স্বর্ণ বিজয়ী নমিতার সেরা হওয়ার গল্প

প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

লোহাগড়া (নড়াইল) সংবাদদাতা
নমিতা কর্মকার
জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে জ্যাভলিন থ্রোতে (বর্ষা নিক্ষেপ) পূর্বের সকল রেকর্ড ভেঙে এবার স্বর্ণপদক ছিনিয়ে নিয়েছেন নড়াইলের লোহাগড়ার নমিতা কর্মকার। নারী হকিস্টিকে এখন ইতিহাসের অংশ হলেন তিনি। লোহাগড়া পৌর শহরের কচুবাড়িয়ায় ছোট্ট ঝুপড়িঘরে দেশসেরা এই খেলোয়াড়ের বসবাস। বাবা মাখন কর্মকার দিনমজুর। মা চায়না কর্মকার অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। এই পরিবারের কিশোরী কন্যা নমিতা এখন দেশসেরা খেলোয়াড়। নমিতা ৩৪তম জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে জ্যাভলিন থ্রোতে ৩৬ দশমিক ৩৬ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে স্বর্ণ জিতেছেন। এটিই এ যাবৎকালের দূরত্বের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গত ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এই অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় চাকতি নিক্ষেপে ও শটপুটে হয়েছেন দ্বিতীয়। ২০১৪ সাল থেকে জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে খেলে আসছেন নমিতা। নতুন রেকর্ড গড়ে অ্যাথলেটিকসে এখন জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত মুখ জ্যাভলিনের স্বর্ণকন্যা নমিতা। এদিকে নারী হকিতে এই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় করে নমিতারা হয়েছেন ইতিহাসের অংশ। দুই ম্যাচে ঢাকা একাদশের করা ৫ গোলের মধ্যে দুটিই এসেছে নমিতার স্টিক থেকে। গত ৭ ও ৮ নভেম্বর ঢাকার মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে ভারতের কলকাতা ওয়ারিয়র্সের সঙ্গে এই খেলা হয়। কলকাতা ওয়ারিয়র্স হলেও খেলোয়াড়েরা ভারতের উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খন্ড থেকে এসেছিলেন। কেবল অ্যাথলেটিকসেই নয়, হকিস্টিক হাতেও তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। নমিতা গোল করেছেন এবং করিয়েছেনও। ঢাকা একাদশের সেরা পারফরমার হয়েছিলেন তিনি। দেশের নারী ক্রীড়াঙ্গন এবার নতুন করে চিনল নমিতাকে। নমিতা কর্মকার লোহাগড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। ষাট বছরের বাবা মাখন কর্মকার। নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে কর্মে অক্ষম। আগে ছিলেন কাঠুরে। এখন শক্ত পরিশ্রমের কাজ করতে পারেন না। তাই মাঝেমধ্যে পানের বরজে কাজ করেন। হাতে কাজ না থাকায় প্রায় সারা বছর পরিবারের সদস্যদের নির্ভর করতে হয় নমিতার মায়ের আয়ের ওপর। অবশ্য বছর দুই হলো, জ্যাভলিন খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনে (বিজেএমসি) যোগ দিয়েছেন নমিতা। বেতন পান সপ্তাহে ১৯০০ টাকা। এই টাকা সংসারে যোগ হয়। বর্তমানে নমিতাদের সংসারে পাঁচজন সদস্য। তার বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট এক বোন এবার প্রাথমিকে সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে এবং ছোট ভাই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক নমিতার। তার শুরুটা হয়েছিল ফুটবল দিয়ে। পরে অ্যাথলেটিকস হয়ে এখন হকিতে। তিনি জানান, সেই দলে খেলবেন নমিতা এবং ক্রিকেটের মতো হকিতেও বাংলাদেশকে নিয়ে যাবেন অনন্য উচ্চতায়। এ বিষয়ে নমিতার বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক দিলীপ চক্রবর্তী বলেন, 'হকিতে নিজের চেষ্টাতেই উঠে এসেছে নমিতা। তাকে লালন করা গেলে সে হয়ে উঠবে এ দেশের বড় সম্পদ।'