নদী নিয়ে ‘কানামাছি খেলা’ বন্ধ করতে হবে: হাইকোটর্

নদী দখল ও উচ্ছেদ নিয়ে ‘কানামাছি খেলা’ হচ্ছে মন্তব্য করে হাইকোটর্ বলেছে এ খেলা বন্ধ হওয়া উচিত। তুরাগ নদীর অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত করার নিদের্শনা চেয়ে করা একটি রিট মামলার রায় ঘোষণার মধ্যে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোটর্ বেঞ্চ থেকে এমন পযের্বক্ষণ আসে। আগের দিন এ মামলার রায় ঘোষণা শুরু করে এই আদালত অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে রক্ষা করতে তুরাগ নদীকে ‘লিগ্যাল পারসন’ ঘোষণা করে। জীবন্ত সত্তা হিসেবে মানুষ যেমন সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করে, আদালতের এই আদেশের মধ্যে দিয়ে নদীর ক্ষেত্রেও তেমন কিছু মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হ?বে বলে রিটকারীর আইনজীবীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। কথা ছিল, বৃহস্পতিবার নদী রক্ষার বিষয়ে ‘গুরুত্বপূণর্ নিদের্শনা’ দিয়ে অবশিষ্ট রায় ঘোষণা করবে আদালত। কিন্তু জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন বা বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সেই রায়ের নিদের্শনা যেন সাংঘষির্ক বা পরস্পরবিরোধী না হয়, সে জন্য বাকি রায় রোববার ঘোষণা করা হবে বলে বেঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বৃহস্পতিবার এ মামলার কাযর্ক্রম শুরুর পর বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক রিটকারী পক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, নদী রক্ষায় সরকার যে একটি কমিশন করেছে, একটি আইন করেছে, সেই তথ্য তিনি আদালতে কেন দেননি। ‘২০০৯ সালে চার নদী রক্ষায় হাইকোটের্র রায়ের আলোকে সরকার একটি নদী রক্ষা জাতীয় কমিশন করেছে। এ বিষয়ে আইনও হয়েছে। কমিশন কাজও করছে। বিচারপতি খায়রুল হক সাহেব যে সাজেশন দিয়েছেন, সরকার কাজ শুরু করেছে। যেখানে পারছেন না, সেখান থেকে আমরা শুরু করতে চাই।’ রিটকারীপক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ তখন বলেন, কমিশন নদী সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি করবে এবং সে আলোকে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু নদী রক্ষা কমিশন ‘সেভাবে কাযর্কর না’। তারা সুপারিশ ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। বিচারপতি আশরাফুল কামাল তখন বলেন, ‘নদী দখল করা হচ্ছে, আমরা নিদের্শ দিচ্ছি অবৈধ স্থাপনা ভাঙছে। কয়েকদিন নিরিবিলি থাকার পর আবার দখল শুরু হয়। এই কানামাছি খেলা বন্ধ হওয়া উচিত।’ আইনজীবীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনার রিটের আলোকে একটি ল্যান্ডমাকর্ রায় হতে যাচ্ছে। এ সমস্যার মাধান হওয়া উচিত। নদীকে দখলমুক্ত করার বিষয়টি যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। নদী থাকবে। আবার নদী দখল করার মনোবৃত্তিসম্পন্ন কিছু লোকেরও অভাব হবে না। কিন্তু এর একটা সুষ্ঠু সমাধান হওয়া উচিত। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’ বিচারক রিটকারীপক্ষের আইনজীবীকে নদী রক্ষা কমিশনের কাজ, এখতিয়ার ও ক্ষমতা সম্পকের্ খেঁাজ-খবর নিতে বলেন। সে সব বিষয় পযাের্লাচনা করে রোববার একটি ‘গাইডলাইন’ দেয়া হবে বলে জানান। হাইকোটের্ এ সব মামলা ‘আসাই উচিত না’ মন্তব্য করে এ বিচারক বলেন, ‘বতর্মানে হাইকোটের্ ৫ লাখ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আজকের পর আর যদি কোনো মামলা না নেয়া হয় এবং আমরা বিচারকরা যদি দিন-রাত কাজ করি, তাহলেও এই ৫ লাখ মামলা নিষ্পত্তি করতে ৩০ বছর লাগবে।’ নদী রক্ষা কমিশন ‘সঠিকভাবে’ কাজ করলে অনেক বিষয় আদালতে আসত না এবং এত মামলা জট সৃষ্টি হতো না বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি আশরাফুল কামাল। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা অনিয়ম, দুনীির্ত নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলে আমরা অনেক অনিয়মের বিষয়ে জানতে পারছি। তবে ইনভেস্টিগেটিভ সাংবাদিকতা তো ওই অথের্ আমাদের দেশে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি প্রকাশ করেছিলেন দুজন সাংবাদিক, যার কারণে সে দেশের প্রেসিডেন্টকে পদ ছাড়তে হয়েছিল।’ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ সময় বলেন, ‘আমাদের এখানেও কিছু কিছু অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হয়। তারাই তো সমাজের হুইসেল বেøায়ার।” হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে তুরাগ নদীর অবৈধ দখলদারদের নাম ও স্থাপনার তালিকা হাইকৈাটের্ দাখিল করেছিল বিচারিক একটি তদন্ত কমিটি। ওই তালিকায় আসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা পরে এ মামলায় পক্ষভুক্ত হন। উভয় পক্ষের দীঘর্ শুনানি নিয়ে হাইকোটর্ বুধবার নদী রক্ষায় রায় ঘোষণা শুরু করে। পরে এ মামলার আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক চার নদী রক্ষায় যে রায় দিয়েছিলেন, সেখানেই কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখল থেকে নদীকে মুক্ত রাখতে কমিশন ব্যথর্ হয়েছে। ‘উনার (বিচারপতি খায়রুল হক) জাজমেন্টের স্পিরিটটা ছিল যে, একটি অথরিটির কাছে টোটাল বিষয়টা থাকবে। কিন্তু আইন প্রণেতারা যখন আইন করলেন, সেখানে কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করা হলো। কমিশন শুধু প্রতিবেদন দিতে পারবে, কোনো কাযর্ক্রম গ্রহণ করতে পারবে না।’ আদালতকে উদ্ধৃত করে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আমরা এমন একটি রায় দিতে চাই। যাতে নদী অবৈধ দখলমুক্ত করতে বার বার আদালতে আসতে না হয়, আদালতের ওপর যেন বাডের্ন না হয়।’ ‘তবে এ বিষয়টাও তারা দেখতে চান, যাতে অন্য যে সব নিদের্শনা আছে বা অন্য যে অথরিটি আছে, আদালতের নিদের্শনার সঙ্গে অন্য অথরিটির নিদের্শনা বা ক্ষমতা যেন ওভারল্যাপ না হয়। একটার সঙ্গে আরেকটা যেন সাংঘষির্ক না হয়। এ জন্য একটু সময় নিয়ে তারা আগামী রোববার জাজমেন্টটা দিতে চাচ্ছেন।’