নদী বাঁচাতে মহাপরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত

১০ বছরমেয়াদি এই মাস্টার পস্ন্যানকে 'ক্র্যাশ প্রোগ্রাম', 'স্বল্পমেয়াদি', 'মধ্যমেয়াদি' এবং 'দীর্ঘমেয়াদি' পরিকল্পনায় ভাগ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চলছে

প্রকাশ | ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট ঢাকার চারপাশের নদীগুলো ছাড়াও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী দখল ও দূষণমুক্ত করে নাব্য ফেরাতে ১০ বছরমেয়াদি একটি মহাপরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। সচিবালয়ে বুধবার এ সংক্রান্ত কমিটির সভায় মহাপরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করা হয় বলে স্থানীয় সরকার পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন। সভা শেষে নিজের দপ্তরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে গ্রামগঞ্জের সকল মানুষের কাছে উন্নয়নের সব সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। তেমনিভাবে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করতে হবে, নাব্য ফিরিয়ে আনতে হবে। নদীগুলোকে দখল-দূষণমুক্ত করে নাব্য ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত এই টাস্কফোর্স কমিটিতে পদাধিকার বলে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তিনি বলেন, কমিটি এরই মধ্যে একটি খসড়া মাস্টার পস্ন্যান করেছে, সেই মাস্টার পস্ন্যানের ওপর আলোচনা করে আজ নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছি। একটি ওয়ার্কিং গ্রম্নপ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। মন্ত্রী জানান, তারা অনুমোদিত এই খসড়া এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবেন। এ বিষয়ে উনার অনেক আন্তরিকতা, এটার বিষয়ে তিনি অনেক গুরুত্ব দেন, সেই হিসেবে নিজস্ব অনেক তথ্য জানা আছে। যদি কোথাও ইনপুট দেয়া দরকার মনে করেন, সংযোজন করা দরকার মনে করেন, সেটা করবেন। মহাপরিকল্পনায় কী আছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এই মাস্টার পস্ন্যানকে 'ক্র্যাশ প্রোগ্রাম', 'স্বল্পমেয়াদি', 'মধ্যমেয়াদি' এবং 'দীর্ঘমেয়াদি' পরিকল্পনায় ভাগ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০ বছর। প্রাথমিকভাবে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চলছে। আপনারা দেখছেন নদী দখলমুক্ত করা হচ্ছে, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এরপর ওয়াসার নেতৃত্বে স্যানিটেশনের কাজ শুরু হচ্ছে। দূষিত পানি যেন নদীতে না যায় সেজন্য ঢাকার সু্যয়ারেজ লাইনও ঠিক করার কথা রয়েছে এই মহাপরিকল্পনায়। তাজুল ইসলাম বলেন, বর্জ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। বর্জ্য যাতে নদীতে এখানে-সেখানে ডাম্প করা না হয় সেজন্য বর্জ্য থেকে বিদু্যৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে কাজ করছি। নাব্য ফিরিয়ে আনতে ১০ বছরের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, নদীতে ড্রেজিং করতে হবে। পলি পড়ে নদীর বেডগুলো উঁচু হয়ে গেছে, সেগুলোকে আগের জায়গায় নিতে হবে। পানি দূষিত হয়ে গেছে, পানি ট্রিট করতে হবে। পানিতে আর যাতে দূষিত পদার্থ না যায় সেজন্য সোর্সগুলো বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি গৃহস্থালি ও শিল্প বর্জ্য যাতে আর নদীতে না যায়, সেই ব্যবস্থা নেয়ার কথাও পরিকল্পনায় রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বর্জ্য সংগ্রহ করে আমরা ডিসপোজাল করে দেব। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কত টাকা লাগবে তা ওয়ার্কিং গ্রম্নপ নির্ধারণ করবে বলে জানান তাজুল। তিনি বলেন, ওয়ার্কিং গ্রম্নপ কাজগুলো ভাগ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবে। ইতোমধ্যে সেই কাজ শুরু হয়ে গেছে। ঢাকার চারপাশ ঘিরে থাকা চার নদীসহ দেশের সকল নদ-নদী ও জলাশয় রক্ষায় বিভিন্ন সময়ে আদালতের রায় এলেও দখল ও দূষণ বন্ধ করা যায়নি। এই প্রেক্ষাপটে গত মার্চে এক রিট মামলার রায়ে ঢাকার তুরাগ নদকে 'জীবন্ত সত্তা' ঘোষণা করে দেশের সকল নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়কে রক্ষার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে 'আইনগত অভিভাবক' ঘোষণা করে হাইকোর্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে 'মাইলফলক' ওই রায়ে নদী দখলকারীদের নির্বাচন করার ও ঋণ পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। নদী রক্ষা কমিশন যাতে নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে, সেজন্য আইন সংশোধন করে 'কঠিন শাস্তির' ব্যবস্থা করতে বলা হয় সরকারকে। পাশাপাশি জলাশয় দখলকারী ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের তালিকা প্রকাশ, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ের ডিজিটাল ডেটাবেইজ তৈরি এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানায় নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে বলা হয় হাইকোর্টের রায়ে।