জুবায়ের হত্যার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

দাবা খেলার বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্বে সহপাঠীকে খুন

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকা কমার্স কলেজের ছাত্র জুবায়ের হাসান রাফিত হত্যায় জড়িত অভিযোগে তার সহপাঠী চৌধুরী রাজিন ইকবালকে (১৮) গ্রেপ্তার করেছের্ যাব। রোববার হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর এলাকা থেকের্ যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা,র্ যাব-৪ ওর্ যাব-৯ এর সহযোগিতায় রাজিনকে ( ১৮) গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজিন হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। মূলত একটি দাবা খেলার বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। র্ যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আব্দুর রহমান জানান, নিহত জুবায়ের ও গ্রেপ্তার রাজিন ঢাকা কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ক্লাসে দাবা খেলার বোর্ড ফেলে খেলত রাজিনসহ তার কিছু ঘনিষ্ঠ সহপাঠী। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটত। বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন জুবায়ের। তিনি ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিলেন। তাই জুবায়ের বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। চলতি বছরের জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কলেজের শিক্ষকরা সরাসরি ক্লাসে গিয়ে রাজিনের কাছে দাবার বোর্ড পায়। সেই বোর্ড জব্দ করে নিয়ে যায়। একই সঙ্গে বোর্ড বাজেয়াপ্ত করে। পড়াশোনার সময় নষ্ট করে দাবা খেলার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। র্ যাব কর্মকর্তা বলেন, এতে জুবায়েরের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হন রাজিন। দাবার বোর্ডটি ফেরত পেতে কলেজের উপদেষ্টা বরাবর একটি আবেদন করেন রাজিন। আবেদনে রাজিন নিজেকে কলেজের নিয়মিত ছাত্র বলে উলেস্নখ করেন। এতে আপত্তি করেন ক্লাস ক্যাপ্টেন জুবায়ের। কারণ রাজিন নিয়মিত ছাত্র নয়। এ নিয়ে রাজিনের সঙ্গে জুবায়েরের প্রথম কথা কাটাকাটি এরপর হাতাহাতি হয়। পরে কলেজের শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় বিষয়টির মীমাংসা হয়। জুবায়ের আগের মতোই রাজিনের সঙ্গে মিশতে থাকেন। বিষয়টিকে তিনি স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলেন। ঘটনা সম্পর্কে কলেজ কর্তৃপক্ষ দুই ছাত্রের অভিভাবককেও অবহিত করে। বাহ্যিকভাবে রাজিনের সঙ্গে জুবায়েরের মিলমিশ হলেও রাজিন মনে মনে ক্ষোভ পুষে রাখে। তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। র্ যাব কর্মকর্তা জানান, সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাজিন ৬ জুলাই শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জুবায়েরকে কমার্স কলেজের পার্শ্ববর্তী নিজেদের ভাড়া বাসায় কৌশলে ডেকে নেন। জুবায়ের সরল মনে বিকালে সেখানে যান। যাওয়ার পর পূর্বের বিষয়টি নিয়ে আবার বাকবিতন্ডা শুরু হয়। উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে রাজিন ধারালো বঁটি দিয়ে জুবায়েরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনাটি জানার পর রাজিনের পিতা দ্রম্নত ঘটনাস্থলে যান। তিনি তার ছেলে রাজিনকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। প্রসঙ্গত, গত ৭ জুন সন্ধ্যা ৭টার দিকে মিরপুর শাহ আলী থানাধীন জাতীয় চিড়িয়াখানা সড়কসংলগ্ন কমার্স কলেজের পাশে হাউজিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট কোয়ার্টারের একটি চারতলা ভবনের তিনতলা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় জুবায়ের হাসান রাফিতের (১৭) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের পিতা আবুল বাশার মিয়া বাদী হয়ে শাহ আলী থানায় নিহত জুবায়েরের সহপাঠী রাজিন ও তার পিতা আইনজীবী ইকবাল চৌধুরীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত করছেন শাহ আলী থানার উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। জুবায়েরের পিতা যায়যায়দিনকে বলেন, তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী। তিনি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে চাকরি করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা এলাকায় তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। নিহত জুবায়ের তার মামা নুরুজ্জামানের বাসায় থেকে পড়াশোনা করছিল। রাজিনের পিতাকে আসামি করার বিষয়ে জুবায়েরের বাবার দাবি, স্থানীয়দের বক্তব্য মোতাবেক তিনি রাজিনের বাবাকে আসামি করেছেন।