অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা চেয়ে রিট

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
যথাযথ তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। ব্রিটিশ দৈনিক 'দ্য টেলিগ্রাফ'সহ দেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন; যিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালেরও প্রসিকিউটর। রিট আবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি শরীর প্রতিরোধ গড়ে তুললে সে অবস্থাকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। এই প্রবণতার কারণে প্রতিবছর বিশ্বে সাত লাখ মানুষের মৃতু্য হয়। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াতে পারে এক কোটিতে। পশুখাদ্য, মাছ এবং কৃষিতে অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিতে; যা দেশে ব্যবহৃত মোট অ্যান্টিবায়োটিকের প্রায় অর্ধেক। ফলে খুব সহজেই কৃষি খাদ্যের মধ্য দিয়ে এই অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের শরীরে ঢুকছে। এতে একদিকে যেমন অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারাচ্ছে, তেমনি শরীরও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছে। অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে সামান্য জীবাণু সংক্রমণও এখন ব্যবহারকারীর জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পরিবেশবাদী সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের প্রকাশিত প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে রিটে বলা হয়েছে, কৃষিখাদ্যের মাধ্যমে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করায় রাজধানীর ৫৫.৭ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে। রিটে আরও বলা হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের কারণে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা যে নষ্ট করে বা হুমকি সৃষ্টি করে, সে বিষয়টি তুলে ধরতে জাতীয় ওষুধ নীতি ব্যর্থ হয়েছে। অপরদিকে অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার মানুষের মৃতু্যর ফাঁদ তৈরি করছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে, এই ফাঁদ থেকে মানুষকে রক্ষা করা। স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জন প্রশাসন সচিব এবং দেশের সব জেলা প্রশাসকদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে বৃহস্পতিবার রিট আবেদনটির শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী সুমন। গত ২২ এপ্রিল দ্য টেলিগ্রাফ 'সুপারবাগস লিঙ্কড টু এইট আউট অব টেন ডেথস ইন বাংলাদেশ আইসিইউ'স' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ৮০ শতাংশ মৃতু্যর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সুপারবাগ দায়ী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক সায়েদুর রহমানকে উদ্ধৃত করে টেলিগ্রাফের ওই প্রতিবেদনে বলেছে, গত বছর হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন ৯০০ রোগী। তাদের মধ্যে ৪০০ জনই মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ৮০ শতাংশের মৃতু্যর কারণ হিসেবে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত ইনফেকশনকে দায়ী করা হয়েছে। মৃত রোগীর বেশিরভাগ আসে সরকারি আইসিইউ থেকে। তবে সেখানে এসব রোগী যথাযথ নজরদারিতে ছিল না। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এই অবস্থা বেশি দেখা যায়। কারণ, এসব দেশে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পরামর্শ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় না। আবার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজ থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া এবং দোকান থেকে অবৈধভাবে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে রোগীরা ব্যবহার করে। আবার মানুষের ব্যবহৃত ওষুধ অধিক লাভের জন্য পশুর ওজন বাড়াতেও প্রয়োগ করা হয়। অধ্যাপক সায়েদুর বলেছেন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশে আরও কড়াকড়ি প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিক দোকানে কেনাবেচা করার সুযোগ থাকা উচিত নয়। এসব ওষুধ শুধু হাসপাতাল থেকে বিতরণ করা যাবে- এমন ব্যবস্থা করা উচিত।