ভালোবাসার বইয়ের বাড়তি কদর

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

এসএম মামুন হোসেন
ভালোবাসা দিবসে নানা বণের্র ফুলে সেজে তরুণীরা এসেছেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। পছন্দের বই কেনার পাশাপাশি মেতে ওঠেন সেলফি তোলায় Ñযাযাদি
কৃষ্ণচূড়া, রক্তজবা আর লাল গোলাপে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে এসেছে বিশ্বভালোবাসা দিবস। এ দিবসে হৃদয়েও লেগেছে ভালোবাসার রঙ। প্রেম বিশারদরা বলেন, ভালোবাসার জন্য কোনো নিদির্ষ্ট দিন বা ক্ষণের প্রয়োজন নেই। তবে সে বাণীকে ফিকে করে বৃহস্পতিবার ভালোবাসার রঙ আলাদা রূপ দিয়েছিল রাজধানীর পাশাপাশি প্রাণের গ্রন্থ মেলাকেও। বইয়ের বিক্রিবাট্টাতেও ছিল তার প্রভাব। সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রিয় মানুষকে বই উপহার দিন। লাইনটি তাত্তি¡ক হলেও গতকাল বিশ^ ভালোবাসা দিবসে এর প্রয়োগটি ছিল চোখে পড়ার মতো। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আগত যুগলরা এদিন একে অন্যকে উপহার দিয়েছেন ভালোবাসার বই। তাই বই মেলা জুড়ে অন্য বইয়ের কদর কম থাকলেও ভালোবাসার বইয়ের চাহিদা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রেমের কবিতা, উপন্যাস, ছোট গল্পসহ অন্যান্য বইয়ের বিক্রি হয়েছে দেদার। আর এতে করে ভালোবাসা নিয়ে যেসব প্রকাশনা বেশি করে বই এনেছে তাদের স্টলে লোকসমাগমও ছিল প্রচুর। গতকাল মেলায় প্রবেশ করে দেখা যায় বই স্টলগুলোতে ভিড় তুলনামূলক কম। তবে কিছু স্টলের সামনে তরুণ-তরুণীদের একটু বাড়তি ভিড় ছিল। একটু কাছে গিয়ে দেখা যায় আগত পাঠকরা সব বই কিনছেন না। বরং বিশেষ শ্রেণির বই কিনতেই তারা বেশি আগ্রহী। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা একে অন্যকে উপহার হিসেবে দেয়ার জন্যই বই কিনছেন। তবে সে সব বই অন্য বইয়ের মতো নয়। বরং ভালোবাসা কেন্দ্রিক লেখা বই কিনছেন তারা। উপহারও দিচ্ছেন ভালোবাসার মানুষকে। তাত্তি¡করা বলেন, দুটি মানব-মানবীর এক হওয়ারই নাম ভালোবাসা। তবে সেই ভালোবাসা শুধু যে, প্রেমিক-প্রেমিকার উদ্দেশ্যেই হবে তা নয়। সেজন্যই ভালোবাসাকে বলা হয় সাবর্জনীন। আর ভালোবাসার সাথে বইয়ের সম্পকর্ সেই আদিকাল থেকে। বইয়ের ভঁাজে হৃদয় নিংড়ানো প্রেমপত্র কিংবা প্রিয়জনের দেয়া লাল গোলাপের শুকনো পাতা। উপহার হিসেবে ফুলের পরেই স্থান বইয়ের। তাই তো গতকাল বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব ভালোবাসার দিবস’-এ প্রিয়জনেরই হাত ধরে ছুটে আসেন ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’য়। প্রবেশের সময় প্রিয়জনের হাতে হাত ধরা আর মাঝে ভালোবাসার প্রতীক লাল গোলাপ। বের হওয়ার সময়ে প্রিয়জনের হাত ও গোলাপের পাশাপাশি ছিল বইও। দেখা যায়, লাল, হলুদ শাড়ি, পাঞ্জাবি পরিহিত তরুণ-তরুণীরা লাইন ধরে মেলায় প্রবেশ করছেন। আর ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি স্টলের সামনে এসব কপোত কপোতিদের ভিড়। এসব স্টলের প্রকাশকরা বলেন, তাদের স্টলে ভালোবাসার বই বেশি আসায় পাঠকদের ঢলটাও এদিনে তাদের স্টলেই। মেলায় আসা একদল যুগল রবিন-আফসানা। রবিন জানান, প্রতি বছরই তিনি তার ভালোবাসার মানুষকে বই উপহার দেন। এবারও তাই প্রিয় জনকে নিয়ে মেলায় এসেছেন বই কিনতে। আফসানাও জানান, তিনিও তার ভালোবাসার মানুষকে বই উপহ্রা দেবেন। এজন্য তারা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। তবে মনের মতো ভালোবাসার বই খঁুজে পাচ্ছেন না বলে জানান এ যুগল। তবে ঘুরতে ঘুরতে কোনো একটি বই ভালো লেগে যাবে বলেও জানান তারা। অন্বেষা প্রকাশনার প্রকাশক শাহাদাত হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আজকের দিনটি অন্যদিন থেকে একটু ব্যতিক্রম। এদিন সব বইয়ের বিক্রি সমান হয় না। ভালোবাসা কেন্দ্রিক বইয়ের বিক্রিই এদিন বেশি হয়। এজন্য আমাদের প্রস্তুতিও থাকে আলাদা। প্রেম ও ভালোবাসা কেন্দ্রিক বইগুলো এদিন চলবে সেটিকে মাথায় রেখে আমরা এ সংশ্লিষ্ট বই এনেছি। এবার আমাদের স্টলে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ভালোবাসার বইয়ের মধ্যে রয়েছে, তোমাদের জন্য ভালোবাসা, ভালোবাসি তাই, যে প্রেমে বিরহ নেই। এসব বইয়ের সবগুলোই পাঠককে ভীষণ আকৃষ্ট করছে।’ কথা প্রকাশের মো. ইউনুস বলেন, ‘এদিনটি মূলত ভালোবাসার। তাই ভালোবাসার বই বিক্রি দিয়েই শুরু হয়েছে দিন। বিক্রির ৮০ শতাংশই ভালোবাসার বই চলছে। আজকের পর ভালোবাসর বইয়ের এত চাহিদা থাকবে না। অন্য বইয়ের চাহিদা সেসব দিনে বেশি থাকলেও ভালোবাসার বইয়ের দিন আজই। আমরাও এ জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রিও হচ্ছে।’ লেখক আহমেদ কাজল জানান, ‘আজকের দিনটি মূলত ভালোবাসার বই বিক্রির জন্যই। এদিন তরুণ তরুণীরা একে অন্যকে বই উপহার দেন। এ জন্য এ বিষয়ক বইয়ের বিক্রিটাও একটু বেশি থাকে। অন্যদিনগুলোতে এ সংশ্লিষ্ট বইয়ের বিক্রি তুলনামূলক কমই থাকবে।’ নতুন বই অমর একুশে গ্রন্থমেলার গতকাল ছিল ১৪তম দিন। মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪৭টি। এর মধ্যে গল্প ২৪টি, উপন্যাস ২৯টি, প্রবন্ধ ৬টি, কবিতা ৫০টি, গবেষণা ১টি, ছড়া ২টি, শিশুসাহিত্য ১টি, জীবনী ৬টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ২টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ১টি, ভ্রমণ ১টি, ইতিহাস বিষয়ক ৩টি, রাজনীতি ২টি, স্বাস্থ্য ১টি, ধমীর্য় ১টি, অনুবাদ ২টি, অভিধান ১টি, সায়েন্স ফিকশন ২টি এবং অন্যান্য ১০টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে পালর্ পাবলিকেশন্স থেকে মাহবুব জামিল পুলকের কাব্যগ্রন্থ ‘জলপরীর নিঃশ^াস, আগামী প্রকাশনী থেকে আবদুল গাফফার চৌধুরী’র প্রবন্ধ ‘বঙ্গবন্ধু আজ যদি বেঁচে থাকতেন’, সৈয়দ মিজানুর রহমানের ইতিহাস গ্রন্থ ‘নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ইতিহাসের অকাট্য দলিল’, উৎস প্রকাশন থেকে আহবাব চৌধুরী খোকনের নিবন্ধ ‘কালের ভাবনা’, কথা প্রকাশ থেকে সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘সময়ের ফুলে বিষপিঁপড়া’, অনন্যা থেকে উৎপল শুভ্রের ক্রিকেট বিষয়ক গ্রন্থ ‘শুধুই ক্রিকেট’। মূল মঞ্চের আয়োজন অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৪তম দিনে মেলার দ্বার উন্মোচিত হয় বেলা ৩টায় এবং শেষ হয় রাত ৯টায়। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ডিজিটাল বাংলাদেশে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও বিজ্ঞানভাবনা শীষর্ক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রেজাউর রহমান, আবদুল কাইয়ুম এবং অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। এছাড়াও সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন আকিমুন রহমান, আনিসুল হক, রাহাত মিনহাজ, মাহবুব ময়ুখ রিশাদ এবং চাণক্য বাড়ৈ। কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি আমিনুর রহমান সুলতান এবং সাকিরা পারভীন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ এবং মাহিদুল ইসলাম । সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী খুরশিদ আলম, সুজিত মোস্তফা, তানভীর সজীব আলম, মুশির্দুদ্দিন আহম্মদ, আঞ্জুমান আরা শিমুল, মো. রেজওয়ান আহমেদ। আজকের অনুষ্ঠানসূচি অমর একুশে গ্রন্থমেলার আজ ১৫তম দিন। এ দিন শুক্রবার থাকায় মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং শেষ হবে রাত ৯টায়। গ্রন্থমেলায় শিশুপ্রহর আজ মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পযর্ন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নিবার্চন সকাল ১০টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে শিশুকিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নিবার্চন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবতীর্: শ্রদ্ধাঞ্জলি শীষর্ক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মোহাম্মদ সাদিক, জাহিদ হায়দার এবং সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।