অন্যতম ফ্যাক্টর নারী ভোট

নারীবান্ধব নগরীর প্রত্যাশা বরিশালের নারী নেত্রীদের

‘ভোটের পরিসংখ্যানে নগরীতে জয়-পরাজয়ের অন্যতম ফ্যাক্টর নারী ভোট, অথচ মেয়ররা বরিশালকে নারীবান্ধব করে গড়ে তোলার কোনো সদিচ্ছা প্রমাণ করতে পারেননি

প্রকাশ | ২৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

বরিশাল অফিস
বরিশাল নগরীর প্রায় অধের্ক ভোটার নারী হলেও, নগরীতে চলাফেরাসহ অপরাপর সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা বেশ পিছিয়ে রয়েছে। তারা নানাভাবে বঞ্চিত ও উপেক্ষিত। তাই বরিশাল নগরীকে নারীবান্ধব নগরী বলে মনে করেন না স্থানীয় নারী নেত্রীরা। তাদের দাবি, আসন্ন নিবার্চনে জয়ী মেয়র বরিশালকে নারীবান্ধব নগরী হিসেবে গতে তুলবেন। নারী নেত্রীরা বলেন, বাস্তবসম্মত কোনো কাযর্ক্রম না থাকলেও বরিশালকে শিশুবান্ধব নগরী ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ নারীবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে এখনো পযর্ন্ত কোনো মেয়র উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। আমাদের দাবি, নগরীতে কমর্জীবী মহিলা হোস্টেল নিমার্ণ, নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য বিলুপ্ত, মাদাসর্ কনার্র প্রতিষ্ঠাসহ নানা উদ্যোগের মধ্যদিয়ে নগরীকে নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হোক। জানা যায়, বরিশাল সিটি নিবার্চনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১১৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। অথার্ৎ পুরুষ ভোটার মাত্র ৭০৬ জন বেশি। পুরুষ ভোটারদের সিংহভাগই ভোটের সময়ে কমর্স্থলে থাকায় বরিশালে ভোট দিতে পারেন না। নারীদের ভাগ্য পরিবতের্ন দীঘির্দন থেকে কাজ করা উন্নয়ন কমীর্ শাকিলা ইসলাম বলেন, ‘ভোটের পরিসংখ্যানে বরিশাল নগরীতে জয়-পরাজয়ের অন্যতম ফ্যাক্টর নারী ভোট। অথচ বিগত তিনটি সিটি নিবার্চনে নিবাির্চত মেয়ররা বরিশালকে নারীবান্ধব করে গড়ে তোলার কোনো সদিচ্ছা প্রমাণ করতে পারেননি। এমনকি বিসিসির বাষির্ক বাজেটেও এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়নি। ফলে এখনো নগরীতে চলাফেরায়, কমর্স্থলে এবং সমান অধিকার প্রাপ্তিতে নারীদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’ মহিলা পরিষদ সম্পাদিকা নারী নেত্রী প্রতিমা সরকার বলেন, ‘বরিশাল নগরীতে নারী ভোটার অধের্ক হলেও তাদেরই অধিকার ও সুবিধাবঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। শ্রমজীবী নারীরা মজুরি বৈষম্যের শিকার। নগর কতৃর্পক্ষের উচিত শ্রমজীবী নারীদের অধিকার রক্ষায় সুনিদির্ষ্ট নীতিমালা করা। কমর্জীবী মায়েরা তাদের শিশু সন্তানদের কোথায় রেখে কমর্স্থলে যাবেন তার কোনো সুব্যবস্থা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের জন্য নগর কতৃর্পক্ষের এ অধিকারগুলো নিশ্চিত করার দায়িত্ব হলেও কেউ সে দায়িত্ব পালন করেননি।’ সরকারি বিএম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, ‘নগরীতে স্বাচ্ছন্দ্যে নারীদের চলাচলে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগামী ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। অথচ নারীদের ভোট নিয়ে নিবাির্চত মেয়র ও কাউন্সিলরা এ সব বিষয়ে কখনো মাথা ঘামান না। এখনো একজন নারী সহজে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে পারেন না।’ বিএনপির প্রাথীর্ মজিবর রহমান সরওয়ারের নিবার্চন কমিটির যুগ্ম-আহŸায়ক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, ‘বিএনপি সব ক্ষেত্রে নারীদের সবোর্চ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আসন্ন নিবার্চনে তাদের প্রাথীর্ বিজয়ী হলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বরিশালকে নারীবান্ধব নগরী গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ শিরিনের এ বক্তব্যকে মিথ্যাচার আখ্যা দিয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গৌরনদী উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী বলেন, ‘বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের নেতারা বরাবরই নারীদের সমান সুযোগ দেয়ার ব্যাপারে বিরোধিতা করে আসছেন। তাদের সমথির্ত তেঁতুল মৌলভীরা নানা আপত্তিকর বয়ান দিয়ে নারীদের চুড়ি পরিয়ে ঘরের দাসী করে রাখতে চেয়েছিলেন।’ মেরী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। সব ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগই নারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ জন্যই নারীরা আজ সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাচ্ছেন। আসন্ন সিটি নিবার্চনে নৌকা মাকার্র প্রাথীর্ সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে নিবাির্চত করা হলে বিশেষজ্ঞদের পরামশর্ নিয়ে বরিশালকে নারীবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’ একমাত্র মহিলা মেয়র প্রাথীর্ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের ডা. মনীষা চক্রবতীর্ বলেন, ‘শুধু নারী-পুরুষ নয়, তারা সব মানুষের ন্যায্য ও সমাধিকারের জন্য সংগ্রাম করছেন। নিজে নারী হওয়ার কারণে নারীদের সমস্যা, সুবিধা-অসুবিধা বুঝতে পারা আমার পক্ষে আরও সহজ হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’