পরিকল্পনার ক্ষেত্রে জনগণের কল্যাণকে প্রাধান্য দেই

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে 'স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রাপ্তদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন -ফোকাস বাংলা
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে জনগণের সেবা করার সুযোগ হিসেবে দেখে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ। তিনি বলেন, 'অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যার পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বারবার বাধাগ্রস্ত হয় এবং স্থিতিশীলতার অভাবের কারণে বাংলাদেশ এর আগে খুব একটা অগ্রগতি দেখতে পায়নি।' দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নয় বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে 'স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩' প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। কারণ, আমরা কখনো অ্যাডহক ভিত্তিতে কোনো পরিকল্পনা নেইনি। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। সুনির্দিষ্ট ও দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়ে আমরা সবকিছু করেছি। আমরা কোনো অ্যাডহক ভিত্তিতে কিছুই করিনি। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আমরা সবসময় দেশের জনগণের কল্যাণকে প্রাধান্য দিই।' শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে 'রূপকল্প-২০২১' বাস্তবায়নে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১ ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভের পর সরকার এখন 'রূপকল্প ২০৪১' বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও 'স্মার্ট বাংলাদেশে' পরিণত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও একটি দীর্ঘমেয়াদি 'ডেল্টা পস্ন্যান-২১০০' গ্রহণ করেছে, যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অন্যের ওপর নির্ভর না করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে উন্নত ও সম্মানজনক জীবন কাটাতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা খেলাধুলা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, অর্থনীতি এবং অন্যান্যে প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করছি। আমরা সম্ভবত একটি বিশ্লেষণের পর আপনাদের দারিদ্র্য হ্রাস সম্পর্কে কিছু সুসংবাদ দিব।' শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দারিদ্র্য ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে ও মাথাপিছু আয় বাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রতিটি ঘরে বিদু্যৎ দিয়েছে এবং প্রত্যেক গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি দিচ্ছে। জনগণের দোরগোড়ায় সঠিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে এবং প্রতিটি খাতে অগ্রগতির লক্ষ্যে গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে- যার মধ্যে কৃষি, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি বলেন, 'সরকার পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি মানুষকে প্রতি কেজি ৩০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে চাল দিচ্ছে ও অন্য ৫০ লাখ মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হচ্ছে। সরকার রমজান মাসে আরও ৫০ লাখ মানুষকে (প্রতি কেজি ১৫ টাকায়) চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে মানুষ কষ্ট না পায়। চাল দেওয়ার পাশাপাশি রমজান মাসে (দরিদ্রদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে) ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলাসহ আরও কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। আমরা সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছি- যাতে রমজানে কাউকে খাবারের জন্য কষ্ট করতে না হয়।' শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা, বৈষম্য ও নিপীড়নমুক্ত একটি দেশ বিনির্মাণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সবকিছুই করেছে। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দুস্থ মানুষকে একটি মর্যাদাপূর্ণ ও সুন্দর জীবন দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ হবে তলাবিহীন ঝুড়ি-মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি এমন অনেক দেশের এমন ধারণাকে জাতির পিতা মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে মাত্র তিন বছর সাত মাসের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, 'যখন দেশি-বিদেশি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বুঝতে পারল যে, বাংলাদেশকে আর দমিয়ে রাখা যাবে না, তখন তারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের জাতির পিতাকে হত্যা করল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশের অগ্রগতি থেমে যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস ও ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়।' স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) শামসুল আলম, প্রয়াত লেফটেন্যান্ট এজি মোহাম্মদ খুরশীদ (মরণোত্তর), শহীদ খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া (মরণোত্তর) এবং মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) বীর বিক্রম। 'সাহিত্য' ক্যাটাগরিতে প্রয়াত ডক্টর মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন আহমেদ (সেলিম আল দীন) (মরণোত্তর) এবং 'সাংস্কৃতিক' এবং 'ক্রীড়া' ক্যাটাগরিতে যথাক্রমে পুরস্কার পেয়েছেন পবিত্র মোহন দে এবং এএসএম রকিবুল হাসান। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর 'সমাজসেবা/জনসেবা' বিভাগে এবং 'গবেষণা ও প্রশিক্ষণ' ক্যাটাগরিতে বেগম নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ) এবং ডক্টর ফেরদৌসী কাদরী পুরস্কার পেয়েছেন। এর আগে ৯ মার্চ স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পুরস্কারপ্রাপ্তরা প্রত্যেকে একটি করে স্বর্ণপদক, একটি সার্টিফিকেট এবং সম্মানী চেক পেয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং পুরস্কারপ্রাপ্তদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরেন। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ডক্টর ফেরদৌসী কাদরী অনুষ্ঠানে তার নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।