১৫তম দিনে এসেছে ৯৭টি নতুন বই

প্রাণহীন ছোট প্রকাশনীগুলো

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

বীরেন মুখার্জী
অভিভাবকদের সঙ্গে মেলায় শিশুরাও দেখছে পছন্দের বই। ছবিটি বৃহস্পতিবার সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
দেখতে দেখতে পার হয়ে গেল অমর একুশে বইমেলার ১৫ দিন। এ বছর শুরু থেকেই মেলা ছিল জমজমাট। বাঙালির প্রাণের মেলায় বইপ্রেমীদের এমন ভিড় দেখে উচ্ছ্বসিত ছিলেন প্রকাশকরাও। তবে বড় স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোর মতো এবারের মেলায় জ্বলে উঠতে পারেনি ছোট ছোট প্রকাশনী ও স্টলগুলো। এসব স্টলে নেই পাঠক সমাগম। ফলে প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন এসব স্টলের বিক্রয়কর্মী। পাঠক বলছেন, ভালো বই খুঁজতে সাধারণত বড় বড় স্টলগুলোতে ছুটে যান ক্রেতারা। সেক্ষেত্রে ছোট স্টলের দিকে যেতে চান না তারা। তবে প্রকাশকরা বলছেন, ছোট প্রকাশনীও ভালো বই প্রকাশ করে। স্টল ছোট হওয়ায় ক্রেতা-দর্শনার্থী এদিকে কম আসছেন। বৃহস্পতিবার মেলার ১৫তম দিনে সন্ধ্যার আগে দর্শনার্থী বাড়ে। তবে সেই তুলনায় বেচাকেনা বাড়েনি বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা। প্রকাশকরা জানান, আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার শুরু থেকেই মেলায় বিক্রি ভালো হচ্ছে। দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়লেও সেই তুলনায় বিক্রি রয়েছে অপরিবর্তনীয়। যারা আসছেন, তাদের বেশিরভাগই ঘোরাঘুরি করে সময় পার করছেন। মেলায় এলেই যে বই কিনতে হবে এমনও নয়। কারণ বইমেলা হচ্ছে লেখক-পাঠক ও প্রকাশকদের মিলনস্থল। মানুষ মেলায় আরও বেশি আসুক এমনটাই তাদের চাওয়া। বাউন্ডুলে প্রকাশনীর অনিন্দ্য বলেন, 'আমাদের বইয়ের সংখ্যা কম। তবে সেই তুলনায় বিক্রি স্বাভাবিক দিনগুলোর মতোই।' মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলা প্রাঙ্গণে ছোট ছোট প্রকাশনীর স্টলগুলোতে নেই পাঠকদের সরব উপস্থিতি। এসব স্টলে অলস সময় পার করছেন বিক্রয়কর্মীরা। স্টলের মধ্যে তাদের কেউ আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ আবার বই পড়ে সময় কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে পাঠক-ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে প্যাভিলিয়ন ও বড় বড় প্রকাশনীগুলোতে। সেখানে বইয়ের সন্ধানে পাঠকদের ভিড় লেগে থাকতে দেখা গেছে। এসব স্টলের বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরু থেকেই স্টলগুলো প্রাণহীন। পাঠক সমাগম না থাকায় অলস সময় কাটাতে হয় তাদের। প্রতিদিন দুই থেকে তিনটির বেশি বই বিক্রি করতে পারছে না প্রকাশনীগুলো। ছুটির দিন কিছুটা বেচাকেনা হলেও সপ্তাহের অন্যান্য সময় মলিন হয়ে থাকতে হয় তাদের। সাইম ভূঁইয়া নামে কলম প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী বলেন, 'প্রতিদিন দুই থেকে তিনটির বেশি বই বিক্রি হয় না। বেশিরভাগ সময় চুপচাপ বসে থাকি, কখনো বই পড়ি। স্টল ছোট হওয়ায় ক্রেতারা আসেন না। মেলা শেষে স্টল ভাড়া উঠতে কষ্ট হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।' বর্ণপ্রকাশ লিমিটেডের বিক্রয়কর্মী