শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় বিদায় নিলেন কবি আল মাহমুদ

আজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্রামের বাড়িতে দাফন

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
কবি আল মাহমুদের মরদেহ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আনা হলে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানায় Ñযাযাদি
শ্রদ্ধা ভালোবাসায় বিদায় নিলেন সোনালি কাবিনের কবি আল মাহমুদ। শনিবার দুপুর পৌনে ১২টায় কবির মরদেহ বাংলা একাডেমিতে নেয়া হয়। সেখানে একাডেমির মহাপরিচালকসহ সবর্স্তরের মানুষ তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে। সেখানেও সবাই শ্রদ্ধা জানান এবং প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। এখানেও তার জানাজা হয়। আজ বাদ জোহর জানাজা শেষে কবির মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোরাইল গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। তবে কবির পরিবারের পক্ষ থেকে আল মাহমুদকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে, আর সেটি সম্ভব না হলে তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে দাফন করাতে চেয়েছিল। আল মাহমুদ গত শনিবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর ধানমÐির ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হয়। পঁাচ দিন নিবিড় পরিচযাের্কন্দ্রে থাকার পর শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তার অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলে চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোটর্ দেন। শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ইবনে সিনার নিউরোমেডিসিনের অধ্যাপক আবদুল হাই বলেন, ‘কবির ডিমেনশিয়া ও নিউমোনিয়া ছিল। নিউমোনিয়া বেড়ে গিয়েছিল। শেষের দিকে নতুন একটি সমস্যা যুক্ত হয়েছিল। তার রক্তচাপ কমে যাচ্ছিল। ওষুধ দিয়ে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল। শুক্রবার দুপুরে ওই ওষুধের মাত্রাটা বাড়িয়ে দিতে হয়। তখনই বুঝেছিলাম অবস্থা ভালো নয়। সন্ধ্যার পর তার কাডির্য়াক অ্যারেস্ট হয়। সে সময়ই তিনি ক্লিনিক্যালি মারা যান।’ আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। তার বাবা মীর আবদুর রব ও মা রওশন আরা মীর। তার দাদা আবদুল ওহাব মোল্লা ব্রিটিশ ভারত শাসনামলে হবিগঞ্জ জেলায় জমিদার ছিলেন। আল মাহমুদ কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাইস্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুÐ হাইস্কুলে পড়ালেখা করেন। স্কুলজীবনেই শুরু হয় তার লেখালেখি। আধুনিক বাংলা কবিতার শহরমুখী প্রবণতার মধ্যেই ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ আবহ, নদীনিভর্র জনপদ, চরাঞ্চলের জীবনপ্রবাহ এবং নর-নারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহকে তিনি কবিতায় অবলম্বন করেন। আধুনিক বাংলা ভাষার প্রচলিত কাঠামোর মধ্যে স্বাভাবিক স্বতঃস্ফ‚তর্তায় আঞ্চলিক শব্দের প্রয়োগ তার অনন্য কীতির্। তার জাদুস্পশের্ সৃষ্টি হয়েছে অনন্য পঙ্?ক্তিমালা। যে মৃত্যু তাকে নিয়ে গেল, সেই মৃত্যু নিয়ে ‘সোনালি কাবিন’-এ লিখে গেছেন অসামান্য কবিতার চরণ : “প্রেম কবে নিয়েছিল ধমর্ কিংবা সংঘের শরণ/ মরণের পরে শুধু ফিরে আসে কবরের ঘাস/ যতক্ষণ ধরো এই তাম্রবণর্ অঙ্গের গড়ন/ তারপর কিছু নেই, তারপর হাসে ইতিহাস।” আল মাহমুদ ঢাকায় আসেন ১৯৫৪ সালে। সে সময় সমকালীন বাংলা সাপ্তাহিকগুলোয় লিখতে শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রæফরিডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে সাপ্তাহিক কাফেলার সম্পাদক হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর আল মাহমুদ দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। সম্পাদক থাকাকালে সরকারের বিরুদ্ধে লেখার কারণে একবছরের জন্য কারাবরণ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক হিসেবে চাকরি দেন। দীঘির্দন দায়িত্ব পালনের পর তিনি বিভাগটির পরিচালক হন। পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে সেখান থেকে তিনি অবসরে যান। আল মাহমুদের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘লোক লোকান্তর’, ‘কালের কলস’, ‘সোনালি কাবিন’, ‘মায়াবী পদার্ দুলে ওঠো’, ‘আরব্য রজনীর রাজহঁাস’, ‘অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না’, ‘দিনযাপন, দ্বিতীয় ভাঙন’, ‘নদীর ভেতরের নদী’। আল মাহমুদ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, জয় বাংলা পুরস্কার, হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার, কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বণর্পদক, ভানুসিংহ সম্মাননা পদক ও লালন পুরস্কার পেয়েছেন। আল মাহমুদ তিন মেয়ে, পঁাচ ছেলে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।