আ'লীগ-বিএনপিতে প্রার্থীর ছড়াছড়ি 'ফ্যাক্টর' উকিল আবদুস সাত্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

মো. বাহারুল ইসলাম মোলস্না
জেলার সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন গঠিত। দুই উপজেলায় রয়েছে ১৭টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় ৯টি ও আশুগঞ্জ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। এই সংসদীয় এলাকার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭০ হাজার ১২৩ জন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৩৭ হাজার ১৫৩ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৮ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৭৮৫ জন। আশুগঞ্জ উপজেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৭০ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৬৯ হাজার ২৬৯ জন ও মহিলা ৬৩ হাজার ৭০১ জন। এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত। ১৯৭৩ সালের পর থেকে এ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া। এ আসন থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনি ৪ বার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এবং দুবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। দুই উপজেলার মধ্যে আশুগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান থাকলে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগে কোন্দল রয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নবম সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান ও এ আসনের সাবেক এমপি মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মহাজোট প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা বিজয়ী হন। দশম সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও বিশিষ্ট নারী নেত্রী মিসেস নায়ার কবিরকে হারিয়ে বিজয়ী হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ও অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধার জামাতা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে তৎকালীন এমপি অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। জামাই-শ্বশুরের দ্বন্দ্বে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া মাঠে নামতে পারেননি। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি প্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বরে দলীয় সিদ্ধান্তে উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গত ১ ফেব্রম্নয়ারি অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বয়োবৃদ্ধ নেতা আবদুস সাত্তার ভূইয়া প্রার্থী হবেন বলে এলাকায় আলোচনা আছে। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ওরফে শিউলী আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান আনসারী, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আকবর হোসেন বকুল মিয়ার ছেলে ও সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ তানবির হোসেন কাউছার, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব শাহজাহান আলম সাজু এবং ও সরাইল উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মনোনয়ন চাইবেন বলে আলোচনা আছে। বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন দলটির নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি মো. মোবারক হোসেন, সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আনিছুল ইসলাম ঠাকুর, সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুজ্জামান লস্কর তপু, সরাইল উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রদল নেতা শেখ মোহাম্মদ শামীম, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান (দল থেকে বহিষ্কৃত) আবু আসিফ আহমেদ, জেলা বিএনপির সদস্য আক্তার হোসেন, কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরুণ দে ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আহসান উদ্দিন খান শিপন প্রমুখ। এলাকায় তাদের নিয়ে কমবেশি আলোচনা রয়েছে। জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনের দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য, জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমানের (রওশন এরশাদ গ্রম্নপ) নেতা অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া ও দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ভাসানী মনোনয়ন চাইবেন বলে এলাকায় আলোচনা আছে। এ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোট থেকে এ আসনের সাবেক এমপি মুফতি ফজলুল হক আমীনির ছেলে ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা আবুল হাসনাত আমীনি, জাকের পার্টি থেকে জহিরুল ইসলাম জুয়েল ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) থেকে মো. রাজ্জাক হোসেন মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আনিছুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আন্দোলন করছি। দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। তবে দল যদি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয় তখন তারপক্ষেই কাজ করব। তিনি বলেন, 'এই আসনটি বিএনপির দুর্গ। আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জিতবে ইনশালস্নাহ।' এ বিষয়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মো. শামীম বলেন, 'গত নির্বাচনেও দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলাম, এবারও চাইব। দল মনোনয়ন দিলে জিতব ইনশালস্নাহ।' এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী মন্টু বলেন, '১৯৭৩ সালের পর এই আসনে আওয়ামী লীগের কোনো এমপি নেই। তাই এই আসনে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। আমি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। ওই নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হলে ইনশালস্নাহ দলীয় প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে জিতবে।' সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ওরফে শিউলী আজাদ বলেন, 'আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি দলের কাছে সরাসরি মনোনয়ন চাইব। তবে আমকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে তার পক্ষে কাজ করব।' হ আগামীকাল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বিস্তারিত