জেরিন বলেন, 'বই কেনার মতো মানুষ কম। স্টলে তো ভিড় হয় না, খুব বেশি পাঠকও আসেন না। ছুটির দিনগুলোতে কিছুটা বেচাবিক্রি হয়।' আশিক নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, 'স্টলে ভালো বই না থাকলে কেউ কেনে না। ভালো বই খুঁজতে হলে বড় প্রকাশনীগুলোতে খোঁজা হয়। তারা সবসময় সৃজনশীল বইয়ে অগ্রাধিকার দেন। তাছাড়া স্টলের সাজসজ্জাও কিছুটা প্রভাব ফেলে।' তবে পান্ডুলিপি প্রকাশনীর আলফাজ হোসেনের দাবি, ছোট স্টলগুলোতে সৃজনশীল ও বিচিত্র ধরনের বই রয়েছে। পাঠকদের এসে দেখতে হবে। সবাই এখন ভাইরাল বইয়ের পাগল। টার্গেট করে ওই সব স্টলেই আসেন।' প্রকাশনা সংস্থা 'ঐতিহ্য' বৃহস্পতিবার মেলায় এনেছে কয়েকটি নতুন বই। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে- আফসান চৌধুরী সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই '১৯৭১ : আন্তর্জাতিক পরিসর'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রম্নব এষ, মূল্য ৬৫০ টাকা। কালজয়ী কথাসাহিত্যিক অদ্বৈত মলস্নবর্মণের 'লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি' বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রম্নব এষ, মূল্য ২৩০ টাকা। জিয়া হাশান-এর গল্প দুপুরের পাড়ে পুকুরের আড়ে বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রম্নব এষ, মূল্য ১৮০ টাকা। মামুন হুসাইনের 'প্রিয় ১৫ গল্প' বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রম্নব এষ, মূল্য ৯৯০ টাকা। প্রাচ্যের রহস্য-নগরী নিয়ে লেখা এফ. বি. ব্রাডলি বার্ট-এর 'দ্য রোম্যান্স অব অ্যান ইস্টার্ন ক্যাপিটাল' বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন রহীম উদ্দীন সিদ্দিকী। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রম্নব এষ, মূল্য ২৫০ টাকা। আবদুল মান্নান সৈয়দের ভূমিকায় প্রকাশিত হয়েছে কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা সংগ্রহ বইটি। এটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রম্নব এষ, মূল্য রাখা হয়েছে ২৫০ টাকা। মেলায় নতুন বই ৯৭টি বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মেলার ১৫তম দিনে ৯৭টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'স্মরণ : আবদুল হালিম বয়াতি' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জোবায়ের আবদুলস্নাহ। আলোচনায় অংশ নেন মো. নিশানে হালিম। সভাপতিত্ব করেন সাইদুর রহমান বয়াতি। বৃহস্পতিবার 'লেখক বলছি' অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক মাসুদুল হক, কবি ও সম্পাদক এজাজ ইউসুফী, গবেষক কাজী সামিও শীশ এবং শিশুসাহিত্যিক রুনা তাসমিনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, মিহির মুসাকী, শফিক সেলিম, খোকন মাহমুদ এবং ইমরুল ইউসুফ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী এ বি এম রাশেদুল হাসান, শিরিন জাহান এবং তালুকদার মো. যোবায়ের আহম্মেদ টিপু। