শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ৭ বছর আজ
প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
হাওড়াঞ্চল প্রতিনিধি
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগায় জঙ্গি হামলার সাত বছর পূর্ণ হলো আজ। সেদিনের স্মৃতি মনে হলে আজও এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়। সেই হামলায় দুই পুলিশ সদস্য, এক গৃহবধূ ও এক জঙ্গির মৃতু্য হয়েছিল। গ্রেপ্তার হয়েছিল দুইজন। তবে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তেমন অগ্রগতি নেই। সব আসামিকে আদালতে হাজির করতে না পারার কারণে এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী আবু নাসের মো. ফারুক সঞ্জু।
২০১৬ সালের ঈদুল ফিতর ছিল ৭ জুলাই। সেদিন সকাল ১০টায় শোলাকিয়ার জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন সকাল পৌনে ৯টার দিকে শোলাকিয়া যাওয়ার পথে ঈদগাহের উত্তর-পশ্চিম কোণে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে পুলিশের চেকপোস্টে বাধা পায়। এ সময় তারা হ্যান্ড গ্রেনেড চার্জ করে দুই পুলিশ কনস্টেবল আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলামের ওপর চাপাতি দিয়ে হামলা করে। এতে দুইজন গুরুতর জখম হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান। এ ছাড়া পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের সময় জঙ্গিদের একটি গুলি বাসার জানালা ভেদ করে গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিকের মাথায় বিঁধলে তিনি ঘরের ভেতরই মারা যান। এ ছাড়া পুলিশের গুলিতে আবির রহমান-(২৩) নামে এক জঙ্গিও নিহত হন। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হয়েছিলেন অপর জঙ্গি মাদ্রাসা ছাত্র শফিউল ইসলাম (২২)। এলাকার একটি বাসায় লুকিয়ে থাকা অবস্থায় আটক হন শহরের পশ্চিম তারাপাশা এলাকার জাহিদুল হক তানিম-(৩১) নামে এক যুবক। সেদিনের বন্দুকযুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানার বর্তমান ওসি মুর্শেদ জামানসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এর জন্য তাদের পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে পদকও দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার তিন দিন পর ১০ জুলাই সদর থানায় এ ঘটনায় মামলা হয়েছিল। চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন পাকুন্দিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সামছুদ্দিন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০২৩) এর ৬(২)/৮/৮/১০/১২/১৩ ধারায় মামলাটি করেছিলেন। তখন আসামি করা হয়েছিল শফিউল ইসলাম ও জাহিদুল হক তানিমকে। শফিউল ইসলামও পরে বন্দুকযুদ্ধে ময়মনসিংহের নান্দাইলে মারা গিয়েছিলেন। কিশোরগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরিফুর রহমান ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন। এতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু আসামিদের মধ্যে ১৯ জন বিভিন্ন সময় বন্দুকযুদ্ধে মারা গেলে এখন পাঁচজন বিভিন্ন কারাগারে আছেন। এই পাঁচজন হলেন- গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধী-(৩৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের বড় মিজান-(৬৬), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সোহেল মাহফুজ-(৩৯), জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা গাইবান্ধার আনোয়ার হোসেন-(৫২) ও কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম তারাপাশা এলাকার জাহিদুল হক তানিম-(৩১)। ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর স্পেশাল ট্রাইবু্যনালের তৎকালীন বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম আসামিদের উপস্থিতিতে মামলার অভিযোগ গঠন করেছিলেন।
শোলাকিয়ার মামলাটি বর্তমানে কিশোরগঞ্জের সন্ত্রাস দমন ট্রাইবু্যনালে বিচারাধীন আছে। বিচারকের দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক। সরকারি আইনজীবী জানান, গত ৬ জুন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের একটি তারিখ ছিল। সেদিন ১৭ জন সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু চার আসামিকে এদিন হাজির করা হলেও আনোয়ার হোসেন রাজশাহী কারাগারে থাকায় সেদিন সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি। আগামী ২৫ জুলাই পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য আছে। তিনি এই মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে বলে মনে করছেন।
ঘটনার সময় ঝর্ণা ভৌমিকের ছোট ছেলে শুভদেব আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। এখন শহরের সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আর বড় ছেলে বাসুদেব প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংকে চাকরি পেয়েছেন বলে তার বাবা গৌরাঙ্গ নাথ ভৌমিক জানিয়েছেন। বাসুদেব এখন মাওয়া শাখায় কর্মরত। পরিবারের সদস্যরাও জঙ্গিদের সর্বোচ্চ সাজা দেখতে চান।
\হ