বুয়েটে তৃতীয় দিনেও পরীক্ষা বর্জন, ক্যাম্পাস ফাঁকা

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বুধবারও পরীক্ষা বর্জন করেছেন। এই নিয়ে তৃতীয় দিনের মতো পরীক্ষা বর্জন করেছেন তারা, ঈদের আগে এদিন শেষ পরীক্ষার তারিখ ছিল। এর আগে গত ৩০ ও ৩১ মার্চ দুটি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেননি। ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের বিপরীতমুখী অবস্থানে কয়েকদিন ধরে থমথমে অবস্থা চলছে বুয়েটে। বুধবার ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের আনাগোনা নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস খোলা আছে এবং সেখানে দাপ্তরিক কাজকর্ম চলছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার বুয়েটের ২০১৮ ব্যাচের একটি টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। কিন্তু আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। ঈদের আগে আর কোনো ক্লাস বা পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকে বাড়ি চলে গেছেন। এ বিষয়ে জানতে বুয়েটের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইমামুল হাসান ভূঁইয়ার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদারের কার্যালয়ে গেলে তিনি কয়েকজন সাংবাদিককে দুই ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলে চলে যান। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি। গত সাড়ে চার বছর প্রকৌশল শিক্ষার এই বিদ্যাপীঠে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধই ছিল। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ একদল নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে নতুন করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। শুরু হয় ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন। তাদের দাবির মুখে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বীর হলের সিট বাতিল করা হয়। তিনিই সেই রাতে জমায়েত ঘটিয়েছিলেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। অন্যদিকে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফেরানোর দাবিতে পাল্টা কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ। রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে তারা অবিলম্বে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালুর অনুমতি দেওয়ার দাবি জানায়। পরে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী। এদিকে ছাত্র রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সোমবার হাইকোর্টে রিট মামলা করেন হল থেকে বহিষ্কৃত ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বী। তার আবেদনের শুনানি করে বুয়েটের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্ট। তবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রত্যাশার জায়গায় অনড় থাকার কথা জানিয়ে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিপক্ষে আইনি লড়াই চালাতে উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা একটি খোলা চিঠিতে তারা বুয়েটকে 'রাজনীতিমুক্ত' রাখতে সরকারপ্রধানের সহযোগিতা চেয়েছেন। ১৩ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে বুয়েট এদিকে পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিরত ও পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ দিনের ছুটি পাচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। ঈদের ছুটির পর আগামী ১৭ এপ্রিল একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্টার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই ছুটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া, ৯ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহিক ছুটিসহ ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ছুটিতে থাকবে। ১৫ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে। গত ২৭ মার্চ ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।