রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অস্ত্রসহ ৩ 'আরসা' সদস্য গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি-আরসার তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের খবর জানিয়েছের্ যাব। বুধবার সকালের্ যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আগের রাতে উপজেলার ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্ধিত অংশে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- উখিয়ার ৪ নম্বর ক্যাম্পের মো. নুরের ছেলে আবুল হাসিম (৩১), ১২ নম্বর ক্যাম্পের আলী আহমেদের ছেলে হোসেন জোহার প্রকাশ আলী জোহার (৩২) ও ৬ নম্বর ক্যাম্পের নুর আলমের ছেলে মো. আলম প্রকাশ শায়ের মুছা (৩৫)। র্ যাব বলছে, হাসিম আরসার সেকেন্ড ইন কমান্ড, আলী জোহার আরসার পরিবহণ শাখার কমান্ডার ও আলম আরসা প্রধান আতাউলস্নাহ জুনুনির দেহরক্ষী। তাদের সবার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় নতুন করে অস্ত্র আইনে মামলা করে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। কর্নেল সাজ্জাদ বলেন, 'উখিয়ার ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার সন্ত্রাসীরা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে- এমন গোপন খবরে সেখানে অভিযান চালায়র্ যাব। 'পরে ওই ক্যাম্পে তলস্নাশি চালিয়ে আরসার তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং দু'টি বিদেশি অস্ত্র, একটি এলজি ও চারটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।' র্ যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, আবুল হাসিম ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়; ২০১৮ সালে আরসায় যোগ দেয়। প্রথমদিকে সে নেট গ্রম্নপের সদস্য হিসেবে কাজ করত। এরপর ২০২০ থেকে ২২ সাল পর্যন্ত বস্নক জিম্মাদারের দায়িত্বে ছিল। তার নেতৃত্বে ৪ নম্বর ক্যাম্প ও বর্ধিত অংশে আরসার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য নতুন করে ঘাঁটি তৈরি করে। পরে হাসিম সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। সে আরসার নির্দেশনা মোতাবেক আরসার আধিপত্য বিস্তারের জন্য ক্যাম্পে সহিংসতা, মারামারি, প্রতিপক্ষ গ্রম্নপকে ক্যাম্প এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে দফায় দফায় সশস্ত্র হামলা, আরসার টার্গেট করা মাঝি, সাধারণ রোহিঙ্গা ও বিত্তশালী রোহিঙ্গাদের হত্যা ও অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রসী কর্মকান্ড পরিচালনা করত। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সে আত্মগোপনে চলে যেত। হাসিমের বিরুদ্ধে ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এরশাদ, ইমাম হোসেন ও সাব মাঝি সৈয়দ আলম, ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আব্দুল হামিদ, মো. কাসিম ও ইউনুস এবং ১৭ নম্বর ক্যাম্পে কাছিম হত্যাসহ সাতটি মামলা রয়েছে বলের্ যাবের এ কর্মকর্তা জানান। আর হোসেন জোহার প্রকাশ প্রসঙ্গে সাজ্জাদ বলেন, সে মিয়ানমারে থাকার সময় আরসার সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিল। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যারা অবস্থান নিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে আবার আরসায় ফেরত আনা ছিল তার মূল কাজ। ২০২০ সালের প্রথম থেকে সে মৌলভী লাল মোহাম্মদ ও মুফতি আতিকের সহযোগী হিসেবে আরসার কাচারী বা আদালতে বিচারকাজ করত। কাচারিতে বিভিন্ন নির্যাতন ও জরিমানা আদায়ের মূল কাজটা ছিল তার। ২০২২ সালে কোনারপাড়া ডিজিএফআই কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের পর আরসার কমান্ডাররা মিায়ানমারের অভ্যন্তরে চলে গেলে সে আরসার পরিবহণ শাখার কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পায়। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় দুটি মামলা রয়েছে। আর আলম প্রকাশ শায়ের মুছা ২০১৬ সালে মিয়ানমারে থাকতেই আরসায় যোগদান করে জানিয়ের্ যাব কর্মকর্তা বলেন, সে মিয়ানমারে প্রথমে আরসার পাহারাদার হিসেবে কাজ করত এবং পরবর্তী সময়ে আরসা নেতাদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তার মোটর সাইকেলে করে পৌঁছে দিত। পরে আতাউলস্নাহ জুনুনির দেহরক্ষীর দায়িত্ব পায় সে। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। র্ যাব অধিনায়ক বলেন, এক বছরের্ যাব-১৫ আরসার ১০১ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ৭টি বিদেশি পিস্তল, ৫২টি দেশীয় অস্ত্র, ১৪০ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৫০ দশমিক ২১ কেজি বিস্ফোরক ও ২৮টি ককটেল উদ্ধার করেছে।