ছয় জেলায় শৈত্যপ্রবাহ তাপমাত্রা কমার আভাস

দুপুরেও কুয়াশাচ্ছন্ন রাজধানী, তিন জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রি হ ১১ ডিগ্রির নিচে ১৮ অঞ্চল, বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দেশের ছয় জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বইছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ছিল শনিবারের মতো। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে আরও দুইদিন। এ সময়ে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দেশের অন্যত্র তা বাড়তে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রোববার পাবনার ঈশ্বরদী, নওগাঁর বদলগাছী এবং রাজশাহীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গুঁড়িগুঁড়ি, আবার কোথাও হালকা বৃষ্টিপাত হওয়ায় আকাশ বেশ পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল। শুক্রবার থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কুয়াশা যেমন অনেকখানি কেটে গিয়েছিল, সূর্য ওঠায় তাপমাত্রা বাড়তে শুরু হয়েছিল। কনকনে ঠান্ডা বাতাসও কমে এসেছিল। কিন্তু শনিবার রাত থেকে আবারও বইতে শুরু করেছে কনকনে বাতাস। রোববার দুপুরেও ঢাকাসহ দেশের অনেক এলাকায় কুয়াশায় ঢাকা ছিল। এতে তাপমাত্রা আবার নেমে যাচ্ছে। শীতের তীব্রতা আজ রাতে আরও কিছুটা বাড়তে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৮টি অঞ্চলের তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রির নিচে। রোববার কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৯.৮; পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১০; চুয়াডাঙ্গায় ১০.৭; নীলফামারীর ডিমলা, দিনাজপুর ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ১১; নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১১.২; কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ১১.৩; রংপুর, বগুড়া ও টাঙ্গাইলে ১১.৪; যশোরে ১১.৬ এবং গোপালগঞ্জে ১১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যেসব অঞ্চলের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে অবস্থান করছে, সেসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। \হরোববার বিকালে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। কুয়াশার বিষয়ে বলা হয়, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম জেলাগুলোর উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দেশের অন্যত্র তা বৃদ্ধি পেতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রাজশাহীতে বন্ধ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হওয়ায় জেলার সব প্রাথমিক ও বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, 'রোববার সকালে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আজ ভোর থেকে ঘন কুয়াশা ছিল। তবে সকাল ১০টার পর সূর্যের মুখ দেখা গেছে।' এদিকে তীব্র শীতের কারণে রাজশাহীর মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো দুই দিন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এক দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে শনিবার রাতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেই বিদ্যালয় বন্ধ রাখার জন্য সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী, রাজশাহীর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কুড়িগ্রামে ৯.৮ ডিগ্রি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি রোববার থেকে ফের মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, রোববার সকাল ৯টায় ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা শনিবার ছিল ১১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা প্রাথমিক ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাঈদুল আরীফ। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শিশুওয়ার্ডে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১২ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। অন্যদিকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন অর্ধশতাধিক শিশু ও বৃদ্ধ রোগী। এদিকে শৈত্যপ্রবাহে জেলার বোরো বীজতলা ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। শীতের কারণে বিলম্বিত হচ্ছে চলতি বোরো মৌসুমে জমিতে সেচসহ বোরো ধান লাগানো। জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপস্নব কুমার মোহন্ত জানান, বীজতলা ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য কৃষকদের পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেওয়াসহ চারাগাছের পাতা থেকে কুয়াশা ঝরিয়ে দিতে বলা হয়েছে। ক্ষেতলালেও বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় আজ সোমবার পর্যন্ত উপজেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় তাপমাত্রা নেমে যাওয়ায় শঙ্কায় শিক্ষা অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করে। লালমনিরহাটে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত, হাসপাতালে ভিড় কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় স্থবির লালমনিরহাটের জনজীবন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। ঠান্ডার সঙ্গে পালস্না দিয়ে হাসপাতালগুলোতে 'সিজনাল ফ্লু' আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে কৃষিতে। রংপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান জানান, রোববার সকাল ৬টায় জেলায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। টানা ১০ দিন পর বৃহস্পতি ও শুক্রবার সূর্যের দেখা মেলায় কিছুটা কর্মচাঞ্চল্য ফিরলেও তাতে বাধ সাধে শনিবার থেকে শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহ। রাতে বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা; দিনেও অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকছে রাস্তাঘাট। হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় বেশি কষ্ট পাচ্ছে বয়স্ক ও শিশুরা। কাজে বের হতে না পেরে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সানাউল হাসান সুজন বলেন, 'অন্য সময়ে যে রোগী হয়, এখন তার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এদের মধ্যে সর্দি-নিউমোনিয়া নিয়ে শিশুরাই বেশি ভর্তি হচ্ছে।' এদিকে শীত বেড়ে যাওয়ায় বোরো বীজতলায় ধানের চারাগাছ হলুদ হয়ে যাচ্ছে। আলু ক্ষেতে দেখা দিয়েছে পচন রোগ। কীটনাশক স্প্রে করেও পচন থামানো যাচ্ছে না বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। আদিতমারী উপজেলার কুমড়ীরহাট এলাকার কৃষক হামিদুল ইসলাম বলেন, 'তার জমির আলুর বয়স ৬০ দিন। পচন রোধে টানা ২-৩ দিন স্প্রে করেও লাভ হয়নি। এদিকে এ পর্যন্ত জেলার পাঁচ উপজেলায় দরিদ্রদের মাঝে ৩০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে বলে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানিয়েছেন। ঢ় প্রতিবেদন তৈরিতে রাজশাহী, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম ও রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) ও ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।