প্রস্তুত ৫৫১ আশ্রয়কেন্দ্র

সিলেটে ফের বন্যার শঙ্কা

ছয় ঘণ্টার বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত, এক শিশুর মৃতু্য

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টানা ছয় ঘণ্টার বৃষ্টিতে ফের সিলেট নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহলস্নায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কুয়ারপাড়ে জলাবদ্ধতার পানিতে ভেসে গিয়ে আরাব (২) নামে এক শিশুর মৃতু্য হয়েছে। আরাব ওই এলাকার বাসিন্দা সাবের আহমদের ছেলে। এদিকে, আগাম বন্যার সতর্কতা দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি ও সিলেটে ৫৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও বেশি হতে পারে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের এমন পূর্বাভাসের পর ফের বন্যার শঙ্কায় ৫৫১ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, 'বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট অঞ্চলে ৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।' স্থানীয়রা জানান, নগরীতে সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলেও দুপুর ১২টা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়। এতে নগরীর মীরাবাজার, যতরপুর, আগপাড়া, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাট, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, দরগামহলস্না, পায়রা, জালালাবাদ, চৌহাট্টা, মিরবক্সটুলা, তালতলা, জামতলা, মনিপুরী রাজবাড়ি, মিরের ময়দান, কেওয়াপাড়া, বাগবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে নগরের মেজরটিলা ইসলামপুর এলাকায় ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট ও দোকানপাট তলিয়ে গেছে। সাধারণ লোকজনকে উরু পানি মাড়িয়েও চলাচল করতে হয়। অভিজাত হ পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ৬ এলাকা খ্যাত শাহজালাল উপশহরে ফের অসংখ্য বাসার নিচ তলায় পানি উঠেছে। বাসা-বাড়ির নিচে সেপটিক ট্যাংকে পানি উঠে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এর আগে গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এরপর রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ভারী বর্ষণ হয় সিলেটে। এই সময়ে ২২০ মিলিমিটার রেকর্ড বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় নগরের বিভিন্ন এলাকায়। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন বাসিন্দারা। নগরীর যতরপুরের বাসিন্দা আহমেদ হোসেন বলেন, 'বুধবার রাতে যখন বৃষ্টি শুরু হয়েছিল, তখনই চিন্তায় ছিলাম বাসায় পানি প্রবেশের বিষয়ে। তবে সকালের বৃষ্টিতে পাড়ার রাস্তাঘাট ও বাসা-বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছিল। কয়েকদিন পরপর বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকার কারণে জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। এই অবস্থা থাকলে এখন থেকে বাসা বিক্রি করে দিতে হবে। পানি জমে থাকার কারণে এমনিতেই এই এলাকায় ভাড়াটিয়া আসতে চান না। দ্রম্নত এই সমস্যার সমাধান করার দাবি জানাই।' উপশহরের ডি বস্নকের-বাসিন্দা ইকবাল কবির বলেন, 'বৃষ্টি হলেই বারবার আমাদের পাড়ায় পানি ওঠে। তাই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। দ্রম্নত সুরমা নদী, নগরীর ছড়া ও খালগুলো পরিকল্পিতভাবে খননের দাবি করছি।' এর আগে গত ২৯ মে আগাম বন্যার আগে দুদিন মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮০০ মিলিমিটার। এবার ২৪ ঘণ্টায় ভারী বর্ষণে ভারতের চেরাপুঞ্জি ও সিলেটে ৫৩৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) ওয়েব সাইট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সুরমা নদীর কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে বুধবার সন্ধ্যায় ১১.৬০ মিটার ও ৯.৫৮ মিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ১২.৫৬ মিটার ও ১০.৩০ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর লুবা নদীর লুবা ছড়া, সারি নদীর সারিঘাট ও ডাউকি নদীর জাফলং পয়েন্ট দিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় ১১.৯০, ১০.২০ ও ৯.২৯ মিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বৃহস্পতিবার দুপুরে ১২.৯২, ১১.৩৬ ও ১০.১১ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, 'সিলেটে যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, সেজন্য এই অবস্থা। তবে বৃষ্টি কমে গেলে পানি নেমে যাবে। আর নগরীর ড্রেনগুলো দিয়ে পানি নামতে একটু সময় লাগে। নগর যেন জলাবদ্ধ না হয়, সেজন্য আরও বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।' এবার উজানে ভারতের ঢল ও ভারী বর্ষণে সিলেটে নদ-নদীর পানি আবারও বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। দেখা দিতে পারে অকাল বন্যা। ফলে জেলা প্রশাসন আগে থেকেই সতর্কতা জারি করেছে। সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, 'সবকিছু নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। সার্বিক পর্যালোচনায় মনে হচ্ছে বন্যা হয়ে যেতে পারে। আগাম বন্যার শঙ্কায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সব দপ্তরকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছি। সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। সেই সঙ্গে ৫৫১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেগুলো ২৯ মে বন্যার সময় প্রস্তুত করা হয়েছিল।'