ঈদে ভোগান্তি বাড়াতে পারে লোডশেডিং

এপ্রিলের শুরু থেকেই দেশব্যাপী লোডশেডিং পরিমাণ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ শনিবার সারাদেশে লোডশেডিং-এর পরিমাণ ছিল ১৬শ' মেগাওয়াটের বেশি। আর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না হলেও লোডশেডিং বেড়ে ২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়াতে পারে

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

রেজা মাহমুদ
দেশে চলমান বিদু্যৎ পরিস্থিতি আরও অবনতির আশংকা রয়েছে। ঈদের আগেই লোডশেডিং ২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে বিদ্যমান তাপদাহ এ সপ্তাহেও অব্যাহত থাকতে পারে, যা বিদু্যতের চাহিদা আরও বাড়িয়ে দিবে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বিদু্যৎ উৎপাদন না করা গেলে জনভোগান্তি বেড়ে ভাটা পড়তে পারে ঈদ আনন্দে। এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে লোডশেডিং এড়াতে গ্রামীণ এলাকায় লোডশেডিং অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে- যা ঈদ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে তেমন লোডশেডিং না থাকলেও থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দিনের অর্ধেক সময় বিদু্যৎহীন থাকছে। এতে ঈদ উদ্‌যাপনে গ্রামে যাওয়া মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা যায়যায়দিনকে বলেন, গ্যাস না পাওয়ায় ৭টির মতো পাওয়ার পস্নান্ট বন্ধ রয়েছে। ফলে উৎপাদন কমেছে। এদিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে বিদু্যতের চাহিদা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ঈদের মৌসুমে চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যেই বিদু্যতের চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট হয়েছে। এদিকে এপ্রিলের শুরু থেকেই দেশব্যাপী লোডশেডিং পরিমাণ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ শনিবার সারাদেশে লোডশেডিং-এর পরিমাণ ছিল ১৬শ' মেগাওয়াটের বেশি। আর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না হলেও লোডশেডিং বেড়ে ২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়াতে পারে। মূলত গভীর সমুদ্রে ২টি এলএনজি টার্মিনালের একটি বন্ধ থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করর্পোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্রের একটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় জাতীয় গ্রিডে ৫শ' মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ কমেছে। এপ্রিলে শুরুতেই এটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো হয়নি। এদিকে গরমে বিদু্যতের বর্র্ধিত চাহিদা পূরণে বিকল্প হিসেবে গ্যাসের পরিকল্পনা ছিল বিপিডিবির। এপ্রিলে সামিট গ্রম্নপ এলএনজি টার্মিনাল চালু করতে না পারায় পরিস্থিতি এমন হয়েছে। তবে বিপিসির কর্মকর্তরা আশা করছেন দু-একদিনের মধ্যেই টার্মিনাল চালু করা যাবে। তাহলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গত বছর নভেম্বরে দু'টি এলএনজি টার্মিনালের একটি বন্ধ রাখা হয়েছিল। ফেব্রম্নয়ারিতে তা চালু করে আরেকটি বন্ধ করা হয়, যা এ মাসের শুরুতেই চালু হওয়ার কথাছিল। যদি কোনো কারণে ঈদের আগে এই টার্মিনাল চালু না করা যায় তাহলে সারাদেশে লোডশেডিং-এর তীব্রতা আরও বাড়বে। বিপিডিবির পাওয়ার জেনারেশন বিভাগের প্রধান ডক্টর ওয়াজেদ আলী যায়াযায়দিনকে বলেন, 'বিদু্যৎ উৎপাদনে এই মুহূর্তে গ্যাসের বিকল্প কম। কয়লার উৎপাদন সক্ষমতার পুরোটাই ব্যবহার হচ্ছে। অন্যদিকে তেলভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্র চালু করা অনেক ব্যয়বহুল ও জটিল। অয়েল পাওয়ার পস্নান্টগুলোর অনেকেরই পেমেন্ট বকেয়া রয়েছে। তা পরিশোধ না করলে উৎপাদনে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। এছাড়াও তেলের মজুদ কম বলে শুনেছি। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাসের সরবরাহ না পেলে পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা কম।' বিপিডিবি'র পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২ এপ্রিল থেকে লোডশেডিং বাড়তে থাকে। গত শনিবার ১ হাজার ৬৭৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং রেকর্ড করা হয়, যেখানে ১৩ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১১ হাজার ৯৭৬ মেগাওয়াট বিদু্যৎ সরবরাহ করা হয়। এর আগের গত ৫ এপ্রিল দিবাগত রাত ১টা থেকে এই লোডশেডিং শুরু হয়। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) পরিসংখ্যান বলছে, শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত দেশে বিদু্যৎ উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৩৮৭ মেগাওয়াট। শনিবার দুপুর ১২টায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে ১২ হাজার ৬৭০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন হয়েছে।