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন সুবর্ণা আফরিনের পরিচালনায় 'কিংবদন্তি আবৃত্তি পরিষদ' এবং মো. রহমতুলস্নাহর পরিচালনায় 'কথাশৈলী আবৃত্তি চক্র'। পুথিপাঠ করেন এথেন্স শাওন। এছাড়াও ছিল প্রণয় সাহার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর'-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী বাবু সরকার, কোহিনুর আক্তার গোলাপী, মেহেরুন আশরাফ, অঞ্জলি চৌধুরী, গঞ্জের আলী জীবন, সুমন চন্দ্র দাস এবং বিজন কান্তি রায়। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন চন্দন দত্ত (তবলা), সুমন রেজা খান (কী-বোর্ড), মো. মনিরুজ্জামান (বাঁশি), সুমন কুমার শীল (দোতরা) এবং মো. স্বপন মিয়া (বাংলা ঢোল)। আজকের অনুষ্ঠান আজ মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলার শুরু থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অমর একুশে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'স্মরণ : ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন হারিসুল হক। আলোচনায় অংশ নেবেন ফজিলাতুন নেছা মালিক এবং এস এম মোস্তফা জামান। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক এ বি এম আবদুলস্নাহ। জমে উঠেছে সিলেট বইমেলা লেখক-পাঠকের ভিড়ে জমে উঠেছে সিলেটের বইমেলা। আগামীকাল শনিবার শেষ হচ্ছে এই মেলা। বইমেলার মঞ্চে নিয়মিত হচ্ছে আলোচনা সভা, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজকেরা জানান, ২০১৪ সালে শুরু হওয়া বইমেলা এবার ১১ বছরে পড়েছে। এবার ২৩টি প্রকাশনা সংস্থা বইমেলায় স্টল নিয়েছে। প্রকাশনা সংস্থাগুলো হচ্ছে- প্রথমা, কথাপ্রকাশ, অন্বেষা প্রকাশন, তাম্রলিপি, উৎস প্রকাশন, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন, চৈতন্য, বাবুই, নাগরী, বাসিয়া প্রকাশনী, ঘাস প্রকাশন, পান্ডুলিপি প্রকাশন, পাপড়ি, অভ্র প্রকাশন, বুনন প্রকাশন, চন্দ্রবিন্দু, মাছরাঙা প্রকাশন, জসিম বুক হাউস, স্বপ্ন '৭১, নগর, নোভা বুকস অ্যান্ড পাবলিশার্স, গাঙুর প্রকাশন ও প্রিয়জন প্রকাশনী। বিক্রি নেই চট্টগ্রাম বইমেলায় চট্টগ্রামের বইমেলায় দর্শকদের ভিড় থাকলেও সে অনুযায়ী বইয়ের বিক্রি নেই। অধিকাংশ দর্শনার্থীই মেলায় আসছেন বেড়াতে। মলাট উল্টেপাল্টে দেখে চলে যাচ্ছেন। বিক্রি কমার জন্য বারবার মেলার স্থান পরিবর্তন ও প্রচারণার ঘাটতিকে দুষছেন প্রকাশকরা। বৃহস্পতিবার ছিল মেলার সপ্তম দিন। এদিনও দর্শনার্থীদের অধিকাংশই মেলায় এসে সেলফি আর ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। বিক্রি না থাকায় অনেক প্রকাশনীর স্টলে বিক্রয়কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন না। হতাশা ছিল বিক্রেতাদের কণ্ঠে। মেলা শুরুর আগে যেমনটা পরিকল্পনা ছিল মেলার অর্ধেক সময় অতিবাহিত হলেও আশানুরূপ ফল নেই উলেস্নখ করে কথা প্রকাশের স্টল ইনচার্জ আহমেদ রাজু বলেন, 'সিআরবিতে মেলা নিয়ে শুরুতে আমরা আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু নতুন জায়গার প্রচার-প্রচারণা ওভাবে হয়নি। পাশেই অন্য একটি মাঠে বাণিজ্য মেলা হচ্ছে, আপনারা দেখবেন শহরে ওই মেলার প্রচার কেমন। আমাদের যদি এই অবস্থা হয়, ছোট প্রকাশনাগুলোর পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়। এখন পর্যন্ত মেলা আমাদের হতাশ করছে। তবে সামনের দিনগুলোর জন্য আমরা আশা রাখতে পারি। ২১ ফেব্রম্নয়ারির দিকে আমাদের মূল ফোকাস থাকবে।'