রাজধানীর রাস্তায় এলোপাথাড়ি গুলি

জ্ঞান ফেরেনি ভুবনের

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে ভুবন চন্দ্র শীল
রাজধানী ঢাকার রাস্তায় মোটর সাইকেলে করে যাওয়ার পথে মাথায় গুলিবিদ্ধ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইনি পরামর্শক ভুবন চন্দ্র শীলের (৫২) জ্ঞান ফেরেনি তিন দিনেও। তিনি ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কবে নাগাদ ভুবনের জ্ঞান ফিরতে পারে সে বিষয়ে চিকিৎসকরা কোনো ধারণা দিতে পারছেন না। এদিকে তার অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচের জোগান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে তেজগাঁও শিল্প এলাকার বিজি প্রেসের সামনের রাস্তায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ ওরফে মামুনের প্রাইভেট কার লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে একদল সন্ত্রাসী। সেই সময় ওই পথ দিয়ে মোটর সাইকেলে করে আরামবাগে নিজের বাসার পথে থাকা ভুবন মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তখন ভুবনকে প্রথমে শমরিতা হাসপাতালে পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত দেড়টার দিকে ভুবনকে পপুলার হাসপাতালে স্থানান্তর করেন স্বজনরা। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে পপুলার হাসপাতালের আইসিইউতে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, 'ভুবন এখনো লাইফ সাপোর্টে আছেন। তার জ্ঞান ফেরেনি। আজ (বৃহস্পতিবার) পুনরায় তার সিটি স্ক্যান করানো হয়েছে। এর প্রতিবেদন পাওয়া গেলে তার মস্তিষ্কের অবস্থা জানা যাবে। তারপর তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা যাবে কি না, সে বিষয়ে একজন নিউরো সার্জনের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুমূর্ষু স্বামীর চিকিৎসা কতদিন চালাতে পারবেন তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন ভুবন চন্দ্র শীলের স্ত্রী রত্মা রানী শীল। তিনি জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। তার স্বামীকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হলে যে অর্থ খরচ করতে হবে সে সামর্থ্য তাদের নেই। অর্থাভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে এ আশঙ্কায় রত্মা শীল চোখে অন্ধকার দেখছেন। রত্মা শীল আক্ষেপ করে বলেন, দেশের সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। অথচ তার নিরাপরাধ স্বামী প্রকাশ্য রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হলেও প্রশাসনিকভাবে তারা কোনো ধরনের সহায়তা পাননি। এমনকি কেউ সামান্য খোঁজটুকুও নেয়নি। পুলিশ তার সঙ্গে শুধু মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ করেছে। ভুবন গোমতী টেক্সটাইল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের আইনি পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন। গুলশানে তার কার্যালয়। তার স্ত্রী-সন্তান থাকেন নোয়াখালীতে। আরামবাগে একটি বাসায় থাকেন ভুবন চন্দ্র শীল। ওই রাতে গুলশানের কার্যালয় থেকে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া সন্ত্রাসীদের কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে তাদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দাবি, শিগগিরই তারা গোয়েন্দা জালে ধরা পড়বে। গোয়েন্দারা জানান, কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন কারাগারে বসে মামুনকে হত্যার ছক তৈরি করে। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী তার ৮ ক্যাডার এ হামলায় অংশ নেয়। হামলাকারীদের অন্তত চারজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। বাকিরা ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। হামলার সময় মামুন যাতে কোনোভাবে জীবিত অবস্থায় পালিয়ে যেতে না পারে এজন্য হয়তো তারা দুই ধরনের অস্ত্র নিয়ে এ মিশনে নেমেছিল। জানা গেছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও মামুন এক সময় ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার আতঙ্ক ছিলেন। তাদের গড়ে তোলা বাহিনীর নাম ছিল 'ইমন-মামুন' বাহিনী। তারা দুজনই চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি। ইমন এখনো কারাগারে। মামুন কারাগারে থাকা অবস্থাতেই দুজনের বিরোধ দেখা দেয়। ওই বিরোধের জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করছে গোয়েন্দারা। ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ইমন জেলে মামুনকে হুমকি দিয়েছিলেন। সন্ত্রাসী ইমনের লোকজন মামুনের ওপর হামলা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তে সবকিছুই বেরিয়ে আসবে।