শ্যামলী টিবি হাসপাতাল

জনবল সংকটের দোহাইয়ে আইসিইউ ইউনিট বন্ধ

প্রতি ২ জন রোগীর বিপরীতে চিকিৎসকসহ একজন নাসের্র উপস্থিত থাকতে হয়। তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবলসহ ১০৬ জনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

জাহিদ হাসান
উদ্বোধনের ৪ মাসেও চালু হয়নি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শ্যামলী টিবি (টিউবারকোলোসিস) হাসপাতালের নিবিড় পরিচযার্ কেন্দ্র (আইসিইউ)। এতে চিকিৎসা নিতে আসা বিপুল সংখ্যক রোগীকে জরুরি প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভতির্ হতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিভাগটি পরিচালনার জন্য প্রয়োজানীয় সংখ্যক জনবল না থাকায় এ সমস্যা হচ্ছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় এলইডি মনিটরে আইসিইউ ডিপাটের্মন্ট অ্যান্ড এইচডিইউ লেখা রয়েছে। ভিতরে হাই ডিফেসিয়েন্সি ইউনিট (এইচডিইউ)তে সাতজন রোগীও ভতির্ আছে। কিন্তু পাশেই অবস্থিত আইসিইউ এর জন্য বরাদ্দকৃত দুইটি কক্ষ তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। একটি কক্ষে ৪টি ভেন্টিলেটর ও ৬টি ব্রঙ্কোসকপি মেশিন ছাড়া কিছুই নেই সেখান। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন গত বছরের অক্টোবর মাসে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আইসিইউ ও এইচডিইউ ইউনিটটির উদ্বোধন করেন। তবে জনবল নিয়োগ না দেয়ায় আইসিইউ’র বেডগুলো এইচডিইউতে নিয়ে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। ফলে অনেক রোগীর আইসিইউ সাপোটর্ প্রয়োজন হলেও অন্যোন্যপায় হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের রেফার করা হচ্ছে। বিষয়টি সম্পকের্ আইসিইউ বিভাগের দায়িত্বরত কনসালটেন্ট চিকিৎসক ডা. নিমর্ল কান্তি সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, বেডের অনুপাতে আইসিইউ ও এইচডিইউ ইউনিট পরিচালনা করতে অন্তত ৮ থেকে ১০ জন চিকিৎসক দরকার হলেও বিভাগটি দেখভালের জন্য একমাত্র চিকিৎসক হিসেবে তিনি ও কয়েকজন নাসর্ কাজ করছেন। যদিও আইসিইউতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসকসহ প্রতি ২ জন রোগীর বিপরীতে অন্তত একজন করে প্রশিক্ষিত নাসের্র সাবর্ক্ষণিক উপস্থিত থাকতে হয়। তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবলসহ ১০৬ জনের একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কবে বাস্তবায়ন হবে সেটা কতৃর্পক্ষ ভালো বলতে পারবেন। রোববার সারাদিন হাসপাতালে অবস্থান করে দেখা যায় প্রবেশমুখে ডিজিটাল ডিসপ্লে বোডের্ নানা ধরনের সেবার প্রচারণা চলছে। পঁাচতলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের নিচতলার বহিবির্ভাগে প্রায় শতাধিক আধুনিক চেয়ার পেতে এবং দেয়ালে এলইডি টেলিভিশন চালু করে রোগী ও অভিভাবকদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগত রোগীরা কোন কক্ষে কী সেবা পাবেন সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে তার বণর্না দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসক নাসর্ থেকে শুরু করে তৃতীয়-চতুথর্ শ্রেণির কমর্চারী পযর্ন্ত সবাই নিধাির্রত ইউনিফমর্ পরিধান করে দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু গুরুত্বর অসুস্থ রোগীদের জন্য প্রয়োজন আইসিইউ সাপোটর্ কাযর্ক্রমটিই বন্ধ রয়েছে। হাসপপাতালের সাজাির্র বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মানিউল হাসান বলেন, সাধারণত গুরুত্বর অসুস্থ ও অস্ত্রোপচার পরবতীর্ রোগীদের আইসিইউ প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) পরিচালনার জন্য তিনিই একমাত্র চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন। ওটিতে রোগীদের শরীরের য²ার জীবণু দূর করতে লিম্পনোট অস্ত্রোপচার ছাড়াও লসিকাগন্থি ও ফুসফুসের পানি অপসারণসহ প্রতিদিন গড়ে তিন-চারটি অস্ত্রোপচার হচ্ছে। বতর্মান পরিস্থিতিতে ওটির জন্য অন্তত ৪ জন মেডিকেল অফিসার, ৩ জন থোরাসিক সাজর্ন, ২ জন অ্যাসিসটেন্ট রেজিস্টার ও ৪ জন ওটিবয় প্রয়োজন। কিন্তু জনবলের অভাবে মেজর-অপারেশনের রোগীদের জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শতের্ আরেক চিকিৎসক জানান, আধুনিকতার চাদরে মুড়িয়ে অবকাঠামো গড়ে তুললেও আড়াইশ শয্যার হাসপাতালে ১৫০ বেড চালু আছে। প্রতিদিন বহিবির্ভাগে প্রায় ২৫০ ও জরুরি বিভাগে ১৫ থেকে ২০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এসব রোগীর সেবা দিতে ইমাজেির্ন্সতে রোস্টার সিস্টেমে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বøাড ট্রান্সফিউশন বিভাগ, সিটি স্ক্যান, এমআরআই মেশিন, ইসিজি যন্ত্র, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ও অন্যান্য গুরুত্বপূণর্ চিকিৎসা যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। আইসিইউ বন্ধের ব্যপারে হাসপাতালটির প্রকল্প পরিচালক ও উপ-পরিচালকের দায়িত্বে থাকা ডা. মো. আবু রায়হানের কাছে জানতে চাইলে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, মূলত জনবল ঘাটতির কারণেই আইসিইউ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ৩০ জনের মতো চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা কাযর্ক্রম চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল চেয়ে মোট ১০৬ জনের একটি চাহিদাপত্র দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নতুন মুখ আসায় একটু সময় লাগছে। তবে আইসিইউ ও এচডিইউয়ের জন্য কয়েকজনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনবল সংকট দূর হলে দ্রæত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।