হঠাৎ গরম নিত্যপণ্যের বাজার

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
রাজধানীর একটি সবজির দোকান Ñযাযাদি
রাজধানীর বাজারগুলোতে হঠাৎ করেই মাছ, মুরগি, পেঁয়াজসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকার বেশি। মুরগি ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে পঁাচ টাকা করে। আর বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫-১০ টাকা। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগঁাও বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। রামপুরা ও খিলগঁাও অঞ্চলের বাজারে ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ১৪০-১৪৫ টাকায়। অথার্ৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে পঁাচ টাকা। এ নিয়ে টানা তিন সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বাড়ল প্রায় ২৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়লেও অপরিবতির্ত রয়েছে লাল লেয়ার ও পাকিস্তানি কক মুরগির দাম। লাল লেয়ার মুরগি আগের সপ্তাহের মতোই বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২০৫ টাকায়। আর পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৮০ টাকা কেজি দরে। ব্রয়লার মুরগির দামের বিষয়ে খিলগঁাওয়ের ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, ‘এক মাসের বেশি সময় ধরে মুরগির দাম বাড়ছে। বাজারে মুরগির যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, সে হারে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণেই হয়তো দাম বাড়ছে।’ ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে মাছের বাজারে। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। এখন ১৫০ টাকা কেজি দরের নিচে কোনো মাছ মিলছে না। সস্তা মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙাশ বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৫০- ১৮০ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ আগে বিভিন্ন বাজারে এ মাছ ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। গত সপ্তাহে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া রুই ও মৃগেল মাছের দাম এক লাফে বেড়ে হয়েছে ২৬০-২৮০ টাকা। তবে বড় আকারের রুই মাছের দাম অপরিবতির্ত রয়েছে। বাজার ভেদে বড় রুই কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫৫০ টাকায়। পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৭০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫০-৬০০ টাকা। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে এ মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার মতো। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবতির্ত থাকা মাছের মধ্যে টেংরার কেজি আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬৫০ টাকায়। শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৬০০ টাকা কেজি। বোয়াল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৮০০ টাকা কেজি। চিতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৮০০ টাকা কেজি। রামপুরার মাছ ব্যবসায়ী সুবোল বলেন, ‘মাছের দাম শুধু আজ বাড়েনি। এক সপ্তাহ ধরেই বাড়তি। গত সপ্তাহে যে পাঙাশ মাছ ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি এখন তা আড়ত থেকেই কিনতে হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি। সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি করা রুই মাছ এখন ২৬০ টাকার নিচে বিক্রির উপায় নেই।’ তিনি বলেন, এবার বন্যা হয়নি আবার বৃষ্টিও কম হয়েছে। এ কারণে বাজারে কিছুটা হলেও মাছের সরবরাহ কমেছে। এ ছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে মুরগির দাম বেশ চড়া। আর গরুর মাংস তো ৫০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। এসব কারণেই মাছের দাম বেড়েছে। মাছ-মাংসের দাম বাড়ার প্রভাবে বেশ কিছুদিন অপরিবতির্ত থাকা পেঁয়াজ-মরিচের দামও কিছুটা বেড়েছে। নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২০-২৫ টাকা। আর কঁাচামরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। গত সপ্তাহে কিছু কিছু বাজারে বিক্রি হয় ১০ টাকায়। পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া বলেন, এবার পেঁয়াজের দাম বাড়েনি বরং নতুন পেঁয়াজ ওঠার পর পেঁয়াজের দাম বেশ কম ছিল। কিন্তু নতুন পেঁয়াজ আস্তে আস্তে মজুদে চলে যাচ্ছে এ কারণে দাম বাড়তে শুরু করেছে। সামনে দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এদিকে টমেটো, বেগুন, গাজর, মূলা, শালগম, শিম, নতুন আলু, ফুলকপি, বঁাধাকপি, লাল শাক, পালং শাকসহ সব রকম শাক-সবজিতে বাজার ভরপুর থাকলেও নতুন আলু ও টমেটো বাদে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। গত সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা কেজির মধ্যে বিক্রি হওয়া বেগুন, শালগম, মূলা, পেঁপে ও বিচিবিহীন শিম এখন ২০ টাকার নিচে মিলছে না। আর বিচিসহ শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০-৩০ টাকা। গত সপ্তাহে ১০-২০ পিস বিক্রি হাওয়া ফুলকপির দাম বেড়ে হয়েছে ১৫-৩০ টাকা। বাজারে নতুন আসা কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে চিচিঙ্গা ও করলা। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা পিস। আর ধুন্দুলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। তবে কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে শাক টমেটো ও নতুন আলু। আগের মতো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫-৩০ টাকা। আর নতুন আলু ১৫-২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাজীপাড়ার সবজি ব্যবসায়ী মিলন বলেন, কচুর লতি ও চিচিঙ্গা বাজারে নতুন এসেছে, এ কারণে দাম একটু বেশি। এ ছাড়া শীতের সবজির সরবরাহ আস্তে আস্তে কমতে কমছে, যে কারণে কিছুটা দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।