রাজশাহীতে লাগামহীন বাজারে গাছাড়া ভাব ভোক্তা অধিকারের

প্রকাশ | ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

রাজশাহী অফিস
রমজানে দেশের বাজারে চোখ রাঙাচ্ছে চাহিদার শীর্ষে থাকা নিত্যপণ্যগুলো। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের চাপে যখন চিড়েচ্যাপটা জনজীবন, তখন বাজার নিয়ন্ত্রণে দেখা নেই জেলা প্রশাসন, খাদ্য অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর। রোজাদারদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে রমজান মাসে অন্যান্য দেশে সব কিছুর দাম তুলনামূলক কমিয়ে দেওয়া হলেও আমাদের দেশে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। দাম কমার বদলে উল্টো বাড়তে থাকে সমানতালে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও ভোগ্যপণ্যের বাজার টালমাটাল। দাম বাড়ার দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই রাজশাহীও। বেড়েছে বিভিন্ন রকমের মসলা, চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুর ও সবজিসহ মাছ মাংসের দাম। রোজার আগের দিন ছোট এলাচ ও বড় এলাচের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা কম থাকলেও এখন তা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহানগরীর সাহেব বাজারের এক মসলা বিক্রেতা জানান, এসব মসলা দুই দিন আগে দাম কমলেও এখন বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও ডাল ও ছোলা কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। সরকার সাধারণ খেজুরের দাম সর্বনিম্ন ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং জাইদি খেজুর ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে এসব দামের খেজুরের দেখা মেলেনি। বাজারে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১৮০০ টাকা কেজি দরে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও রোজার আগে শসা বিক্রি করতে দেখা গেছে ৩০-৪০ টাকার মধ্যে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫০-৮০ টাকা কেজি দরে। লেবু ১৫-২০ টাকা হালি বিক্রি হলেও রোজায় তা ৩০-৬০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। তরমুজ ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও এখন সেটি ৮০ টাকা কিজিতে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বুধবার সাহেব বাজারে খেজুর কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, 'বাজারে খেজুর কিনতে এসে মাথা খারাপ। অন্যান্যবার ২০০-২৫০ টাকা দামের খেজুর বিক্রি হয়েছে। এবার সেই খেজুর ৫০০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ১৫০০-১৬০০ টাকা দরেও খেজুর বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মতো মানুষের এত দামের খেজুর কিনে খাওয়ার সাধ্য নেই।' সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমিয়ে ১৬৩ টাকা করলেও রাজশাহীর বাজারে এই দামে তেল বিক্রি করতে দেখা যায়নি। লাগামহীন বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে মাছ-মাংসের দামও। গরিবের মাছ পাঙাশও আজকাল রাঙাচ্ছে চোখ আর ইলিশের আশেপাশে যাওয়া যেন মহাঅপরাধ। আকারে ছোট ইলিশ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। বড় ইলিশ ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও রুই, কাতলা, তেলাপিয়ার দামও বেড়েছে আগের তুলনায় কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। আর হুট করে ৬৫০ টাকায় নেমে আসা গরুর মাংসের দাম আবারো চড়েছে। ব্যবসায়ীরা গরুর মাংস বিক্রিতে নতুন বাজিমাত শুরু করেছে। তারা বলছেন হাড় ছাড়া মাংস কিনলে ৮৫০ টাকা আর হাড়সহ নিলে ৭৫০ টাকায় দেওয়া যাবে। মাংস ব্যবসায়ীদের নতুন কৌশলে ভোক্তারা পড়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মুরগির বাজারে আগুনের ছোঁয়া। দেশি মুরগি কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকা, ব্রয়লার ৩৫-৪০ টাকা বেড়ে ২৪০ আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকায়। এদিকে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি অন্তত ১২টি সংস্থা তদারকির দায়িত্বে থাকে। কোথাও কোনো অনিয়ম দেখলে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব তাদের। কিন্তু রাজশাহীর বাজারে তাদের দেখা নেই। আর এ সুযোগই বারবার নেন ব্যবসায়ীরা। মাঝেমধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান দেখা গেলেও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ সরকারি এ সংস্থাটি। সাধারণ মানুষ বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব কথা বলা হয় তা কার্যকর হতে দেখা যায় না। বিভিন্ন দপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে দু-একজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করে দায়সারা কাজ করে চলে যান। এমনভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। জনগণের স্বার্থে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা দপ্তরগুলোকে আন্তরিক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তারা। বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে রাজশাহী বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ইব্রাহীম হোসেনের দপ্তরে গেলে তাকে অফিসেই দেখা যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে গাছাড়া ভাব দেখিয়ে বলেন, 'বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব শুধু ভোক্তা অধিকারের না। সরকারের আরও দপ্তর রয়েছে তাদেরও দায়িত্ব এসব দেখার।' সংবাদমাধ্যমে কথা বলার জন্য মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন এই কর্মকর্তা।