'ও এত আদরের ছিল... এত আদরের'

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বাবা আর চাচাদের খুব আদরের ছিল তিন বছরের আরাফাত। মাকে বাসায় রেখে প্রায়ই বাপ-চাচাদের দোকানে এসে বসে থাকত সে। বাবা মোহাম্মদ আলী আর এক চাচা অপু রায়হানের সঙ্গে বুধবার আগুনে পুড়ে লাশ হয়েছে আরাফাতও। বুধবার রাতে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে প্রাণে বেঁচে গেছেন আরাফাতের আরেক চাচা দীপু হোসেন। ভাতিজা আর দুই ভাইকে রেখে আগুন লাগার ঠিক আগেই দোকান থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। চকবাজার চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদ মার্কেটের নিচতলায় গামছা-তোয়ালে-তসবিহসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের দোকান ছিল পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জের বাসিন্দা দীপুদের। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে ভাই-ভাতিজার লাশ নিতে এসে দীপু বলেন, 'আমাকে বলছিল, 'চাচ্চু তোমাকে কিস করি?' আমি বলছি করো। ভাইস্তা আমার অল্প অল্প কথা বলা শিখছিল।' 'ও এত আদরের, ওরে ছাড়া বাঁচমু কেমনে.... নিজে বেঁচে ফিরলেও ভাতিজা-ভাইদের সঙ্গে শেষবার হওয়া কথাগুলো দীপুর মাথায় ঘুরছে; আগুনের তীব্রতায় দৌড়ে পালাতে হয়েছিল তাকে। দীপু বলেন, 'দোকান বন্ধ করে দেয়ার সময় তহন। আমি ভাইকে বললাম, বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাইতাছি, তোমরা বন্ধ করে আসো। দোকান থেকে মাত্র ৪০ কদম দূরে আসছি, তখনই বিস্ফোরণের শব্দ। দাউদাউ করে আগুন জ্বইল্যা উঠল। আরেকটু হলে আমিও মরতে পারতাম!' বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুড়িহাট্টার ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের চারতলা ভবনে প্রথমে আগুন লাগে, এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে পাশের একটি, পেছনের একটি এবং সরু গলির বিপরীত পাশের দুটি ভবনে। ঠিক কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল তা স্পষ্ট না হলেও এসব ভবনে বিভিন্ন দোকানের পাশাপাশি রাসায়নিক, পস্নাস্টিক ও প্রসাধন সামগ্রীর গুদামের কারণে আগুন সর্বগ্রাসী রূপ পেয়েছে বলে অনেকের মত মনে করছেন দীপুও। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেয়া হলেও পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম না সরায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দুই ভাই আর ভাতিজার লাশের খোঁজে এসে মর্গের সামনে কয়েক ঘণ্টা ধরে বিলাপ করতে থাকেন দীপুর বোন মোসাম্মৎ জরিনা। স্বজনরা সান্ত্বনা দিয়ে থামাতে পারছিলেন না তার আহাজারি। তিনি বারবার বলছিলেন, 'আলস্নাহ তোমার এ কেমুন বিচার...একলগে তিনজনরে নিয়া গেলা...!'