নবাবগঞ্জে বাঙ্গির জমজমাট বাজার

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
ইছামতি নদীর তীরে ভাঙাভিটা বাজারে এভাবেই ঝুড়িতে বাঙ্গি সাজিয়ে রাখেন বিক্রেতারা -যাযাদি
নবাবগঞ্জ উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়নের ভাঙাভিটা বাজার ও ইছামতি নদীর তীরে বাঙ্গির ঝুড়ি নিয়ে কৃষকরা বসে আছে বিক্রির জন্য। ভাঙাভিটা গ্রামটি বাঙ্গির জন্যই বিখ্যাত। এছাড়াও রসুন, মিষ্টিকুমড়া, মটরশুঁটি ও কালোজিরা চাষ হয় এলাকাটিতে। মূলত ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত বাঙ্গি চাষ হয়। এখানকার মাটি উর্বর থাকার কারণে আমন ধানের অধিক ফলন হয়। বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, রাস্তার দু'পাশের জমিতে বাঙ্গি ক্ষেত। বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে পাকা বাঙ্গির সুগন্ধ। তখনও সূর্যের আলো উঁকি দেয়নি। তার আগেই কৃষকরা জমি থেকে বাঙ্গি তুলছেন। আবার সেই বাঙ্গিকে বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঝুড়িতে সাজানো হচ্ছে। সেই ঝুড়ি মাথায় করে, অনেকে নৌকা করে ইছামতি নদীর তীরে অবস্থিত ভাঙাভিটা বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। প্রতিটি ঝুড়ি ১৪/১৮টি মাঝারি থেকে বড় বাঙ্গি দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি ঝুড়ি ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাকডাকা ভোরের আগেই বাজারে এসে হাজির হয় ক্রেতা ও বিক্রেতারা। ইছামতি নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে সাজানো আছে ক্রেতাদের ইঞ্জিন চালিত নৌকা। ঢাকার কারওয়ান বাজার, আব্দুলস্নাহপুর, শ্যামবাজার, কোরানীগঞ্জ দোহার, মানিকগঞ্জ, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জসহ অনেক জায়গা থেকে ক্রেতারা বাঙ্গি কেনার জন্য নৌকা নিয়ে এসেছেন। অনেক পাইকার গাড়ি নিয়ে এসে রাস্তা থেকে কিনে নিচ্ছেন। এখানে বাঙ্গি কেনাবেচা হয় ভোর থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত। আবার বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দুই বেলাই বাঙ্গির বাজার ক্রেতা বিক্রেতায় ভরপুর থাকে। বাঙ্গি চাষি রবীন্দ্র মন্ডল বলেন, 'এই মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে বাঙ্গির ফলন ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুরো রোজার মাসে বাঙ্গি বিক্রি করতে পারলে আমরা লাভবান হবো। সরকারিভাবে আমাদের প্রশিক্ষণ দিলে এবং বিভিন্ন ঋণ প্রদান করলে আমরা আরও লাভবান হতে পারব।' বাঙ্গি চাষি নিতাই মন্ডল বলেন, 'দুইদিন আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে অনেক বাঙ্গি নষ্ট হয়ে গেছে। আর দূরদূরান্তে থেকে পাইকারিরা না আসতে পারায় প্রতি ঝুড়ি বিক্রি করেছি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। আজ বাঙ্গির চাহিদা বেশি থাকায় ঝুড়িপ্রতি বিক্রি করছি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়।' বাঘৈর থেকে আসা ইসমাইল আড়তের মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, আমি প্রায় চলিস্নশ বছর ধরে এখান থেকে বাঙ্গি কিনে বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করি। কাল থেকে আজকের বাজারের দাম ঝুড়ি প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। রমজান মাসে বাঙ্গির চাহিদা থাকার কারণে বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। আমরাও বেশি দামে বিক্রি করব। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকলে আমাদের আরও সুবিধা হতো। সাধারণ ক্রেতাদের কাছে একটু কম দামে বিক্রি করতে পারতাম।' \হকৈলাইল ইউনিয়নের বাসিন্দা হূমায়ূন কবির বলেন, 'ভাঙ্গাভিটার বাঙ্গি দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখানকার কৃষকরা সরকারিভাবে সুযোগ সুবিধা পেলে ভবিষ্যতে আরও বাঙ্গি উৎপাদনে উৎসাহিত হবে।' নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাহিদুজ্জামান বলেন, 'উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এই বছর বাঙ্গির ফলন ভালো হয়েছে। ভাঙ্গাভিটার মাটি বাঙ্গি চাষের উপযোগী হওয়ায় প্রায় ২১৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে।'