পিকে হালদারের কুমির খামার

আলোচিত 'রেপটাইলস ফার্ম' নিলামে বিক্রি হতে চলেছে

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সফিউলস্নাহ আনসারী, ভালুকা (ময়মনসিংহ)
নিলামে বিক্রি হতে চলেছে ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত বহুল আলোচিত পিকে হালদারের কুমির খামার 'রেপটাইলস ফার্ম'। নিলামে সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৩৮ কোটি টাকা। হাইকোর্টের অনুমোদন পেলে ৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করে খামারটি বুঝে নিতে চায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উদ্দীপন। জানা যায়, পিকে হালদারের ঋণের বোঝা এবং মালিকানা দ্বন্দ্বের কারণে ২০১৯ সাল থেকেই ধুঁকে ধুঁকে চলছিল ময়মনসিংহের ভালুকায় গড়ে ওঠা দেশের প্রথম রেপটাইলস কুমির খামার। প্রতিষ্ঠার শুরুতে রেপটাইলস কুমির ফার্মের ৩৬ শতাংশ শেয়ার ছিল মেজবাহুল হকের, যিনি সম্পর্কে মুশতাক আহমেদের মামা। আর ১৫ শতাংশ শেয়ার ছিল মুশতাক আহমেদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ প্রকল্পের আওতায় ঋণ নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৪৯ শতাংশ। সেই হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি ব্যাংক কর্মকর্তা প্রীতিশ কুমার সরকার ছিলেন পরিচালক। কুমিরের খাবার, প্রজনন ও পরিচর্যার কাজে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন পড়ে। তখনই মেজবাহুল হক ও মুশতাক আহমেদের মধ্যে মতপার্থক্য বাড়তে থাকে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময় প্রীতিশ কুমার সরকারের পক্ষ থেকে মুশতাক আহমেদকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, '৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের শেয়ার কিনে নেওয়ার জন্য টাকা জমা দিতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৯ শতাংশ শেয়ারের পুরোটাই মেজবাহুল হকের নামে হস্তান্তর করা হবে।' তখনই প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের সঙ্গে প্রীতিশ কুমার সরকারই মেজবাহুল হক ও মুশতাক আহমেদের যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন। একপর্যায়ে ২০১২ সালে খামারের শেয়ার ছাড়তে বাধ্য হন কুমির খামারের স্বপ্নদ্রষ্টা লেখক মুশতাক আহমেদ। পরে ওই খামার সম্প্রসারণ করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড থেকে ৫৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেন পিকে হালদার। জামানত হিসাবে ফার্মের জমি ব্যবহার করা হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ফার্মের নামে ঋণ বাড়ানো হয়। ওই টাকা নিয়ে খামারে ব্যয় না করে বিদেশে পালিয়ে যান পিকে হালদার। পরে দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধ না করায় বাধ্য হয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের আবেদন বিবেচনা করে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে হাইকোর্ট। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হককে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিযুক্ত করা হয়। ২০০৪ সালে মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা ৭৫টি কুমির নিয়ে যাত্রা শুরুর পর দুই দশকের ব্যবধানে খামারে কুমিরের সংখ্যা এখন ৩ হাজার ৭০০। খামারের ব্যবস্থাপক ডা. আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ জানান, এ পর্যন্ত এক হাজার ৫০৭টি কুমিরের চামড়া জাপানে রপ্তানি করা হয়েছে। প্রতিটি কুমিরের চামড়ার আন্তর্জাতিক বিক্রয়মূল্য ৫০০-৬০০ ডলার। কুমিরের চামড়া ব্যাগ, বেল্ট, জুতা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এর দাঁতে তৈরি হয় গয়না, হাড় থেকে সুগন্ধি। কুমিরের পেটের দিকের চামড়া প্রতি সেন্টিমিটারের দাম ১৫ ডলার। কেজি প্রতি মাংস ৪০-৫০ ডলারে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বন বিভাগের অনুমোদন পেলে খুব শিগগিরই কুমিরের চামড়ার পাশাপাশি মাংস, হাড়, দাঁত বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হক জানান, খামার বিক্রির টাকায় পরিশোধ করা হবে পিকে হালদারের ঋণ। চলতি বছরের শুরুতে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত পরিচালনা পর্ষদে আমাকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করেন। তখন এই কুমির খামারের মূল্য ধরা হয়েছিল মাত্র পাঁচ কোটি টাকা। মাত্র আট মাসের ব্যবধানে এই পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে খামারটি এখন উন্নতির দিকে। দায়িত্ব নেওয়ার পর কুমিরের খাবার জোগান দিতে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে টিকিটের বিনিময় দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এনাম হক আরও জানান, খেলাপী ঋণ পরিশোধে নিলামে তোলা হয় খামারটি। সর্বোচ্চ দাম ওঠে ৩৮ কোটি টাকা। খামারটি কিনতে আগ্রহী উদ্দীপন নামক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। হাইকোর্টের নির্দেশে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।