রমজানের প্রথম কর্মদিবস

তীব্র যানজটে নগরবাসীর নাভিশ্বাস!

'সড়কে অবৈধ পার্কিং, ফুটপাথ দখল ও যত্রতত্র গাড়ি চলাচলই যানজটের কারণ' ডিএমপির ১৫ নির্দেশনা কেউ মানছেন না

প্রকাশ | ২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রমজানের প্রথম কার্যদিবসে সোমবার রাজধানীজুড়ে ছিল তীব্র যানজট। ছবিটি সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
টানা তিন দিন ছুটির পর সোমবার থেকে খুলেছে সরকারি অফিস-আদালত। পবিত্র রমজান শুরুর পর গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেই রাজধানীতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সকাল থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে গাড়ির চাপ কিছুটা কমতে শুরু করলে যানজট কিছুটা কম হয়। তবে দুপুরের পর বিকেলের দিকে অফিস বন্ধ হওয়ায় ঘরে ফিরতে শুরু করে অফিসগামী মানুষ। এতে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কে তীব্র যানজটের কবলে পড়েন মানুষ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে গাড়ির জট লেগে রয়েছে। সড়কে অবৈধ পার্কিং, ফুটপাথ দখল ও যত্রতত্র গাড়ি চলাচলের কারণেই রাজধানীতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে ট্রাফিক বিভাগ মনে করছে। এদিকে, যানজট নিরসনে ডিএমটি ১৫ দফা নির্দেশনা দিলেও তা উপেক্ষিত। ফলে যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিমানবন্দর, কুড়িল, বনানী, বাড্ডা, মহাখালী, হাতিরঝিল, রামপুরা, কাওয়ান বাজার, পান্থপথ, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী ও কালশী এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ছিল বিমানবন্দর থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কে। সকাল থেকেই বিমানবন্দর সড়ক থেকে মহাখালী পর্যন্ত তীব্র যানজট। গাড়ি এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘসময় গাড়িতে বসে থেকে হাল ছেড়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন অফিসগামীরা। রাজধানীজুড়ে যানজটের বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বলছে, তিন দিন ছুটি থাকার পর রমজানের প্রথম কর্মদিবসে একসঙ্গে সবাই কর্মস্থলে যাচ্ছেন। ফলে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। তাছাড়া রমজানে অফিস টাইম পরিবর্তনের কারণেও রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। ফলে রাজধানীতে এমন যানজট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, রমজানেও রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটে চলছেন অভিভাবকরা। অফিসগামী ও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সকাল থেকেই হাজারো শিক্ষার্থী-শিক্ষকের যাতায়াত শুরু হয়। বাড়তি মানুষের চলাচল রাজধানীর সড়কের যানজটে বাড়তি মাত্রা যোগ করে। গতকাল সকালে মিরপুর-২ নম্বরে যেতে রাজধানীর মগবাজার মোড়ে বাসের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, 'টানা তিনদিনের ছুটির পর আজ প্রথম দিন অফিসে যেতে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আবার অফিস শেষে বাসায় ফিরতে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বাস পেলেও সেগুলোতে তিল পরিমাণ ঠাঁই হচ্ছে না। রোজার একটা মাস এভাবে কষ্ট করে অফিসে যাওয়া-আসা করতে হবে।' কারওয়ান বাজারে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য সোলাইমান হক বলেন, 'গত তিনদিনে খুব ভালোভাবে ডিউটি করেছি। তবে, আজ সকাল থেকে কারওয়ান বাজারে যানজট লেগে আছে। দুপুরের পর গাড়ির চাপ যেমন বেড়েছে, বেড়েছে মানুষের সংখ্যাও। ইফতারের আগে এ যানজট কমলে আমাদের ইফতার করতেও সুবিধা হবে।' সকালে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর থেকে শেওড়া ওভার ব্রিজ পর্যন্ত যানচলাচল স্থবির হয়ে রয়েছে। শেওড়া থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে ধীরগতিতে যানচলাচল