প্রত্যয় স্কিম বাতিল দাবি

সফলতা নিয়েই ক্লাসে ফিরতে চান শিক্ষকরা

সংকট সমাধানে শিগগিরই আলোচনার আশা করছেন আন্দোলনকারীরা

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে সপ্তম দিনের মতো সোমবার সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি। এ দিন দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেছেন, সফলতা নিয়েই তারা ক্লাসে ফিরতে চান। দাবি না মানলে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। এদিকে, সংকট সমাধানে সরকারের কোনো উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান হয়নি। আন্দোলনের প্রথম দিকে শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনার একটি কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এ ব্যাপারে সোমবার পর্যন্ত কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষক নেতারা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রী, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রীসহ অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। অচিরেই আমরা আলোচনা আশা করছি এবং তা হতে হবে।' এর আগে গত ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন ঢাবি শিক্ষকরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কারা আমাদের আন্দোলনে নামিয়েছে? আমরা মনে করি, তারা রাষ্ট্রের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা লোক, যারা ২০১৫ সালেও আমাদের বিরুদ্ধে লেগেছিল। সে বছর তারা আমাদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি, তাই এ বছরও তারা আমাদের পেছনে লেগেছে। তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই একটি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অন্যায্য।' তিনি বলেন, এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা বলেছিলাম, এই স্কিম বাতিল করুন না হলে আমরা কর্মবিরতি শুরু করব, কিন্তু তারা দাবি মানেননি। ফলে আমরা অর্ধদিবস কর্মবিরতি করেছি, পরে পূর্ণদিবস করেছি। এরপর আমরা এই সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছি। যেহেতু আমরা এই আন্দোলন শুরু করেছি, সফলতা আসার আগে আমরা ক্লাসে ফিরব না।' সম্প্রতি সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে নিয়ে তিনি বলেন, 'বৈঠকটি হয়নি। তবে আমার সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রীসহ অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। অচিরেই আমরা আলোচনা আশা করছি এবং তা হতে হবে।' ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন ধরে তিন দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি করে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের দাবি মানার কোনো অবস্থা দেখছি না। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত পিছু হটব না। বিজয় নিয়েই ক্লাসরুমে ফিরে যাব।' বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেছেন, 'আমরা বারবার যুক্তি প্রদর্শন করছি। সাত দিন থেকে কর্মবিরতি পালন করছি, তবু রাষ্ট্র থেকে একটি ফোন কল পর্যন্ত করা হয়নি। এটি শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা।' এদিকে, বরিশাল অফিস জানায়, দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতিও অব্যাহত রয়েছে। সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে এ কর্মবিরতি শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা, ক্লাস, একাডেমিক সব কার্যক্রম বন্ধ রেখে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানান, যতদিন পর্যন্ত তাদের দাবি আদায় না হবে, ততদিন পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়লেও দাবি পূরণ হলে তারা তা পুষিয়ে নেবেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিশ্বিবিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপংুংুংুতি ড. আবদুল বাতেন। পবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) সোমবার বেলা ১১টায় একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কৃষি অনুষদের সামনে অবস্থা কর্মসূচি পালন করেছে। অপরদিকে একই সময় কর্মকর্তা পরিষদ ও কর্মচারী ইউনিয়ন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থা কর্মসূচি পালন করেছে। এ সময় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের বিভিন্ন দাবির কথা তুলে ধরেন। দাবি আদায় না হাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ঘোষণা দেন। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। স্থবির হয়ে পড়েছে পবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা দ্রম্নত এই সমস্যার সমাধানের দাবি জানান। একই সঙ্গে শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ জানান, যাদের বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ হয়ে আছে, তাদের বিষয়টি বিবেচনা করার। কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান জুয়েল বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে দাপ্তরিক কাজ না করে তাহলে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। তাই আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলতে থাকবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই সবকিছু আদায় করা সম্ভব।' শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ বলেন, 'দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। এই যৌক্তিক আন্দোলনের মধ্যেমে দ্রম্নত আমাদের দাবি আদায় হবে, এ ব্যাপারে আশাবাদি এবং পরে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে দ্রম্নত ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।' সিলেট অফিস জানায়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সোমবার দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, তিন দফা দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। প্রত্যয় স্কিম বাতিলসহ শিক্ষকদের আরও দুটি দাবি হলো সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং তাদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, তিন দফা দাবিতে আন্দোলন চলছে, চলবে। তবে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে দাবি ও আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার অপেক্ষায় আছেন তারা। এদিকে প্রত্যয় পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতি ও কর্মচারী সমিতি রবিবার ও সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করেছে। তারা আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ভবনের সামনে ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। যবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, সোমবার শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে যবিপ্রবিতে কোনো ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এমনকি থিসিস, গবেষণাসহ ল্যাবের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতির ফলে সব ধরনের অফিস কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এদিন যবিপ্রবির স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের নিচতলায় শিক্ষকরা অবস্থান করে তাদের দাবির পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। একই দাবিতে বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল মধুসূদন দত্ত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের নিচে যবিপ্রবির কর্মকর্তারা পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করেন। দুপুর ১২টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের নিচ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল করে ও বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবনের নিচে সংক্ষিপ্ত অবস্থান ও আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ১৩ মার্চ জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন স্কিম-সংক্রান্ত 'বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন' প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে গত ২০ মে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মে বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে মানববন্ধন করেন শিক্ষকরা। এরপর ২৮ মে দুই ঘণ্টা এবং ২৫-২৭ জুন তিন দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরে ৩০ জুন পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করা হয় এবং ১ জুলাই থেকে থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়।