অত্যন্ত যানজট: রাতারাতি ভাড়া বাড়াল মধুমতি

নিয়মিত এক যাত্রী জানান, কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। প্রায়ই অতিরিক্ত ভাড়াকে কেন্দ্র করে হেলপার বাস থেকে নেমে যেতে বলেন

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মিরপুর-১ অথবা চিড়িয়াখানা থেকে মহাখালী-গুলশান-১ পর্যন্ত ভাড়া ছিল ২০ টাকা। তবে যানজট বৃদ্ধির অজুহাতে কোনো নিয়মনীতি না মেনেই নিজ উদ্যোগে ৫ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে মধুমতি পরিবহন। বাস কর্তৃপক্ষ নিজেই এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করে তার কপি বাসে ঝুলিয়েছে। তবে পরিবহনটির সূত্র বলছে, সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীরা বিনা ভাড়ায় চলাচল করে বলে ভাড়া সমন্বয়ের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। মধুমতি পরিবহনের এই বাসটি মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে মহাখালী, গুলশান, বাড্ডা লিংক রোড, বনশ্রী হয়ে মেরাদিয়া রুটে চলাচল করে। এই রুটের কয়েকজন বাসটির অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। বিআরটিএ'তে যোগাযোগ করে দেখা গেছে, ঢাকার কোনো রুটেই নতুন করে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুলস্নাহ বলেন, 'ভাড়া বৃদ্ধির কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা কেন অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে এ বিষয়ে তাদের তলব করে কারণ জানতে চাওয়া হবে।' এই বাসের একজন নিয়মিত যাত্রী জানান, কোনো কারণ ছাড়াই বাসে একটি ভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ সাঁটিয়ে ৫ টাকা বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বিআরটিএ কিংবা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘোষণা ছাড়াই তারা এই ভাড়া নিচ্ছে। কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। প্রায়ই অতিরিক্ত ভাড়াকে কেন্দ্র করে হেলপার যাত্রী বাস থেকে নেমে যেতে বলেন। অথচ এই রুটে অন্যান্য বাসগুলোর ভাড়া ২০ টাকা। সোমবার বাসটিতে চড়ে দেখা গেল এর সামনের কাঁচে সাঁটানো নোটিশে লেখা, 'মধুমতি পরিবহনের সম্মানিত যাত্রী সাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, রাস্তায় অত্যান্ত (অত্যন্ত) যানজটের কারণে আমাদের পরিবহনের যাত্রী ভাড়া শুধু চিড়িয়াখানা/মিরপুর-১ থেকে মহাখালী/গুলশান-১ পর্যন্ত ২০ টাকার পরিবর্তে ২৫ টাকা এবং আসার পথে গুলশান-১/ মহাখালী থেকে শুধু মিরপুর-১/চিড়িয়াখানা পর্যন্ত ২৫ টাকা ধার্য করা হলো যা ১৫-০২-১৯ইং রোজ শুক্রবার থেকে কার্যকর হইবে। এই ব্যাপারে যাত্রীসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।' নিচে তিনটি ফোন নম্বরও দিয়েছে পরিবহনটি। এর একটিতে ফোন করলে নিজেকে মধুমতি পরিবহনের প্রতিনিধি বলে পরিচয় দেন খোকা নামের একজন। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ভাড়া বাড়াইনি, আমাদের পূর্বের ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। বাসটা মাঝে কয়েকদিন বন্ধ ছিল। পুনরায় চালু হওয়ার পর আমরা ভাড়া ৫ টাকা কমিয়ে ২০ টাকায় এনেছিলাম। এখন আবার আগের ভাড়া ২৫ টাকা করেছি। এভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি ছাড়া যানজটের অজুহাতে ভাড়া বাড়ানোর কোনো নিয়ম আছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিআরটিএ'র কিলো অনুযায়ী ভাড়াটা আছে কি না সেটা দেখেন। পরবর্তীতে তিনি এই প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে বলেন, 'আমাদের এই রুটে প্রচুর যাত্রী আছে যারা ছাত্র না হলেও নিজেকে ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। বাংলা কলেজের (সরকারি বাংলা কলেজ, মিরপুর) ছাত্ররা আমাদের অনেক নির্যাতন করে। বাংলা কলেজের অনেক ছাত্র আছে যারা এক টাকাও ভাড়া দেয় না। রাস্তায় 'গেঞ্জাম' করে। তাদের সঙ্গে সবসময় পারা যায় না। আপনারা এইসব প্রচার করলে আমরা এসব থেকে নিস্তার পাই। ছাত্রদের চাপ বেশি থাকায় ২৫ টাকার কম নিতে পারি না। তারপরেও যদি ছাত্রদের যন্ত্রণা না থাকতো তাহলে ভাড়া বাড়াতাম না।' মধুমতি পরিবহনের বাসগুলো মধুমতি এন্টারপ্রাইজের অর্থায়নে নামানো হয়েছে। বাসটি ২০১৬ সাল থেকে এই রুটে চলাচল করলেও ২ বার নানা কারণে এটি বন্ধ ছিল। ৫ মাস ধরে বাসটি আবারওনিয়মিত চলাচল করছে।