প্রধানমন্ত্রীকে অ্যাডামা ডিয়েং

একাত্তরের গণহত্যার প্রসঙ্গ আলোচনায় তুলবে জাতিসংঘ

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে রোববার জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি ও গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা অ্যাডামা ডিয়েং সাক্ষাৎ করেন -ফোকাস বাংলা
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়টি আলোচনায় তোলার কথা বলেছেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি ও গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা অ্যাডামা ডিয়েং। রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অ্যাডামা ডিয়েং এ কথা বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কীভাবে এ দেশে গণহত্যা ?শুরু হয়েছিল, এদেশের সাধারণ মানুষকে কীভাবে নির্বিচারে হত্যা করেছিল পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ও এদেশে তাদের দোসররা, সে বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখের বেশি নারী নির্যাতিত হয়েছিলেন এবং স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন, সে বিষয়গুলোও শেখ হাসিনা জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারির সামনে তুলে ধরেন। প্রেস সচিব বলেন, 'বাংলাদেশের জেনোসাইডের বিষয়টা রেইজ করবেন বলে জানিয়েছেন অ্যাডামা ডিয়েং। তিনি বলেছেন, তখন হয়তো কিছু দেশ এর বিরোধিতা করতে পারে।' ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, নির্বিচারে চলেছিল হত্যাকান্ড। ওই রাতে শুধু ঢাকায় অন্তত ৭ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর সেই নৃশংসতার পর রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি, স্বাধীনতার জন্য শুরু হয়েছিল সশস্ত্র সংগ্রাম। নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এসেছিল স্বাধীনতা। ইহসানুল করিম জানান, নারীর ক্ষমতায়ন এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়েছে। তিনি সারা দেশ ঘুরেছেন। সরকার নারীর ক্ষমতায়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে 'নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক' হিসেবে তুলে ধরেন জানিয়ে ইহসানুল করিম বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, 'নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আপনি বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক'। নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন, ওই ঘটনার পর দেশটির সরকার ও জনগণ যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলেও সরকার সেগুলো 'কঠোরভাবে দমন করেছে' বলে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারিকে জানান শেখ হাসিনা। প্রেস সচিব বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে সহায়তা দিয়েছে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ধন্যবাদ জানান। অন্যদিকে অ্যাডামা ডিয়েং রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করার কথা বলেন। তিনি (অ্যাডামা ডিয়েং) বলেন, 'বাংলাদেশ একা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এ বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। সে প্রচেষ্টা আমরা নিয়েছি। আমরা চাই ওই ঘটনায় (মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়ন) যারা জড়িত তাদের বিচার হোক। রোহিঙ্গারা ফিরে যাক। সেখানে একটা শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠুক।' অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জবির নতুন ক্যাম্পাসের নকশা উপস্থাপন জবি প্রতিনিধি জানান, ঢাকার কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের নকশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। রোববার (২৪ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাস (কেরানিগঞ্জ) প্রকল্পের অগ্রগতি এবং পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট অব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-এর উপর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করা হয়। এ সময় সভায় প্রধানমন্ত্রীর বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থাপনা মনোযোগ দিয়ে দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পরিবেশের প্রতি লক্ষ্য রেখে স্থাপনা নির্মাণের নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি জলাধার, খেলার মাঠ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থাসহ সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করার নির্দেশনাও দেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান জানান, সভায় প্রধানমন্ত্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন যাতে দ্রম্নত হয় এ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসটি একেবারে অত্যাধুনিক ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠবে। অবকাঠামোগত পরিপূর্ণতার সাথে সাথে ক্যাম্পাসটি যেন পরিবেশবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন হয় সেই ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা প্রদান করেন।