করছে। আবার বনানী থেকে ধীরগতিতে যান চলাচলের কারণে মহাখালী পার হয়ে জাহাঙ্গীর গেট এলাকা পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছে যানজট। রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট যাওয়ার জন্য সকাল ৮টায় বাসে ওঠেন কাজী সালেহ। তিনি বলেন, 'কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বনানীর দিকে গাড়ি কোনোভাবেই এগোচ্ছিল না। ঘণ্টার বেশি সময় গাড়ি শেওড়ায় আটকে ছিল। সর্বশেষ ধীরগতিতে মহাখালী এলেও আবার আটকে যায়। পরে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে রওনা হই ফার্মগেটের দিকে। রোজা রেখে এভাবে যানজটের মধ্যে চলাচলের কারণে অনেক ভোগান্তি হচ্ছে আমাদের।' বনানী ও বিমানবন্দর সড়কের যানজট নিয়ে ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগের গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'আজ রাস্তায় গাড়ির চাপ তুলনামূলক একটু বেশি। তিন দিন বন্ধ থাকার পর আজ রাজধানীতে সব অফিস খুলেছে। এদিকে, রমজানের কারণে অফিস টাইম একটু পরিবর্তন হয়েছে। সবমিলিয়ে একসঙ্গে সকাল থেকে গাড়ির চাপ বেড়েছে। তাই এই যানজট। এ ছাড়া এখনো সব স্কুল বন্ধ হয়নি। অনেক স্কুল এখনো খোলা। একসঙ্গে সকাল ৮টা থেকে রাস্তায় মানুষ ও গাড়ি বের হওয়ায় চাপ বেড়ে গেছে।' এদিকে, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডা পার হয়ে রামপুরা পর্যন্ত সড়কেও রয়েছে যানজট ও গাড়ির চাপ। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ অবস্থার কোনো উন্নতি ছিল না। প্রগতি সরণি এলাকার যানজট নিয়ে ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ইমরান হোসেন বলেন, 'রাজধানীর অন্যসব এলাকার মতো প্রগতি সরণি এলাকায়ও সকাল থেকে প্রচুর গাড়ির চাপ। তবে আশা করছি দুপুরের দিকে চাপ কিছুটা কমে যাবে। তবে ইফতারের আগে আবার গাড়ির চাপ কিছুটা বাড়বে।' অন্যদিকে, সকাল থেকে চলমান যানজটের প্রভাব পড়ছে হাতিরঝিল এলাকায়ও। সাধারণত রাজধানীর অন্যসব এলাকায় যানজট থাকলেও এই এলাকা যানজটমুক্ত থাকে। তবে আজ হাতিরঝিলেও যানজট। এই যানজট সোনারগাঁও হোটেল সিগন্যাল পর্যন্ত পৌঁছেছে। এ বিষয়ে হাতিরঝিল দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী মকসুদুর রহমান বলেন, 'আজ যানজট থেকে হাতিরঝিলও রক্ষা পায়নি। সাধারণত হাতিরঝিলে যানজট থাকে না। তবে তিন দিনের ছুটির প্রভাবে আজ হাতিরঝিলেও যানজট।' এদিকে, সোনারগাঁও হোটেল মোড়ে যানজটের বিষয়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পরিদর্শক আনোয়ার কবির বলেন, হাতিরঝিল, বাংলামটর ও সোনারগাঁ হোটেল মোড়সহ আশপাশের সব রাস্তায় গাড়ির চাপ খুব বেশি। যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি গাড়ি রাস্তায় চলমান রাখার। এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, 'রমজান মাস এলেই ঢাকা শহরে যানজট বেড়ে যায়। যানজট নিরসনে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশসহ থানা পুলিশের সদস্যরাও সড়কে বাড়তি ডিউটি করেন। কিন্তু সড়কের দুই পাশ দিয়ে অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাথ দখলসহ যত্রতত্র গাড়ি চলাচলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা শহরের যানজট নিরসন পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা যারা সড়কে চলাচল করি এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।' অন্যদিকে, রমজান শুরুর আগে যানজট নিরসনে টার্মিনালের অভ্যন্তরে ছাড়া সড়কে বাস থামিয়ে যাত্রী না ওঠানো, আন্তঃজেলা ও দূরপালস্নার বাসগুলো টার্মিনাল সংলগ্ন প্রধান সড়কের অংশ দখল করে না দাঁড়ানো, প্রবেশ ও বাহির পথে শৃঙ্খলা মেনে চলা, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন থেকে বিরত থাকা, গমনপ্রত্যাশী যাত্রীদের সড়কে দাঁড়িয়ে আসার জন্য অপেক্ষা না করাসহ ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে।