযোগ তদন্তে সবোর্চ্চ চেষ্টা করে যায়। শাহানাজের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিল যে, তার স্কুটিটি উদ্ধারের মতো গুরুত্বপূণর্ ক্লু আমাদের কাছে ছিল। আর সেটা হল ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বর। যেই নম্বরটি সচল ছিল। সব মিলিয়ে আমাদের লাক ক্লিক করে গেছে।’ চুরির জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আগে থেকেই চিনতেন শাহনাজ আক্তার এবং তিনিই ওই মোবাইল নম্বর পুলিশকে দেন। পুলিশ সেই নম্বরের সূত্র ধরেই মোবাইল কোম্পানির সহায়তায় অভিযুক্ত ব্যক্তির ছবি ও ঠিকানা বের করে এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঐ মোবাইলের অবস্থান নিণর্য় করে। এরপর নারায়ণগঞ্জের রঘুনাথ এলাকা থেকে স্কুটিটি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে ডিসি বিপ্লব সরকার বলেন, ‘যদি এ ধরনের কোনো ক্লু থাকে তাহলে প্রযুক্তির সহযোগিতায় সহজেই সেটা খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু হঠাৎ কোনো স্থান থেকে বাইক গায়েব হয়ে গেলে সেগুলো বের করা খুবই কঠিন কেন না ওই চুরির ঘটনার কোনো ক্লু, ভিডিও ফুটেজ বা প্রত্যক্ষদশীর্ থাকে না।’ এ অবস্থায় পুলিশকে নিভর্র করতে হয়, ম্যানুয়েল পদ্ধতির ওপর, যেখানে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে প্রতিটি থানায় বাইকের যাবতীয় তথ্য জানিয়ে দেয়া হয় এবং সোসের্ক জানানো হয়। এখন এ সব সোসর্ কখনো কাজে আসে কখনো কাজে আসে না বলে তিনি জানান। আবার পেশাদার মোটরসাইকেল চোররা বাইকটি লোপাট করে এর চেসিস নম্বর, ইঞ্জিন নম্বর এবং নিবন্ধন নম্বর মুছে ফেলে বা বদলে দেয়। এ কারণে কোন বাইকটি চুরির সেটা ধরা সোসের্র পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিপ্লব সরকার জানান, এর মধ্যেও অনেক মোটরসাইকেল পুলিশ উদ্ধার করেছে। কিন্তু দেশের প্রতিটি থানার মধ্যে নেটওয়াকির্ংয়ের অভাব থাকার কারণে সেগুলোর প্রকৃত মালিককে বের করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, ‘ধরেন ঢাকার শাহবাগের একটা বাইক উদ্ধার হল ডেমরায় বা ঢাকার বাইরের কোনো জেলায়, কিন্তু এই মোটরসাইকেলটা যে কার থেকে হারিয়েছে সেই তথ্য জানার মতো শক্তিশালী নেটওয়াকর্ আমাদের নেই।’ ‘যদি এই অভ্যন্তরীণ যোগাযোগটা আরো শক্তিশালী করা যেতো তাহলে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডে এগুলোর বিষয়ে তথ্য পাওয়া যেতো সহজেই। যেটা কিনা দেশের বাইরে হয়।’ এমনটিই জানান ডিসি বিপ্লব সরকার। শিমুলও তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্রত্যাশা করেন, ‘এতদিন আইন সবার জন্য সমান হবে। এমন সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্নই দেখি।’ বিবিসি