জাবি শিক্ষক সমিতি নিবার্চনে একজোট আ’লীগ-বিএনপি!

প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:১৬

যাযাদি ডেস্ক
সারা দেশের রাজনীতিতে যখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরের বিরোধিতা করছে, সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শিক্ষক সমিতির নিবার্চনে বিরল ঐক্য গঠন করে বড় জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ (একাংশ), বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকদের জোট ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’। বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ২০১৯ কাযির্নবার্হী পরিষদের নিবার্চন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পযর্ন্ত ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় নিবার্চনের ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নিবার্চন কমিশনার এ কে এম আবুল কালাম। নিবার্চনে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন বঙ্গবন্ধুর আদশর্ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম এবং বামপন্থী একজন শিক্ষককে নিয়ে গঠিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ ১৫টি পদের ১০টিতে জয় পায়। শিক্ষকদের এই জোট উপাচাযির্বরোধী হিসেবে পরিচিত। অন্য দিকে সহসভাপতি ও চারটি সদস্যপদ পেয়েছে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের অন্য অংশের প্যানেল বঙ্গবন্ধু-আদশের্র শিক্ষক পরিষদ। শিক্ষকদের এই অংশ উপাচাযর্ ফারজানা ইসলাম সমথির্ত। যারা জিতলেনÑ নিবার্চনে ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ থেকে সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার (আ’লীগ)। সম্পাদক পদে নিবাির্চত হয়েছেন ফামেির্স বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা (বিএনপি)। যুগ্ম সম্পাদক পদে সহযোগী অধ্যাপক লাইজু নাসরীন (আ’লীগ), কোষাধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন (বিএনপি)। এই জোট থেকে সদস্য পদে অধ্যাপক মাহবুব কবির (বিএনপি), অধ্যাপক শামসুল আলম (বিএনপি), অধ্যাপক ফরিদ আহমদ (আ’লীগ), অধ্যাপক মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন (আ’লীগ), অধ্যাপক সৈয়দ হাফিজুর রহমান (আ’লীগ), অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস (বামপন্থী) নিবাির্চত হয়েছেন। অন্যদিকে ‘বঙ্গবন্ধু-আদশের্র শিক্ষক পরিষদ’ থেকে সহসভাপতি পদে অধ্যাপক যুগল কৃষ্ণ দাশ জয়লাভ করেছেন। এই প্যানেল থেকে সদস্য পদে অধ্যাপক এ এ মামুন, অধ্যাপক রাশেদা আখতার, সহযোগী অধ্যাপক আয়শা সিদ্দিকা ও সহকারী অধ্যাপক মাহফুজা খাতুন জয়লাভ করেছেন। শিক্ষক সমিতির নবনিবাির্চত সভাপতি অজিত কুমার মজুমদার বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন কোনো সংকট তৈরি হয় তখন দলীয় স্বাথের্র বাইরে গিয়ে শিক্ষকেরা এমন মোচার্ গঠন করেন। শিক্ষকদের লক্ষ্য থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বাথর্ রক্ষা করা। শিক্ষক সমিতির নতুন কমিটি সে লক্ষ্যেই কাজ করবে। সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বা বিএনপির আদশির্ক বিষয়টির চেয়ে আমাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাথর্ বড় হয়ে উঠেছে। অন্য সব আদশের্র চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার আদশের্ক সমুন্নত রাখতে গিয়ে আমরা এই জোট গঠন করেছি। আমরা জাকসু নিবার্চনের বিষয়ে দাবি তুলেছি। সে লক্ষ্যে কাজ করব।’ বামপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনার উদ্দেশ্যে সম্মিলিত জোট গঠন করা হয়েছে। প্রশাসনের মন্দ কাজের প্রতিবাদ ও গঠনমূলক সমালোচনা করাই হবে শিক্ষক সমিতির মূল কাজ। ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ভাষ্য, গত বছরের ১৮ ফেব্রæয়ারি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ১৯৭৩-এর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের নিয়ম ভেঙে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচাযর্ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এ নিয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদশর্ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’-এর বিরোধিতা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করেন এমন শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপাচাযর্ হিসেবে ফারজানা ইসলাম দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পাওয়ায় কাযর্ত দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের শিক্ষকেরা। পরে উপাচাযর্পন্থী শিক্ষকরা ‘বঙ্গবন্ধু-আদশের্র শিক্ষক পরিষদ’ নামে নতুন সংগঠন গঠন করেন। তবে উপাচাযর্পন্থী শিক্ষকদের ভাষ্য, ফারজানা ইসলাম রাষ্ট্রপতি কতৃর্ক দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচাযর্ পদে আসীন হনÑসেখানে ৭৩-এর অধ্যাদেশের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।