জাল নিবন্ধনে ধরা ৯ শিক্ষক ফঁাসছেন মাউসি কমর্কতার্রা

প্রকাশ | ২৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
জাল সাটিির্ফকেটে চাকরি ও এমপিওভুক্ত হয়ে মামলায় ফেঁসেছেন রাজধানীর চার স্কুল ও মাদ্রাসার ৯ শিক্ষক। এবারে দুনীির্ত দমন কমিশনের (দুদক) মামলার চাজির্শটভুক্ত হতে যাচ্ছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কমর্কতার্। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে জেলা শিক্ষা অফিসের কয়েক জনের। ফলে চাজির্শটে বাড়ছে আসামির সংখ?্যা। এখন চলছে তথ?্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ। এরই মধে?্য দুনীির্তবিরোধী সংস্থাটি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দ করা শুরু করেছে। দুদক সূত্র জানায়, শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সাটিির্ফকেট দাখিল করে এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি টাকা উত্তোলনের অপরাধে শিক্ষকরা আসামি হলেও কেন জেলা শিক্ষা অফিস কিংবা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনো কমর্কতার্ আসামি হয়নি এ নিয়ে বিতকর্ রয়েছে। কারণ, শিক্ষক নিবন্ধনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে তাদের নিজস্ব সাভাের্র সাচর্ দিলেই সাটিির্ফকেট সঠিক আছে কিনা যাচাই করা সম্ভব ছিল। এত সহজ পদ্ধতিতে যাচাই করার সুযোগ থাকা সত্তে¡ও কীভাবে জাল সাটিির্ফকেট দিয়ে এতদিন সরকারি বেতন ও চাকরি নিয়ে সুবিধা পেয়ে আসছিল সেটাই বড় প্রশ্ন বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কমর্কতার্রা। এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগটি দুদকের ঢাকা বিভাগীয় অফিস থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ওই অফিস ভালো বলতে পারবে। তাছাড়া অনুসন্ধান শেষ হলে সত?্য বেরিয়ে আসবে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊধ্বর্তন কমর্কতার্ এ বিষয়ে বলেন, ‘শিক্ষকরা জাল সাটিির্ফকেট দিয়ে চাকরি নেয়া ও এমপিওভুক্ত হয়ে যেমন অপরাধ করেছেন ঠিক তেমনি জেলা শিক্ষা অফিস ও শিক্ষা অধিদপ্তর দায় এড়াতে পারে না। কারণ, যাচাই-বাছাই করা তাদের দায়িত্ব। যদিও অনুসন্ধান পযাের্য় অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে যেখানে নিয়ন্ত্রণ অফিসের কোনো কমর্কতার্ বা কমর্চারীকে আসামি করা হয়নি। আশা করছি তদন্ত পযাের্য় অবশ্যই এ বিষয়টি আসবে। এখানে কারো না কারো সংশ্লিষ্টতা অবশ্যই রয়েছে।’ দুদক সূত্রে জানা যায়, জাল নিবন্ধনের মাধ?্যমে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত হয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন- এমন অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করার পর দুদক উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়। আর ওই টিম থেকে ঢাকা জেলার অধীন অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান করে চলতি বছরের ৭ ফেব্রæয়ারি মামলা দায়ের করা হয়। রাজধানীর নিউমাকের্ট থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নুর-ই-আলম বাদী হয়ে রাজধানীর চার স্কুলের ৯ শিক্ষককে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন- খিলগাঁও মডেল হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ইয়াছমিন বেগম, আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহমিনা পারভীন (জীববিজ্ঞান ও বিজ্ঞান), আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ব্যবসায় শিক্ষা) সায়মা খান, উত্তরখান চানপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার জুনিয়র মৌলভী জাকিয়া সুলতানা, ওই মাদ্রাসার মোজাব্বিদ মাহির ক্কারী কবির হোসেন, ইবতেদায়ি প্রধান মনোয়ারা বেগম, জুনিয়র শিক্ষক পারুল বেগম, ঢাকা সবুজবাগের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ইলোরা আলম এবং ঢাকা উত্তরখানের উজামপুর দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শাহনাজ পারভীন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদ তৈরিপূবর্ক তা ব্যবহার করে উল্লিখিত পদে চাকরি গ্রহণ করার অপরাধে দÐবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিদের মধ্যে খিলগাঁও মডেল হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ইয়াছমিন বেগম ২০১১ সালের ২৫ মাচর্ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপত্র পান। পরবতীর্ সময়ে ২০১৩ সালে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেন। সে অনুযায়ী এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি অংশ ও বিদ্যালয়ের অংশের বেতন গ্রহণ করেছেন। ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদশর্ন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদশের্ন নিবন্ধন সঠিক নয় এবং ২০১৩ সালের ১ ফেব্রæয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পযর্ন্ত নেয়া ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৯৫ টাকা ফেরতযোগ্য- এমন মন্তব?্য করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। অন্যদিকে আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহমিনা পারভীন (জীববিজ্ঞান ও বিজ্ঞান) ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি নিবন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট সনদপত্র দাখিলের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে নিয়োগ পান। একইভাবে আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ব্যবসায় শিক্ষা) সায়মা খান একইভাবে নিয়োগ পান। ২০১৫ সালের ৩০ মাচর্ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদশের্নও তাদের নিবন্ধন যাচাইকালে তা সঠিক নয় ও নিয়োগ বিধিসম্মত হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। উত্তরখান চানপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার জুনিয়র মৌলভী জাকিয়া সুলতানা, ওই মাদ্রাসার মোজাব্বিদ মাহির ক্কারী কবির হোসেন, ইবতেদায়ি প্রধান মনোয়ারা বেগম ও জুনিয়র শিক্ষক পারুল বেগম ২০০৩ ও ২০০৪ সালের মাচর্ মাসের বিভিন্ন সময় সকল সনদপত্র ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০১১ সালে তারা নিবন্ধন সাটিির্ফকেটের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হন। ২০১৫ সালের ২৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদশর্ন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদশের্ন তাদের নিবন্ধন সনদ জাল বলে প্রমাণিত হয়। একইভাবে ২০১৫ সালের মাচর্ ও মে মাসে ওই টিমের পরিদশের্ন এমপিওভুক্ত ঢাকা সবুজবাগের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ইলোরা আলম এবং ঢাকা উত্তরখানের উজামপুর দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শাহনাজ পারভীনের নিবন্ধন সনদ জাল বলে প্রমাণিত হয়। এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় কাযার্লয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব?্য করতে অস্বীকার করেন।