হারিয়ে যাওয়া মাকে সন্তানের কাছে ফিরিয়ে দিল পুলিশ

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
হারিয়ে যাওয়া মা ইয়াসমিনের সঙ্গে মেয়ে ঊমি -যাযাদি
ছয় দিন আগে হারিয়ে যান ইয়াসমিন (৪০) নামে দুই সন্তানের এক জননী। ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় একটি জিডিও হয়। আর জিডির সূত্র ধরে 'দিগ্‌ভ্রান্ত' ওই নারীকে তার সন্তানদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। তাতে বেশ বাহবাও পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি। শুক্রবার বিকেলের দিকে যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজহারুল ইসলাম ইয়াসমিনের রামপুরার বাসায় এসে সন্তান রাজিয়া সুলতানা ঊর্মির (২০) কাছে তার মাকে বুঝিয়ে দেন। এ বিষয়ে এসআই আজহারুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাত দেড়টা নাগাদ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে লোকজন ইয়াসমিনকে যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে আসেন। ইয়াসমিন গুছিয়ে কোনো কথাই বলতে পারছিলেন না। থানায় আনার পর তাকে সেবা দেয়া হয়। খাওয়াদাওয়াসহ রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তিনি আরও জানান, শুক্রবার সকালে তাদের নারী পুলিশ সদস্যরা কথা বলে জানতে পারে তার বাসা আবুল হোটেল এলাকায়। পরে তারা ইয়াসমিনকে নিয়ে মালিবাগ আবুল হোটেলের দিকে আসেন। সেখানে লোকজনের কাছে জানতে পারেন কিছুদিন আগে রামপুরায় এক নারীর নিখোঁজ সংক্রান্ত মাইকিং করা হয়েছিল। পরে খোঁজ নেয়া হয় রামপুরা থানায়। থানা থেকে জানানো হয় গত ১৬ মার্চ (শনিবার) এক নারী নিখোঁজের জিডি হয়েছিল। এক পর্যায়ে থানা থেকে জিডির আবেদনকারীর ফোন নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ করা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই রামপুরা বাজারের সামনের রাস্তায় ছুটে আসেন এক নারী। পরে পুলিশের গাড়িতে থাকা ইয়াসমিনকে দেখে জড়িয়ে ধরেন তার সন্তান ঊর্মি এবং বলতে থাকেন, এই যে আমার মা, গত ৬ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল। জানা যায়, ইয়াসমিনের এক ছেলে ও এক মেয়ে। স্বামীর নাম ফরিদ আহমেদ। পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। পরিবার নিয়ে থাকেন পূর্ব রামপুরা এলাকায়। লোক মারফত বাবা জানতে পারেন মা সিরাজগঞ্জ আছেন, বাবা সেখানে গিয়েছেন মাকে খুঁজতে। তবে মাকে খুঁজে পাওয়া গেছে, বিষয়টি জানানোর পর বাবা ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন বলে জানান ঊর্মি। এসআই আজহারুল আরও জানান, 'ওসি স্যারের নির্দেশক্রমে সন্তানের কাছে নিখোঁজ মাকে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি'। মাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা ঊর্মি জানান, তার মা তিন থেকে চার বছর ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। বেশির ভাগ সময় ভালো থাকলেও মাঝে মাঝে সমস্যা বাড়ে। তখন বাসা থেকে একা একা বেরিয়ে পড়েন। এভাবেই গত ১৬ মার্চ মা বাসা থেকে বেরিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে নিখোঁজের মাইকিংসহ রামপুরা থানায় জিডিও করা হয়। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, ওই মহিলা প্রথমে কোনো কথাই বলতে পারছিলেন না। থানায় আনার পর বিভিন্ন সেবা দেয়া হয়। সকালের দিকে তার মুখে 'আবুল হোটেল, আবুল হোটেল' শব্দ শোনার পর পুলিশসহ তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। পরে সন্তান খুঁজে পান হারিয়ে যাওয়া মাকে। তিনি আরও বলেন, চোর-ডাকাত ধরা ছাড়াও পুলিশ যে মানুষের সেবা করে থাকে এটা আবারও প্রমাণিত হলো। রামপুরা বাজারের সামনে পুলিশের গাড়িতে বসা ইয়াসমিনকে যখন তার মেয়ে ঊর্মি জড়িয়ে ধরেন, এই দৃশ্য দেখে আশপাশে অনেক পথচারী পুলিশের প্রশংসা করতে থাকেন। তাদের মধ্য থেকে অনেকেই বলতে থাকেন, পুলিশ যদি জোরালো উদ্যোগ না নিত হয়তোবা মাকে ফিরেই পেত না সন্তানরা।