সংবাদ সম্মেলন
যশোরে সমাবেশ প্রতিহতের হুমকি আমলে নিচ্ছে না বিএনপি
প্রকাশ | ২৬ মে ২০২৩, ০০:০০
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
যশোরে আগামীকাল (২৭ মে) সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এদিকে এ সমাবেশ প্রতিহতের হুমকি দিয়েছে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের এই হুমকি আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা হুমকি-ধামকি বাধা দিলেও বিএনপি এ সমাবেশ হতে পিছু হটবে না। যে কোনো মূল্যেই এই সমাবেশ সফল করা হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেস ক্লাব যশোরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, নির্যাতনসহ সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৭ মে যশোরের বিক্ষোভ সমাবেশ করবে জেলা বিএনপি। সমাবেশ সফল করতে জেলা বিএনপি ইতোমধ্যে সব উপজেলা ও ইউনিয়নে প্রস্তুতিসভা সম্পন্ন করেছে। তবে সমাবেশের একদিন বাকি থাকলেও জেলা প্রশাসন এখনো সমাবেশস্থলের অনুমতি দেয়নি। বিএনপির জনসভাকে ঘিরে যখন সব প্রস্তুতি চলছে, সেই মুহূর্তে যশোর আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির সমাবেশ প্রতিহত করার। গত কয়েক দিনে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের এমন বক্তব্য আর সমাবেশের অনুমতি না পাওয়া নিয়ে বিএনপির সার্বিক অবস্থান সম্পর্কে এই
সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, 'আগামী ২৭ মে যশোরে বিএনপির সমাবেশ করার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে পুলিশ নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তারে নেমেছে। এই গণগ্রেপ্তারের মধ্যেই আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে দুঃখের বিষয় আমরা সমাবেশস্থলের অনুমতি চাইলেও জেলা প্রশাসন এখনো অনুমতি দেয়নি। প্রথমে আমরা শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ও টাউন হল ময়দানে অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু ঈদগাহে ঈদের প্যান্ডেল থাকায় অনুমতি দেয়নি। আর টাউন হল ময়দানে সমাবেশের অনুমতি চাইলে আমাদের না দিয়ে সরকারদলীয় একটি শ্রমিক সংগঠনকে অনুমতি দিয়েছে। প্রশাসন অনুমতি দিক বা না দিক আমরা এই সমাবেশ করব। আগামীকাল শহরের ভোলা ট্যাংক রোডে সমাবেশ করা হবে। সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হামলা হুমকি উপেক্ষা করেই এই সমাবেশ সফল করা হবে। আমাদের যে দাবি সেই দাবি সাধারণ জনগণের দাবি। সেই দাবি আদায়ে আমরা আমাদের নৈতিক অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াব না। সমাবেশকে ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন হুমকি দিয়ে বক্তব্য প্রদান করছেন। তাদের সেই হুমকিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিচলিত না।'
আওয়ামী লীগ বলছে, প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তারা পাহারা দেবে। সে ক্ষেত্রে কোনো সংঘাতের আশঙ্কা করছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, 'বাংলাদেশের সংবিধান আমাকে সভা সমাবেশ করার অধিকার দিয়েছে। সেই সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন; কিংবা সংবিধান সমন্বিত রাখবার জন্য যে সব সরকারি কর্মকর্তারা যশোরে দায়িত্ব পালন করছেন তারা নিশ্চয়ই এটা বিবেচনা করবেন। দায়িত্বটা তাদের। আমি আমার গণতান্ত্রিক অধিকারের বাইরে কিছু বলছি না। আওয়ামী লীগ সব জায়গায় সংঘাত সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করেছে। প্রশাসন দিয়ে চেষ্টা করেছে, গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ করে দিয়ে চেষ্টা করেছে তারা তো কোনো পথই বাকি রাখেনি। নতুন কোনো পথ খোলাও রাখেনি। আমরা সংঘাত এড়িয়েই সমাবেশে করব। বিএনপি দায়িত্বশীল সংগঠন। সংবিধানে যে অধিকার রয়েছে; সেই অধিকার আদায়ে রাজপথে থাকবে বিএনপি। বিএনপি সন্ত্রাসী রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয় না।'
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, 'আমরা সন্ত্রাসের রাজনীতি পছন্দ করি না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হুমকিতে আমরা বিচলিত না। তারা তো সমাবেশ করতে দেবেন না বলেই প্রশাসন এখনো সমাবেশস্থলের অনুমতি দেয়নি। আর পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠাচ্ছে। আমাদের রাজপথে প্রতিবন্ধকতা আসবেই; আমরা সেটি পার করেই সমাবেশ সফল করব।'
প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুলস্নুক চাঁদ প্রমুখ।
এই বিষয়ে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, 'একই দিনে দু'টি সমাবেশে কোনো ধরনের সহিংসতার আশাঙ্কা দেখছি না। তারপরও সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।'