আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক শক্তি নয়: ফখরুল

নেতাকর্মীদের ক্ষোভ, কর্মসূচি দেয়ার দাবি

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -যাযাদি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি, এরা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে তারা প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি নয়। বুধবার বিকালে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপি আয়োজিত 'একুশে ফেব্রম্নয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে' এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, 'কখনো মনের জোর ও মনোবল হারিয়ে ফেলবেন না। দুর্বল ও হতাশ হবেন না। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে।' তিনি নেতা-কর্মীদের বলেন, 'এ কথা কেন ভাবছেন যে আপনারা পরাজিত হয়েছেন? আমরা লড়াই করব, সেই লড়াইয়ে অবশ্যই আমরা বিজয়ী হব। বাংলাদেশের মানুষ বিজয়ী হবেই হবে।' আন্দোলনের কথা উলেস্নখ করে ফখরুল ইসলাম বলেন, 'এই সংগ্রামে আমাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। তাই আসুন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করি।' তিনি অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার দাবি জানান। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের অবশ্যই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। আর আমরা দীর্ঘকাল ধরে লড়াই করছি। এই লড়াইকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।' অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, 'গত ৩০ ডিসেম্বর দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। তারা ভোট চুরি করে রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করছেন। আজকে আমাদের করণীয় কী? জনপ্রিয়তাই যথেষ্ট নয়। আমাদের বিশাল জনপ্রিয়তা, কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। কারণ প্রমাণ হয়েছে, সংগঠন ছাড়া জনপ্রিয়তা কিছু নয়। যারা মার খেয়েছে, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছে, তাদের সুযোগ দিতে হবে।' বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'এক বছর হলো, কিন্তু আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারিনি। আমাদের অনেক সমর্থন ও অনেক নেতা আছেন, এরপরও খালেদা জিয়া মুক্ত হচ্ছেন না। সবাই মিলে একসঙ্গে নামলে বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্ত করা অবশ্যই সম্ভব।' দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, 'দেশের প্রাণশক্তি হচ্ছে ছাত্ররা। আর বিএনপির প্রাণশক্তি হচ্ছে ছাত্রদল। ছাত্ররা এগিয়ে আসুন, আমরা রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করব।' নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন নেতা-কর্মীরা বলেন, কর্মসূচি দেন। পরে মির্জা ফখরুল ইসলাম নেতাকর্মীদের বলেন, 'দাঁড়ান, দাঁড়ান। চাইলেই কর্মসূচি দেয়া যায় না। কর্মসূচি পালন করতে হবে।' নেতাকর্মীরা তখন বলেন, 'হয় কর্মসূচি দেন, না হয় বিএনপি ভেঙে দেন।' পরে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আপনাদের যে ক্ষোভ ও ব্যথা, এটা আমরা বুঝি। কিন্তু আপনাদের বুঝতে হবে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যখন গণতান্ত্রিক শক্তি লড়াই করে, তখন অতি সহজে সফলতা অর্জন করা যায় না। কেন বলছেন আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন? আপনারা ব্যর্থ হননি। আজকে আপনারা বিজয়ী হয়েছেন। দেশ ও বিশ্বের কাছে প্রকাশ হয়েছে, এটা "ফ্যাসিবাদী" শক্তি।' এর আগে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্য চলাকালে দর্শক সারিতে বসা হঠাৎ করেই এক কর্মী বলে ওঠেন 'খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই'। এ সময় ডায়াসে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে থাকা মওদুদ বলেন কী? তখন আরেক কর্মী বলেন, কর্মসূচি নাই কেন? হল খালি কেন? নেতাকর্মীরা আসেনি কেন? এরপর বেশকিছু নেতাকর্মী স্স্নোগান দিতে থাকেন। ফলে ব্যারিস্টার মওদুদের বক্তব্য বাধাগ্রস্ত হয়। পরে নেতাকর্মীদের স্স্নোগান থামলে মওদুদ তার অবশিষ্ট বক্তব্য দেন। মির্জা ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুলস্নাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।