ইসলামী আন্দোলন

ট্রান্সজেন্ডারের নামে জাতিকে সমকামী করা হচ্ছে

প্রকাশ | ১১ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ট্রান্সজেন্ডারের নামে জাতিকে বলৎকার ও সমকামী করা হচ্ছে মন্তব্য করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির শায়খে চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, আবুল ফজল ফয়েজীর গোষ্ঠী কিছু আলেম শরীফ শরীফার গল্পকে বৈধতা দিয়েছে। লোভের কারণে শরীফ শরীফার গল্পের মধ্যে ওই আলেমরা কোনো ত্রম্নটি দেখেন না। আমাদের দাবি ছিল প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার। সে দাবি কর্ণপাত না করে ৫ হাজারের অধিক নাচ গান শেখানোর টিচার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত 'নতুন পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন : আমাদের করণীয়' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, আমরা ইসলামের কথা বললে সাম্প্রদায়িক হয়ে যাই। মুসলমানদের জন্য করা সলিমুলস্নাহর ইউনিভার্সিটিতে নামাজ, ইফতার করতে আপত্তি থাকলেও মঙ্গলশোভা যাত্রা করতে কোনো আপত্তি নেই। দূরদর্শী পস্নান নিয়ে আগ্রাসনের কালো থাবা এগিয়ে আসছে। যারা শরীফ শরীফার মধ্যে কোনো কিছু দেখেন না তারা আবুল ফজল ফয়েজীর গোষ্ঠী। ওরা ইসলাম ও দেশের দুশমন। এই সরকার তাদেরকে অর্থ দিয়ে লালন-পালন করছে। তিনি বলেন, শিক্ষা আলো। শিক্ষা থেকে যদি বঞ্চিত রাখা যায়, তবে জাতিকে ধ্বংস করা যায়। মাদরাসার বইতে সালামের পরিবর্তে প্রণাম দেওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। মাদরাসার পুস্তকে ছেলেমেয়েদের অবাধ চলাফেরা দেখানো হয়েছে। মা-বাবার দ্বীনি পরিবেশ থেকে দূরে রাখা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে কৃষিশিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে। গার্হস্থ্য শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন শিল্প সংস্কৃতির মধ্যে ঢোল তবলা দেওয়া হয়েছে। এটা শিল্পকলার কাজ, জাতীয় কারিকুলামে এটা হতে পারে না। মুসলিম সন্তানদের একত্রে নাচতে গাইতে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, মগজ বিকৃত কিছু বুদ্ধিজীবী শিক্ষা থেকে ইসলামকে দূরে রাখতে অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে সংকীর্ণতা দূর করে লোভকে পরিহার করে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তবে ভবিষ্যতে প্রজন্ম ঈমান-ইসলাম নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম সরকারের কাছে বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের দাবিগুলো হচ্ছে- বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম-২০২১ বাতিল করা এবং যুগোপযোগী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নে অভিজ্ঞ, দেশপ্রেমিক এবং দ্বীনদার শিক্ষাবিদদের সম্পৃক্ত করা; পাঠ্যপুস্তকের সব বিষয় থেকে বিতর্কিত ও ইসলামী আকিদাবিরোধী প্রবন্ধগুলো বাদ দেওয়া। স্কুল ও মাদরাসার সব পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সংস্কৃতি, অনৈসলামিক শব্দ এবং অশ্লীল চিত্রমুক্ত রাখা; মাদরাসা শিক্ষার কারিকুলাম শিক্ষানীতিমালা-২০১০ অনুযায়ী মাদরাসা সংশ্লিষ্ট আলেম, দ্বীনদার, ইসলামিক স্কলার শিক্ষকদের দ্বারা পরিমার্জন করা ও আলিয়া মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বতন্ত্র কারিকুলাম প্রণয়ন করা; শিক্ষকদের স্বতন্ত্র উচ্চতর বেতন কাঠামো এবং শিক্ষক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে হবে; প্রকৃতি বিরুদ্ধ ও দেশীয় সংস্কৃতিবিরোধী ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ পাঠ্যপুস্তক থেকে বাতিল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিল করা। সমাজে অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীর সুশিক্ষা নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা। এছাড়া ধর্মীয় শিক্ষার ভিত্তি স্ব-স্ব ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এবং পাঠ্যপুস্তকের নামকরণ নিজ ধর্মের নাম অনুসারে করা; নৈতিকতা সমৃদ্ধ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে সব ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা; শিক্ষার সব ব্যয়ভার রাষ্ট্র কর্তৃক বহন করা এবং ইবতেদায়ি মাদরাসাসহ সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা; পুরুষ ও মহিলা উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাপক বেকারত্ব এবং খাদ্য ঘাটতির সমাধান এবং অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে 'কৃষিশিক্ষা' ও 'গার্হস্থ্য বিজ্ঞান' শিক্ষা সব শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং শিক্ষা নিয়ে আপত্তি ও বিতর্কের ঝড় সমাধানের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ, গবেষক, বুদ্ধিজীবী ও দ্বীনদার ইসলামিক স্কলারদের নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করা। গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মো. নাছির উদ্দিন খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আ খ ম ইউনুস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম, প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ প্রমুখ।