আ'লীগের ২১তম কাউন্সিল

দল গোছানোই বড় চ্যালেঞ্জ

তৃণমূলের কোন্দল নিরসন, মেয়াদোত্তীর্ণ শাখাগুলোতে কমিটি গঠন ও স্বচ্ছ কাউন্সিলর তালিকা তৈরি, বিতর্কিতদের কমিটি থেকে বাদ দেয়ার শুদ্ধ অভিযান, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করে নতুন কমিটি দেয়া, এমপি-চেয়ারম্যানদের দূরত্ব কমিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করাসহ বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে দলটিকে

প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলগুলো নানা অভিযোগ করলেও কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর সড়ক দুর্ঘটনা, অগ্নিকান্ড ও নারী নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়লেও অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে সরকার পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। তবে এমন অবস্থায়ও সারাদেশে দলটির সাংগঠনিক অবস্থা বেশ নাজুক। তাই আগামী অক্টোবরে দলীয় কাউন্সিলের আগে তৃণমূল থেকে সংগঠন ঢেলে সাজানোর চিন্তা করছেন নীতিনির্ধারকরা। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, আগামী অক্টোবরে জাতীয় কাউন্সিল করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর আগে তৃণমূলের কোন্দল নিরসন, মেয়াদোত্তীর্ণ শাখাগুলোতে কমিটি গঠন ও স্বচ্ছ কাউন্সিলর তালিকা তৈরি, বিতর্কিতদের কমিটি থেকে বাদ দেয়ার শুদ্ধ অভিযান, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করে নতুন কমিটি দেয়া, এমপি-চেয়ারম্যানদের দূরত্ব কমিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করাসহ বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে দলটিকে। বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে তৃণমূলের কোন্দল চরমে। এ নিয়ে তৃণমূল সংগঠনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। তৈরি হয়েছে একাধিক গ্রম্নপ-উপগ্রম্নপ। এক গ্রম্নপ অপর গ্রম্নপের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অপহরণ এমনকি হত্যা মামলার মিথ্যা আসামি করছেন। হামলা, পাল্টাহামলা এবং মারামারির ঘটনাও ঘটছে। অনেকটাই কোণঠাসা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ব্যক্তি স্বার্থে দলে ভেড়াচ্ছেন কেউ কেউ। সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল হয়। এতে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে তিন বছরের জন্য নতুন কমিটি হয়। সেই কমিটিই টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আনে আওয়ামী লীগকে। বর্তমান কমিটি নির্বাচন ও সরকার পরিচালনায় গুরুত্ব দিতে গিয়ে সাংগঠনিক অবস্থায় বেশি নজর দিতে পারেনি। তার ওপর ব্যক্তি স্বার্থে নিজেদের মধ্যে কোন্দল উসকে দিয়েছেন অনেকেই। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থার পরিষ্কার চিত্র পেয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। সদ্য সমাপ্ত ৪১৮টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে নৌকার প্রার্থীরা বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। কিছু উপজেলায় একক প্রার্থী হওয়ায় ভোট লাগেনি। তবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে বেশকিছু উপজেলায় নৌকার প্রার্থী জিতে এলেও ১৩১টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যান হয়েছেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগের একেকজন একেক বলয় তৈরি করে নিয়েছেন। পরপর তিনবার ক্ষমতায় থেকেও দলের এমন অবস্থায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তৃণমূল পর্যায় থেকে দলকে ঢেলে সাজিয়ে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলার কথা জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার বিকালে দলের কার্য নির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের এক যৌথ সভায় শেখ হাসিনা বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কার্যকরী সংসদের সদস্যদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে দেশের আট বিভাগের জন্য আটটি কমিটি গঠন করেছি। যে কমিটির দায়িত্ব থাকবে, আমাদের সংগঠনগুলো একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে আবার নতুন করে ঢেলে সাজানো এবং গড়ে তোলা। কোথায় কমিটি আছে, না আছে সেগুলো দেখা এবং সাংগঠনিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আরও মজবুত করে গড়ে তোলা।' এ সময় দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, দলীয় সঙ্কট মোকাবেলা করে সারা দেশের সংগঠনকে শক্তিশালী করে জাতীয় সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করতে কেন্দ্র থেকে আটটি সাংগঠনিক টিম গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। দু-এক দিনের মধ্যে তারা মাঠে নামবেন বলেও জানা গেছে। আসন্ন কাউন্সিলে প্রস্তুতির পাশাপাশি এই ৮টি টিম বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতির কাজও করবে। এদিকে দলকে শক্তিশালী করতে সরকার ও সাংগঠনিক নেতৃত্বে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার চিন্তা করছে আওয়ামী লীগ। এমন পরিকল্পনার অংশ হিসাবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেক এমপি-মন্ত্রীদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নাও দেখা যেতে পারে। তবে শীর্ষ নেতারা বলছেন, এই পরিকল্পনা একটি বা দু'টি কাউন্সিলেই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে পর্যায়ক্রমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। এরই অংশ হিসেবে এবারের কাউন্সিলের আগেই তৃণমূল সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে চান তারা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান যায়যায়দিনকে বলেন, অনেক উপজেলা ও জেলায় এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। দ্রম্নত সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুলো সম্পন্ন করব। দুয়েকটি জেলা মহানগরের সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেগুলো দ্রম্নত করার চেষ্টা থাকবে। দলে প্রতিটি পর্যায়ে পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানান তিনি। দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ছিল, এতে সংগঠন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা হবেই। তবে আওয়ামী লীগ দেশের বৃহত্তম আদর্শভিত্তিক দল। আদর্শ থেকে তারা কখনো বিচু্যত হবে না। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হলেও আস্তে আস্তে আমরা আবার এক করে ফেলব। আর এই একতার জন্য আমাদের মূল শক্তি হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ।' উলেস্নখ্য, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৬ ধারায় বলা আছে, ৩ বছর অন্তর জেলা আওয়ামী লীগসমূহ ও বিভিন্ন মহানগর আওয়ামী লীগ দ্বারা নির্বাচিত নির্দিষ্টসংখ্যক কাউন্সিলরের সমন্বয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাউন্সিল গঠিত হবে। প্রত্যেক মহানগর ও জেলার প্রতি ২৫ হাজার জনে একজন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর অবস্থাও নাজুক। বেশির ভাগ সংগঠনই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রায় একই অবস্থা। যেসব শাখায় কমিটি দেয়া হয়েছে সেখানেও বছরের পর বছর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। বিশেষ করে ছাত্রলীগের সভাপতি সেক্রেটারির নাম ঘোষণার পর থেকেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ব্যাপারে তোড়জোড় চলছে। প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। তবে শিগগিরই ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।