গত বছর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কমেছে

সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দাবি

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
শুক্রবার ঢাকা রিপোটার্সর্ ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত Ñযাযাদি
হত্যা, গণধষর্ণ, মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো অপরাধসহ বিভিন্ন ধরনের নিযার্তন দেশের ধমীর্য় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা কমেছে। গত তিন বছরের তুলনায় গত বছরে এ হার কম ছিল। ২০১৮ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৮০৬টি, যা ২০১৬ সালে ছিল ১ হাজার ৪৭১টি। শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোটার্সর্ ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠন করেন। তিনি বলেন, গত সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে এক সংবাদ সম্মেলনে আমরা বলেছিলাম ‘নিবার্চন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই এ দেশের ধমীর্য়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনমনে শঙ্কা, উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা বাড়ছে। কেননা ৯০ পরবতীর্ স্থানীয় ও জাতীয় নিবার্চনগুলো কখনই এদের কাছে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসেনি।’ রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা বলতে চাই, নিবার্চন কমিশন, নিবার্চনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসনীয় ভূমিকায় এবারের নিবার্চনের আগে ও পরে সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি ঘটেনি।’ ফেনীর সোনাগাজী, ঠাকুরগঁাওয় সদর, রাঙামাটির লংগদু, বাঘাইছড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে তিনি বিচ্ছিন্ন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৮ সালে সংখ্যালঘু এ দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০১৬ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ছিল ১ হাজার ৪৭১টি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৪টি আর গত বছরের ডিসেম্বর পযর্ন্ত মোট ঘটনা এসে দঁাড়িয়েছে ৮০৬-এ। গত বছরে ঘটে যাওয়া ঘটনার মধ্যে ৯০ জন হত্যার শিকার হয়েছেন, মরদেহ উদ্ধার হয়েছে ১৫ জনের (প্রাথমিকভাবে হত্যাকাÐ বলে প্রতীয়মান), কথিত ধমর্ অবমাননার অভিযোগে শাস্তির ঘটনা ১০টি, ৩৯টি অপহরণ, ধষের্ণর ঘটনা ৩২টি, গণধষের্ণর ঘটনা ১৬টি, ধষর্ণ চেষ্টা ১৪টি, প্রতিমা ভাঙচুর ১৬৯টি, শ্মশান, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধমীর্য় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি দখল ২১টি, ধমীর্য় প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ৫৮, দেশত্যাগের হুমকির ঘটনা ১১৫টিসহ নানা নিযার্তনে গত বছরের ডিসেম্বর পযর্ন্ত ৮০৬টি নিযার্তনের ঘটনা ঘটেছে। দেশের ধমীর্য় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিযার্তন নিপীড়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান। রানা দাশগুপ্ত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, গণমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নিজস্ব তথ্যসূত্রের আলোকে গত তিন বছরের সংখ্যালঘুদের ওপর ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তার ইশতেহারে প্রথমবারের মতো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ও মাদক নিমূের্লর পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও জিরো টলারেন্স অঙ্গীকার করেছে। আমরা বাস্তবে এর প্রতিফলন চাই।’ গত সংসদ নিবার্চনে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বারবার নিবার্চন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে অনেক সমালোচনা করা হয়েছে, নিবার্চনের ফলাফল তারা মেনে নেয়নি। তবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলছে যে নিবার্চন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। এর কারণ কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমরা নিবার্চনের ফল নিয়ে কোনো বক্তব্য দেইনি। এটি আমাদের কাজ নয়। সেটি নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করব না। আমরা শুধু বলতে চেয়েছি, নিবার্চনের আগে ও পর ধমীর্য় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যে নিযার্তনের শিকার হন এবারের নিবার্চনের পরে সেটি হয়নি। এ জন্য নিবার্চন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সকল রাজনৈতিক দলের ভূমিকার প্রশংসা করছি। এবারের নিবার্চনে কোনো দল ধমের্ক ব্যবহার করে প্রচার করেনি জানিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, এটি অত্যন্ত ভালো দিক। সে কারণে রাজনৈতিক দলগুলো প্রশংসার দাবিদার। তবে নিবার্চনের ফল নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। এ সময় তিনি রাষ্ট্রধমর্ বিলোপের দাবি জানান। রাষ্ট্রধমর্ রেখে সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না বলেও তিনি মত দেন। সংবাদ সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার। আরও বক্তব্য দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক।