ফাঁকা পড়ে থাকছে লালকুঠি হাসপাতালের ৮০% শয্যা

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

পাঠান সোহাগ
মিরপুর লালকুঠি ২০০ শয্যার মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতালে আন্তঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। অর্থাৎ প্রতিদিন শয্যা ও কেবিন ফাঁকা থাকে ১৬০টি। যা মোট শয্যার ৮০ শতাংশ। পাশাপাশি বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২৮০ থেকে ৩০০ জন মা ও শিশু চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে জনবলের ঘাটতির কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে ১৬১টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে মোট জনবল আছে মাত্র ৪৮ জন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ হাসপাতালটিতে সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও জনবল ঘাটতির কারণে এখন পুরোদমে চালু করা সম্ভব হয়নি। ২০০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ আছে ৫৪টি, নার্সের পদ ৬৬টি। পাশাপাশি দ্বিতীয় শ্রেণি, তৃতীয় শ্রেণিসহ মোট ১৬১টি পদ আছে। এর মধ্যে চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন মাত্র ৪৮ জন। বহির্বিভাগে রোগী থাকলেও আন্তঃবিভাগে ভর্তির রোগীর সংখ্যা খুবই কম। ২০০ শয্যার মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতালের পরিচালক ডা. রতন কুমার আগারওয়ালা যায়যায়দিনকে বলেন, এ হাসপাতালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে শিশুর জন্ম বেশি হয়। নরমাল ডেলিভারি কম হয়। ১৫-২০ এপ্রিল বহির্বিভাগে রোগী এসেছে ১ হাজার ৩৮৮ জন। সিজার হয়েছে ২০টা, নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে ৫ জন শিশুর জন্ম হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন পরিচালিত একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। রাজধানীর অন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে যেখানে আন্তঃবিভাগের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যায় না, শয্যার জন্য হাহাকার থাকে। কিন্তু মিরপুর লালকুঠি মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের হাসপাতালে সব সময় শয্যা ফাঁকা থাকে। আমরা প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছি। রোগী আগের তুলনায় ধীরে ধীরে বাড়ছে। সামনের দিনগুলোয় রোগী আরও বাড়বে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৬১টি অনুমোদিত পদের মধ্যে মোট জনবল আছে ৪৮ জন। এর মধ্যে চিকিৎসক আছেন ৩৭ জন। তাদের মধ্যে দুজন ডেপুটেশনে অন্য হাসপাতালে আছেন। এ ছাড়া অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ১১ জন। এ নিয়ে মোট ৪৮ জন জনবল আছে স্থায়ী। এর বাইরে ৬ নার্স ও ৫ জন মিডওয়াইফারি ধার করে এনে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। এ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, রাজধানীর মধ্যে মা ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য তিনটি বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে। এর মধ্যে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান একটি। এখানে বিশেষভাবে মা ও শিশুর ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা ডেলিভারি কার্যক্রম চালু আছে। মিরপুর গাবতলী, আগারগাঁও অঞ্চলের মা ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য নিরাপদ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে প্রসবকালীন জটিলতায় মা ও শিশু মৃতু্যও হার খুবই কম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১০ তলা ভবনে প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ ছাড়া আলাদা তিনটি ভবনে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকার জন্য আবাসিক ব্যবস্থা রয়েেেছ। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে দেখা গেল আবাসিক ভবন তিনটির একটিতে কিছুসংখ্যক ফ্ল্যাটে কর্মকর্তারা থাকছেন। বাকি সবই এখনও ফাঁকা। একটিতে আনসার সমস্যরা থাকছেন। হাসপাতাল ভবনের প্রতি তলায় ১৮-২০টা কক্ষ আছে। এর বেশিরভাগ তালা বন্ধ। ওয়ার্ডগুলোও ফাঁকা দেখা গেছে। হাসপাতালের কথা হয় ৮তলার প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'এখানে ১০ টাকা টিকিটে ভর্তি হয়েছি। ৮ বার আন্ট্রাসনোগ্রাম করছে। তারপর বৃহস্পতিবার সিজার করছে। এখন ভালো আছি। অনেক ওষুধ হাসপাতাল থেকে দিয়েছে অনেক বাহির থেকে কিনতে হয়েছে।' একই ওয়ার্ডেও শাহিদুর রহমানের স্ত্রীর সিজার হয়েছে। তিনি জানান, ৭ দিন পরে ছুটি দেবে। এখন পর্যন্ত ৮ হাজার টাকা খরচ গেছে। সিজারের রোগী সবুজা আক্তার বলেন, বাচ্চা পেটে আসার সঙ্গে হাসপাতালে আমি। আমার একটা কার্ড আছে। এই কার্ড সিজারের আগে হাসপাতালে ভর্তির সময় দেখাইছি। আমার টাকা এখনো লাগেনি। কিছু ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হয়েছে। জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর রোববার মিরপুরের লালকুঠিতে অবস্থিত মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে (এমসিএইচটিআই) এই হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালে এ হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। সেই থেকে পরিবার পরিকল্পনা, গর্ভকালীন ও প্রসূতি সেবা, শিশুসেবা ও বয়ঃসন্ধিকালীন সেবা প্রদান করা হয়। এই হাসপাতালে মোট ১৪টি ইউনিট রয়েছে। বাচ্চাদের জন্য ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটও রয়েছে। সম্পূর্ণ অটোমেশনে স্বল্পমূল্যে রোগীদের সেবা প্রদান করা হয়। কার্ডের সাহায্যে অটোমেশনের মাধ্যমে এখানে রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। পরিচালক ডা. রতন কুমার আগারওয়ালা জানান, আমাদের এ হাসপাতাল সম্পূর্ণ অটোমেশন করা আছে। এটি দেশের মধ্যে প্রথম ডিজিটাল হাসপাতাল। একজন রোগী একবার এলে তার তথ্য আমরা রেকর্ড করে রাখি। প্রেসক্রিপশন, পরীক্ষা, ফ্রি ওষুধ সবই হয় ডিজিটাল প্রক্রিয়ায়। প্রত্যেকের চিপ সংবলিত আলাদা কার্ড ও নম্বর অনুযায়ী সব তথ্য জমা থাকছে মূল সার্ভারে। আমারদের অভিজ্ঞতা নিয়ে সরকারি অন্য হাসপাতালগুলো ডিজিটাল করার চেষ্টা চলছে। জনবল পেলে সম্পূর্ণ হাসপাতালটি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মডেল হতে পারে। এ হাসপাতালের রেডিওগ্রাফার রিপন হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, এখানে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০টা এক্স-রে হয় এবং ৩০ থেকে ৪০টা আন্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। এমআরআই ও সিটিস্ক্যান মেশিন নাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১০ তলা ভবনের বেইজমেন্ট কার পার্কিং, ফায়ার পাম্প ঘর, লাশ ঘর। ১ তলা কার পার্কিং, ওয়াসিং পস্ন্যান্ট, সেন্ট্রাল অক্সিজেন কক্ষ, জেনারেটর কক্ষ, বিদু্যৎ সাব স্টেশন, অ্যাম্বুলেন্স কক্ষ। ২ তলা তথ্য কেন্দ্র, প্রজনন স্বাস্থ্য বিভাগ, জরুরি বিভাগ, টিকিট কাউন্টার, পুষ্টি শিক্ষা কর্নার, কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কর্নার, অপারেশন থিয়েটার। ৩ তলায় প্রসূতি ও গাইনি বহির্বিভাগ, শিশু বহির্বিভাগ, ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি, রক্ত সঞ্চালন বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার (সেপটিক), অপারেশন থিয়েটার (টিউবেকটমি, এনএসভি)। ৪ তলায় অপারেশন থিয়েটার কমপেস্নক্স (মেইন), ডেলিভারি কক্ষ, এক্সরে কক্ষ, আল্ট্রাসনোগ্রম কক্ষ, কনসালটেন্ট রুম, প্রসব পরবর্তী সেবা কক্ষ, বন্ধ্যাত্ব বিভাগ। তাছাড়া ৫ তলায় পরিচালকের কক্ষ, উপ-পরিচালকের কক্ষ, সহকারী পরিচালকের কক্ষ, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, পুষ্টিবিদ, সেবা তত্ত্বাবধায়ক, উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ন, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ও আইটি কক্ষ, হেলথ এডুকেটর, নামাজ ঘর, সাভার রুম, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি, ক্যানটিন, স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের সেবা কক্ষ। ৬ তলা আন্তঃবিভাগ, কনফারেন্স কক্ষ, সহকারী পরিচালকের কক্ষ, প্রভাষক, প্রশিক্ষণ কক্ষ, সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর, স্টোর রুম, কিচেন। এ ছাড়া ৭ তলায় আন্তঃবিভাগ, নবজাতকের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র (স্ক্যানু), শিশু বিভাগ, কেবিন, কনসালট্যান্ট রুম, ডিউটি ডক্টরস রুম, চিল্ড্রেন পেস্ন গ্রাউন্ড। ৮, ৯ ও ১০ তলায় আন্তঃবিভাগে প্রসূতি বিভাগ, গাইনি বিভাগ, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, কেবিন, কনসালট্যান্ট রুম, ডিউটি ডক্টরস রুম।