ঈদ কেনাকাটায় চাহিদা বেড়েছে সুতি পোশাকের

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

বিশেষ প্রতিনিধি
\হশেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ফুটপাত থেকে শুরু করে শপিংমলে ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর। এবার ঈদ কাটবে বেশ গরমের মধ্যে। তাই সুতির পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে সুতির পোশাককে গুরুত্ব দিয়েছে ফ্যাশন হাউজগুলো। এবার গরমে আরামদায়ক সুতির পোশাক বিক্রি হচ্ছে বেশি। শিশুদের ঈদ আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করতে তাদের কেনাকাটাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন অভিভাবকরা। তবে সুতি পোশাকের বাড়তি দামে ক্ষুব্ধ অনেকেই। ফ্যাশন ডিজাইনাররা জানান, এবারের ঈদে ও পহেলা বৈশাখে ভ্যাপসা গরমের জন্য আদর্শ পোশাক হিসেবে সুতির ফেব্রিকসই বেছে নেওয়া হয়েছে। এবার সুতি, লিলেন, জর্জেট ও শিফনের চাহিদা বেশি। ক্রেতাদের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়েই এ ধরনের পোশাকের ডিজাইন করা হয়েছে। দেশীয় হাতে বোনা সুতি কাপড়ের তৈরি পোশাকের চাহিদাও এবার চোখে পড়ার মতো। জমকালো নয় বরং হালকা রঙের পোশাক প্রাধান্য পাচ্ছে ক্রেতাদের কাছে। এবার সুতির কাপড়ে তৈরি করা ফ্রক, সালোয়ার কামিজ, পার্টি ফ্রক, ঘাগড়া, লেহেঙ্গা, টপ, গাউন, স্কার্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্টসহ নানান ডিজাইনের তৈরি শিশুদের পোশাকের চাহিদা বেশি। মৌচাক মার্কেটের পাশে আয়েশা সুপার শপিং কমপেস্নক্সের মাহিয়া ফ্যাশনের ম্যানেজার আবু জাফর বলেন, সুতির কাপড়ে তৈরি পোশাকেই বেশি ঝুঁকছে সবাই। বিশেষ করে শপিংমল, বুটিক হাউস ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে সুতির বৈচিত্র্য পোশাক এনেছেন ব্যবসায়ীরা। এবার মেয়ে শিশুদের জন্য সুতি এবং জর্জেটের ওপর ইন্ডিয়ান কারচুপির কাজ করা নেটের হাতাওয়ালা টু-পিস ও থ্রি-পিস আনা হয়েছে। সুতির ওপর কারচুপির কাজের পোশাক ছয়শ' থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। জর্জেটের কারচুপির ড্রেস এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলেন, গরমের কারণে শিশু ও বয়স্করাও সুতির কাপড়ে বেশি ঝুঁকছেন। সিম্পল ডিজাইনের ঢিলেঢালা পোশাক বেশি চলছে। তরুণদের জন্য বাজারে রয়েছে হালকা ডিজাইনের পাঞ্জাবি-পাজামা, শার্ট, টিশার্ট, ফতুয়া, কাবলি ও শেরওয়ানি। অন্যদিকে, তরুণীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ফ্রক ও ফতুয়া। শিশুদের জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি, শার্ট, টিশার্ট, ফতুয়া, ফ্রক, সেলোয়ার কমিজ। এছাড়াও বয়স্ক পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও নারীদের জন্য হালকা ডিজাইনের শাড়ি রয়েছে। তরুণীদের পছন্দ সুতি ও জর্জেট কাপড়ের থ্রি-পিস ও লেহেঙ্গা। বাজারে আকর্ষণীয় ডিজাইনের পোশাক বাজারে এনেছে ফ্যাশন ব্র্যান্ড আড়ং, ইয়োলো, এক্সটেসি, সেইলর, গ্রামীণ ইউনিক্লো, সারা লাইফস্টাইল, অঞ্জন'স, কে-ক্রাফট, বিশ্ব রঙ, দেশালসহ স্বনামধন্য ব্র্যান্ডগুলো। এ বছর গরম বেশি থাকার কারণে সুতি কাপড়ের পোশাকের চাহিদা একটু বেশি। শনিবার ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে জমে উঠে ঈদের কেনাকাটা। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ভিড় বাড়ছে রাজধানীর বিপণি-বিতানগুলোয়। ফুটপাথের দোকানেও ছিল রমরমা কেনাবেচা। বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত ছিল মার্কেট এবং ফুটপাত। পোশাকের ন্যায় প্রসাধনী, মোবাইল ফোন ও জুতার দোকানে ভিড় দেখা গেছে। ছুটির দিন হওয়ায় চাকরিজীবীদের ভিড় ছিল বেশি। তরুণ-তরুণীদের জন্য প্রায় সব ফ্যাশন হাউজগুলোতে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক বিক্রি হয়েছে বেশি। শনিবার শেষ বিকালে রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোড, ইস্টার্ন পস্নাজা, মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিংমল, সেন্টার পয়েন্ট, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কসহ মিরপুর এলাকার বিভিন্ন শপিংমল ছিল লোকে লোকারণ্য। সকালে ঢিলেঢালা ভাব থাকলেও বিকালে, বিশেষ করে ইফতারির পর থেকে বিক্রি বেড়ে যায়। নতুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নতুন জুতা ও কসমেটিকস তো কেনা চাই-মহিলাদের। ঈদ কেনাকাটার অন্যতম অনুসঙ্গ কসমেটিকস। তাই এখন ভিড় বাড়ছে জুতা এবং কসমেটিকসের দোকানগুলোতে। ঈদ সামনে রেখে বড় বড় জুতার ব্র্যান্ড নিত্যনতুন নকশার জুতা নিয়ে এসেছে। বাটা, অ্যাপেক্স, ওরিয়ন, বে এম্পিরিয়ামের মতো জনপ্রিয় জুতার ব্র্যান্ডগুলো নতুন নকশার জুতা নিয়ে এসেছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত শপিংমল পর্যন্ত বেড়েছে বেচাকেনা। কেনাকাটা বেড়েছে অনলাইনেও। ঈদের কেনাকাটায় জমজমাট হয়ে উঠেছে অভিজাত শপিং মলগুলো। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সরগরম থাকছে দোকানগুলো। ঈদের উৎসবকে ঘিরে পছন্দের পণ্য কিনতে প্রতিদিন আসছেন ঢাকার আশপাশের হাজার হাজার মানুষ। তাদের বেশিরভাগই কিনছেন ব্র্যান্ডের পণ্য। ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রয়কর্মীরা। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ঢাকার বাইরের ক্রেতাদের ভিড় ততই বাড়ছে বলে জানান বিক্রেতারা। পছন্দ ও রুচির ওপর গুরুত্ব দিয়েই ব্যবসায়ীরা পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। বাবা-মার হাত ধরে এসেছে ছোট ছোট সোনামনিরা। যমুনা ফিউচার পার্ক, হাতিরপুল ইস্টার্ন পস্নাজা, পুলিশপস্নাজা ও বসুন্ধরার মতো অভিজাত শপিং মলগুলোতে পণ্যমূল্য বেশি বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেক ক্রেতা। গাজীপুর থেকে কেনাকাটা করতে আসা ডা. সুফিয়া বেগম বলেন, শপিং মলগুলোতে সারা বছর যে দামে কেনাবেচা হয়, ঈদ আসলে সেটা এক লাফে তিনগুণ বেড়েছে। বড় বড় শপিংমলে উচ্চবিত্ত ক্রেতারা পণ্য কিনতে আসেন, তাই তাদের পকেট কাটা হয়। এবার যে দাম নিচ্ছে এই দামে ব্যাংক বা কলকাতা থেকে মার্কেটিং করলেও এত টাকা লাগবে না। আবার অনেকেই বলেছেন, স্বাভাবিক দামেই বিক্রি হচ্ছে সকল ধরনের পণ্য। বসুন্ধরা শপিং কমপেস্নক্সের আড়ং, দর্জিবাড়ি, ফ্রিল্যান্ড, ইনফিনিটিসহ বিভিন্ন বিপনি বিতানগুলোয় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। মানুষ পোশাক পছন্দ করতে হিমশিম খায়। ক্যাশ কাউন্টারগুলোয় ছিল দীর্ঘ লাইন। পিছিয়ে ছিল না জুতার দোকানগুলো। বাটা, এপেক্স, ক্রিসেন্টসহ ভাইব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। বাচ্চাদের খেলনার দোকানগুলোয় ছিল ভিড়। ইলেকট্রিক পণ্য ও মোবাইলফোনের দোকানেও ভিড় লেগে থাকতে দেখা যায়। মিরপুর দুই নম্বর সনির মোড়ে আড়ং শপে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা হামিদুর রহমান। তার সঙ্গে স্ত্রীসহ চার সন্তান। তিনি ও দুই ছেলে পাঞ্জাবি ও পায়জামা এবং জুতা কিনেছেন। মেয়েরা শাড়ি, জুতা ও প্রসাধনী পণ্য কিনেছেন। তিনি বলেন, এবার ভিড় যেমন বেশি, তেমনি দামও কিছু বেশি।